এপ্রিল ৩০, ২০২৩ ১৮:০৮ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআন পবিত্র ও আদর্শ নারীদের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে। মহানবী (সা) যে চার জন আদর্শ বা শ্রেষ্ঠ নারীর কথা উল্লেখ করেছেন তাঁরাও পবিত্র কুরআনের উল্লেখিত আদর্শ তথা শ্রেষ্ঠ নারী। তাঁদের মধ্যে হযরত ফাতিমা হলেন সর্বকালের সেরা নারী।

পবিত্র ও আদর্শ নারীদের দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা কুরআনের অনেক আয়াতে যাদের নাম দেখতে পাই তাদের মধ্যে রয়েছেন হযরত আদম (আ)'র স্ত্রী বিবি হাওয়া, ইমরানের কন্যা বিবি মারিয়াম, হযরত মুসার মাতা (ইয়োকাবাদ), ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আসিয়া, সাবার রানী বিলকিস। আর সর্বকালের সেরা মহামানবী মহানবীর (সা) কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরাকেও (সা) স্মরণ করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে অত্যন্ত সম্মান ও প্রশংসা সহকারে।

হযরত মুসার মায়ের সুদৃঢ় ঈমান ও মহান আল্লাহর প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং এর পাশাপাশি ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আসিয়ার পবিত্রতাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পবিত্র কুরআনে। বিবি আসিয়া ফেরাউনের সঙ্গে একই প্রাসাদে বসবাস করতেন যেখানে পরিবেশ ছিল পুরোপুরি খোদাদ্রোহিতা ও কুফুরিতে পরিপূর্ণ। ফেরাউন স্বপ্ন দেখেছিল এক নবজাতক তাঁর ক্ষমতা ও রাজত্বের জন্য হুমকি হবে। ফলে ক্ষমতা ও রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে ফেরাউন দেশর সব নবজাতককে হত্যার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত মুসা (আ) এই হত্যাযজ্ঞ থেকে নিরাপদ থাকেন। এর কারণ মহান আল্লাহ হযরত মুসার মাকে প্রত্যাদেশ দিয়েছিলেন যে তিনি যেন নবজাতক মুসাকে নীল নদে ভাসিয়ে দেন। এ প্রত্যাদেশ দেয়া হয় অন্তরে অনেকটা অনুপ্রেরণার মতো।

কিন্তু একজন মা হিসেবে মুসা নবীর মায়ের জন্য ফেরাউনের সেনাদের হাত থেকে সন্তানের প্রাণ বাঁচানোর বিষয়টি ছিল গভীর উদ্বেগের বিষয়। সুরা কাসাস-এর সাত নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি মুসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাক। অতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশংকা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব।

 -এ আয়াত থেকে বোঝা যায় মহান আল্লাহ তাঁর দাসদের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়ালু। তিনি মুসার মায়ের অন্তরের খবর রাখেন। তাই তার হৃদয়কে প্রশান্ত রাখতে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে নবজাতক পুত্রের জীবনের নিরাপত্তার জন্যই তিনি যেন তাকে পানিতে ভাসিয়ে দেন এবং এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় না ভোগেন। মহান আল্লাহ নবজাতক মুসাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ওয়াদাও দেন। 

মুসা নবীর মায়ের ঈমান সুদৃঢ় ছিল বলেই তিনি অন্তরে বেজে ওঠা খোদায়ি প্রেরণার প্রতি আস্থাশীল হতে পেরেছিলেন। একজন মা কখনও তার সন্তানকে নদিতে ভাসিয়ে দিতে চান না। কিন্তু মুসা নবীর মা আল্লাহর অনুগত বা খোদাপ্রেমিক ছিলেন বলেই আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলেন এবং আল্লাহর দেয়া ওয়াদার প্রতি পরিপূর্ণ আস্থাশীল ছিলেন। অর্থাৎ তিনি জানতেন যে আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত। তাই সন্তানকে বাঁচানোর বিষয়ে খোদায়ি নির্দেশ বাস্তবায়নে মুসা নবীর মায়ের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। মহান আল্লাহ মুসাকে তাঁর মায়ের কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অক্ষত ও পরিপূর্ণ সুস্থভাবে এবং তিনি মুসাকে যৌবনেই নবুওত দান করার লক্ষ্যে জীবিত রেখেছেন। এভাবে মুসা তার পবিত্র ও স্নেহময়ী মায়ের কোলেই বড় হতে থাকেন। অর্থাৎ আল্লাহ এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেন যে মুসার মা-ই নিজ শিশু পুত্রকে দুধ পান করানোর দায়িত্ব পান। মুসার বোন কুলসুম ফেরাউনের লোকদের কাছে নিজের মাকে একজন ধাত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার পরামর্শেই মুসা নবীর মাকে ধাত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কুলসুম যে মুসারই বোন সে পরিচয়ও তিনি গোপন রেখেছিলেন।

Image Caption

 

 বিবি আসিয়ার পবিত্র জীবনও পবিত্র কুরআনে দেদীপ্যমান। ফেরাউনের স্ত্রী হয়েও তিনি নিজের ঈমান রক্ষা করতে পেরেছিলেন। লুত ও নুহ নবীর অবিশ্বস্ত এবং অবিশ্বাসী স্ত্রীর বিপরীতে একজন খোদাভীরু নারী হিসেবে আসিয়াকে তুলে ধরেছে পবিত্র কুরআন। চরম নির্যাতন তথা মৃত্যুদণ্ডের মুখেও তিনি ঈমান পরিত্যাগ করেননি বরং ফেরাউনের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে মহান আল্লাহর কাছে এই দোয়া করেছেন যে (সুরা তাহরিম-১১) : হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে কাফির বা খোদাদ্রোহী ফেরাউন, ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে ফেরাউনের যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।– এ আয়াতের শুরুতে বলা হয়েছে: আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের জন্যে ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ বিবি আসিয়া ফেরাউনের জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ ও রাণী হওয়ার মত পার্থিব সম্মানকে উপেক্ষা করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি মুমিন নারীর জন্য অন্যতম অনুকরণীয় আদর্শ। বিবি আসিয়ার কাছে আল্লাহর নৈকট্য ও রহমতই ছিল একান্ত কাম্য।

 ইমাম বাক্বির (আ) বলেছেন, ফেরাউন ও তার স্ত্রী আসিয়া বসন্তকালে ঘুরতে বের হলে ফেরাউন প্রাসাদের কাছে নীল নদীতে ভাসমান বক্সে মুসা নবীকে দেখতে পেয়ে বলে: এই শিশুকে কেন হত্যা করা হয়নি?! ফেরাউন এই শিশুকে হত্যা করতে চাইলে আসিয়া বাধা দিয়ে বলেন, ও আমার ও তোমার চোখের আলো। এভাবে আসিয়ার কারণে মুসার জীবন রক্ষা পায়। ফেরাউন বনি ইসরাইলের নারী ইউকাবাদ তথা মুসার মাকে ধাত্রী হিসেবে নিয়োগের বিরোধিতাও করেছিল। কিন্তু আসিয়ার চাপের মুখে তাকেই ধাত্রী করা হয় যাতে তিনি মুসাকে দুধ পান করাতে পারেন। মহানবী (সা) আসিয়াকে বিশ্বের সেরা চার নারী তথা আদর্শ চার নারীর একজন হিসেবে উল্লেখ করেছেন মারিয়াম, খাদিজা ও ফাতিমার পাশাপাশি। বলা হয় হযরত আলীর জন্মের সময় তাঁর মা ফাতিমা বিনতে আসাদকে সেবা দিতে উপস্থিত হন এবং নবজাতক আলীকে তিনিই কাপড়ে জড়িয়ে নেন। হযরত ফাতিমা জাহরার জন্মের সময়ও তিনি, বিবি সারা, হযরত মারিয়াম ও মুসা নবীর বোন খাদিজাকে সেবা করতে আসেন অলৌকিকভাবে।

 বিবি আসিয়া মুসা নবীর প্রতি ঈমান আনার আগেও ছিলেন সৎকর্মশীল। মুসা নবীর লাঠির মু'জিজা ও যাদুকরদের ওপর তার বিজয়ের ঘটনা দেখে তিনি মনে মনে তার প্রতি ঈমান আনেন। কিন্তু ফেরাউন রাজকীয় অর্ধ-সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক হেজকিল ও তার কন্যাকে মুসার প্রতি ঈমান আনার কারণে হত্যা করলে আসিয়া এর প্রতিবাদ জানান। এভাবে ফেরাউনের কাছে আসিয়ার গোপন ঈমানের বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে। আসিয়া তার ঈমান প্রকাশ করলে ফেরাউন ভাবে যে আসিয়া উন্মাদ হয়ে গেছে। কিন্তু আসিয়া বলেন যে আমি পাগলি নই। আমার ও তোমার এবং গোটা বিশ্ববাসীর খোদা হলেন তিনি যিনি আকাশ, জমিন, পাহাড় ও সাগর সৃষ্টি করেছেন। ফেরাউন ক্ষেপে গিয়ে আসিয়াকে দুরে তাড়িয়ে দেয়। এরপর ফেরাউনের নির্দেশে আসিয়াকে পেরেক দিয়ে মাটির সঙ্গে আটকে দেয়া হয় এবং তার মাথার ওপর ঝুলিয়ে দেয়া হয় এক বিশাল পাথর! আর তাকে বলা হয় মুসা ও তার খোদার প্রতি বিশ্বাস ত্যাগ করতে তাকে প্রাসাদে ফিরিয়ে নেয়া হবে ও তিনি আগের মতই রাণী থাকবেন, অন্যথায় মাথার ওপর পাথরটি নিক্ষেপ করা হবে। কিন্তু আসিয়া পিছু হটতে রাজি হননি। ফলে ফেরাউনের ব্যাপক নির্যাতনে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/৩০

 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ