জানুয়ারি ২৩, ২০২৪ ২০:০৪ Asia/Dhaka

যৌবনকাল ও যৌবনের মেধা এবং এর নানা সুবিধা ও শক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যে কোনো বয়সে সাফল্য লাভের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হল: প্রথমত, জ্ঞানের মাত্রা বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, জীবনের নানা সংকট ও জটিলতা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি এবং মানিয়ে নেয়ার যোগ্যতা অর্জন। প্রত্যেক ঐশী বা আসমানি ধর্মই জ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে মানুষকে পূর্ণতা অর্জনে উৎসাহ দিয়ে থাকে। মানুষের প্রকৃতিও জ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতাকে ভালোবাসে। প্রজ্ঞা ও সচেতনতা মানুষকে নানা ধরনের ক্ষতি ও অ-নিরাপত্তা থেকে রক্ষা করে এবং সৌভাগ্যের নানা পথ খুলে দেয়। তরুণ ও যুব বয়সে মানুষ সহজেই যত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারে বেশি বয়স্ক হওয়ার পর তা অর্জন করা আর তত সহজ থাকে না। এ সময় মানুষের স্মৃতি শক্তি ও মুখস্থ করার শক্তিও থাকে খুব প্রখর। 

মহানবী (সা)ও কম বয়সে বা তরুণ বয়সে শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন। কারণ তাঁর ভাষায় এ সময়ে শেখা জ্ঞান পাথরে খোদাই করা নক্সার মত সুদৃঢ় বা স্থায়ী হয়ে যায়। একইভাবে এ সময়ই ধর্মীয় জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, জ্ঞানের মাধ্যমে তরুণ ও যুবকরা রক্ষা করতে পারে নিজের ধর্ম ও ধার্মিকতা এবং আদব-কায়দার মাধ্যমে রক্ষা করতে পারে নিজের ব্যক্তিত্ব। মহানবী (সা) তাঁর রেসালাতের দায়িত্ব পালনের শুরুর দিকেই এমন এক যুগের সূচনা করেন যার বৈশিষ্ট্য ছিল অজ্ঞতার ওপর জ্ঞানের বিজয়। একবার মহানবী (সা) দেখলেন যে মসজিদে দুই দল মানুষ রয়েছে। একদল ইবাদতে ব্যস্ত, আর অন্য দল জ্ঞানের বিষয়ে আলোচনা করছে। মহানবী (সা) তখন জ্ঞান চর্চাকারীদের দলে যোগ দিলেন। তিনি বললেন, মানুষকে জ্ঞান শেখানোর জন্যই আমাকে আসমানি দায়িত্ব তথা রেসালাত দেয়া হয়েছে।

মানুষের শরীরের পুষ্টি ও সুরক্ষার জন্য যেমন খাবার গ্রহণ জরুরি তেমনি আত্মার পুষ্টি ও সুরক্ষার জন্য খাদ্য গ্রহণ জরুরি। আমরা শরীরের খাবার খাওয়ার আগে দেখে নেই যে সেসব স্বাস্থ্য-সম্মত বা উপযুক্ত অবস্থায় রয়েছে কিনা। কিন্তু আত্মার খাদ্য নির্বাচনে কি সেই একই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি নয়? অজ্ঞতা ও পাপের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের আত্মার ক্ষতি করছে কিনা তা দেখা অবশ্যই জরুরি। 

আমরা অনেক ধরনের জ্ঞান অনুসন্ধান করে বেড়াই যা আমাদের উপকারে আসবে। কিন্তু সৌভাগ্য ও প্রশান্তি অর্জনের জন্য যে জ্ঞান সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হল পবিত্র কুরআনের জ্ঞান এবং এমন জ্ঞান যা মানুষকে হালাল, হারাম ও ইসলামী বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতন করে। যেসব মা-বাবা তার সন্তানদের এসব জরুরি বিষয়ে শেখানোর উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নেবেন না- যা ব্যাপক মাত্রায় দেখা যাচ্ছে আধুনিক যুগে তথা শেষ যামানায়- তাদের সঙ্গে মহানবী (সা) কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করবেন বলে ইসলামী বর্ণনা বা হাদিস রয়েছে। অর্থাৎ মহানবী (সা) এ ধরনের মা-বাবাকে বিচার-দিবসে নিজের উম্মত বলেই স্বীকার করবেন না, তাদের জন্য শাফায়াত করা তো দূরের কথা। অন্যদিকে এইসব ধর্মীয় জ্ঞান ও বিধি-বিধানের জ্ঞানই হল সৌভাগ্য অর্জনের জন্য শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। 

ইসলামী জ্ঞান অর্জন মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সমতুল্য এবং তা শ্রেষ্ঠ ইবাদাত বলে ইসলামী বর্ণনা রয়েছে। এ জন্যই বলা হয় একজন অশিক্ষিত বা মূর্খ সাধকের ৭০ বছরের ইবাদাত একজন জ্ঞানীর কয়েক মুহূর্তের জ্ঞান চর্চারও সমতুল্য নয়। ইসলামী জ্ঞান অর্জন ছাড়া কেউ যদি সারা জীবন ধরে প্রতি বছরও রোজা রাখে, সব ধরনের নামাজ পড়ে এবং হজ, যাকাত ও জিহাদসহ সব ধরনের বাহ্যিক ইবাদত পালন করে তাহলেও সেসব তৎপরতা ইসলামী জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট একজন ছাত্রের জ্ঞান অর্জনের অশেষ সাওয়াবের সমতুল্য হবে না।  ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা নানা ধরনের পাপের উৎস। তাই যুবকদের হয় আলেম হতে হবে নতুবা ইসলামী জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে। ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী যারা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ইসলামী জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট হবে না তারা যেন তাদের জীবনটাকে ধ্বংস করল এবং এইসব অবহেলার কারণে বা জীবনকে বরবাদ করার কারণে নিজেকে দোযখের জন্য উপযুক্ত করল। 

সলামী জ্ঞান ছাড়াও সমাজের জন্য কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন করাও জরুরি। হাদিসে বলা হয়েছে, জ্ঞান যেন মুমিনের হারানো সম্পদ। জ্ঞান অর্জন কর যদি তা অর্জনে চীনেও যেতে হয় বা সুরাইয়া গ্রহেও যেতে হয়! অন্যদিকে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর জন্য ফরজ। 
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী সেই শৈশব তথা পাঁচ ছয় বছর বয়স থেকেই মহানবীর সঙ্গে থেকে মহানবীর সবচেয়ে বড় ছাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন, উটের শাবক যেমন কখনও মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না, আমিও কখনও রাসুল থেকে দূরে থাকতাম না। বলা হয় পবিত্র কুরআনের এমন কোনো আয়াত নেই যা নিয়ে তিনি রাসুলের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেননি। মহানবী (সা) প্রতিদিন হযরত আলীর সামনে জ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্ত খুলতেন এবং নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও আদব-কায়দার দিকগুলোও তুলে ধরতেন যাতে যুব বয়সী হযরত আলী এসবকেই নিজের আদর্শ করে নেন। 

ইসলামী ইরানের যুব সমাজ গবেষণামূলক জ্ঞান ও বিজ্ঞান-চর্চায় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধান ও সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি নিজেই এ বিষয়ের ওপর সব সময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। ইরানি ছাত্র ও ছাত্রীরা প্রায়ই চিকিৎসা ও কৃষি খাতসহ বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রের উন্নতমানের যন্ত্র এবং উদ্ভাবনী নানা যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। এইসব গবেষকদের অনেকেই নারী এবং তাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননাও অর্জন করেছেন। মারিয়াম ইসলামী হচ্ছেন এমনই একজন। তিনি এক্সটারনাল ফিক্সাটোর নামক যন্ত্র উদ্ভাবনের জন্য ২০০৮ সালে জাতিসংঘের বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা সংস্থার পক্ষ থেকে বিশ্বের সেরা আবিষ্কারক হিসেবে স্বর্ণপদক ও সম্মানসূচক ডিপ্লোমা এবং নগদ দুই হাজার ডলার পুরস্কার পান। এ যন্ত্রের মাধ্যমে হাড়ের ভাঙ্গন বা ফাটল জোড়া লাগানোর কাজ করা যায় খুব উন্নত পদ্ধতিতে। ইরানের শিরাজ শহরে জন্ম নেয়া অত্যন্ত ধার্মিক ও সংস্কৃতিমনা পরিবারের এই যুবতী নারী চিকিৎসা বিজ্ঞানীর লেখা দশটিরও বেশি গবেষণামূলক প্রবন্ধ বিশ্বের অনেক গবেষণা সাময়িকীতে স্থান পেয়েছে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ে ইরানের গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবন্ধ প্রকাশের সংখ্যা দিনকে দিন দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এক্ষেত্রে ১৯৯৮ সালে বিশ্বে ইরানের অবস্থান ছিল ৫২ তম। ২০১৩ সালে এক্ষেত্রে বিশ্বে ইরানের অবস্থান দাঁড়ায় ১৯ তম স্থানে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব শাখায় ইরানি যুব সমাজ এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ