এপ্রিল ০২, ২০২৪ ১৯:৫৬ Asia/Dhaka

শ্রোতাবন্ধুরা! স্বাগত জনাচ্ছি রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন।

হেমোরয়েড-বা অর্শ কিংবা পাইলস বলে আমরা সবাই জানি। এই রোগটির কথা প্রায়ই শোনা যায়। যদি এককথায় বলি-তাহলে পাইলস হচ্ছে পায়ুপথের রক্তবাহী কাঠামোর রোগ। এ রোগটি নিয়ে অনেকে লজ্জাও পান-প্রকাশ করতে চান না। তো এই বিশেষ রোগটি নিয়ে আমরা কয়েক পর্বে কথা বলব। আজ চলুন প্রথম পর্বের আলোচনায় যাই। আর আমাদের সঙ্গে অতিথি হিসেবে থাকছেন পাইলস বিশেষজ্ঞ ও কোলোরেক্টাল সার্জন ডা মো.আসাদুজ্জামান। তিনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে সহকারী রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত আছেন।

রেডিও তেহরান: ডা.মো.আসাদুজ্জামান,রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: ডা.মো.আসাদুজ্জামান-বাংলাদেশ ভারতসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে হেমোরয়েড বা যাকে অর্শ বা পাইলস রোগ বলা হয়। এ রোগটির কথা প্রায়ই শোনা যায়। শুধু এ অঞ্চলই বলছি কেন বিশ্বের সবখানেই এ রোগটি আছে। তো আলোচনার শুরুতে জানতে চাইব- পাইলস রোগটি আসলে কি?

ডা.মো.আসাদুজ্জামান: দেখুন, পাইলস আমাদের পায়ুপথের অতি পরিচিত এবং অতি সাধারণ একটি রোগ। আমার মনে হয় পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই এই রোগ এবং এই শব্দটি সম্পর্কে পরিচিত।

পায়খানার রাস্তায় কোনো রোগ হলেই রোগীরা বলে থাকেন যে তার পাইলস হয়েছে। যেকোনো রোগ হলেই রোগী এমন কথা বলে থাকেন। এজন্য পাইলস সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে একটু জানা দরকার।

মেডিকেলের ভাষায় পাইলস বা অর্শকে আমরা অ্যানাল কুশান বলি। আমাদের পায়খানার রাস্তায় বেশ কিছু স্ট্রাকচার থাকে। যেটি পায়খানার রাস্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো আঁকাবাঁকা রক্তনালী এসে অনেকগুলো কুশন তৈরি করে। যাকে বলা হয় অ্যানাল কুশন।

অ্যানাল কুশনকে যদি বুঝিয়ে বলি তাহলে ধরুন, আমরা সোফাতে বসব। তো সেখানে বসার ক্ষেত্রে একটু বেশি আরাম পাওয়ার জন্য সোফার ওপর ছোট একটা বালিশ দেওয়া হয়।সেটিকে পিঠের কাছে দিয়ে বসি। তো এই যে নরম ছোট আকারের একটি বালিশ দেয়া হলো তাতে একটু বেশি আরাম পাওয়া গেল। ঠিক আমাদের পায়খানার রাস্তায়ও এমন ছোট আকারের কিছু স্ট্রাকচার থাকে যেগুলো গঠিত হয় 'রক্তনালী' দিয়ে। এই জিনিষটাকে বলে অ্যানাল কুশন। আর এই অ্যানাল কুশন থেকেই পাইলস রোগটি হয়ে থাকে।

রেডিও তেহরান:ডা.মো.আসাদুজ্জামান, আপনি অ্যানাল কুশনের কথা বলছিলেন। এই অ্যানাল ক্যুশানটা কোথায় থাকে-এ সম্পর্কে যদি একটু স্পষ্ট করে বলেন?

ডা.মো. আসাদুজ্জামান: অ্যানাল কুশনটা পায়খানার রাস্তার মলদ্বারের মুখে কিন্তু থাকে না। ওখান থেকে একটু উপরে অর্থাৎ পায়খানার রাস্তার ২/৩ সেন্টিমিটার ভেতরের দিকে থাকে। ওর নর্মাল পজিশন থেকে যখন নিচে নেমে আসে তখন সেটাকে বলি অ্যানাল কুশন প্রল্যাপস। আর এই অ্যানাল কুশন প্রল্যাপস হওয়ার পর যখন নানারকম লক্ষণ দেখা দেয় তখন সেটাকে আমরা বলি পাইলস বা অর্শ। তাহলে পাইলস রোগটি হচ্ছে অ্যানাল কুশন প্রল্যাপস হয়ে যে বিভিন্ন সমস্যা দেখা সেগুলোর সমন্বয় হলো পাইলস বা হেমোরয়েডস। তাহলে এখানে বিষয়টি স্পষ্ট যে পাইলস নতুন করে হয় না।

রেডিও তেহরান:ডা.মো.আসাদুজ্জামান,আপনার আলোচনায় যে বিষয়টি বোঝা গেল সেটি পাইলস নতুন করে হয় না। পাইলস সবার থাকে। ডা. আসাদুজ্জামান-পাইলসের ফাংশান বা কাজটা কি-সে সম্পর্কে যদি বলেন?

ডা.মো. আসাদুজ্জামান: দেখুন পাইলস সবার থাকে। সেটা বেড়ে গিয়ে নিচে নেমে আসলে যখন নানা লক্ষণ দেখা দেয় সেটাকে আমরাই পাইলস বলছি। আর এই পাইলসের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। এটি ওয়াশারারের মতো কাজ করে। যেমন ধরুন আমরা একটা পানির কল অথবা এই ধরনের কোনো কিছুকে টাইট করার জন্য ওয়াশার ব্যবহার করে থাকি। পাইলসটা ঠিক সেই কাজটি করে থাকে। যেমন দেখুন-আমাদের পায়খানার রাস্তা দিয়ে বাতাসও আসে আবার পাতলা পায়খানাও আসতে পারে আবার সলিড পায়খানাও আসতে পারে।

এখন পাইলস যদি শুধুমাত্র শক্ত পায়খানা ধরে রাখতে পারে তাহলে পাতলা পায়খানার সময় কী হবে? তখন তো লিক হয়ে যাবে। ফলে পাইলসকে এমনভাবে টাইট করা হয়েছে যেন শক্ত কিংবা পাতলা পায়খানা কোনোটাই যেন বের না হতে পারে। আবার পায়খানা রাস্তা দিয়ে কিন্তু বাতাসও আসে। ধরুন সে পানি ধরে রাখতে পারল কিন্তু বাতাস ধরে রাখার মতো টাইট না হয় তাহলে তো বায়ু যখন আসবে তখন অটোমেলিক বের হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বায়ু কিন্তু অটোমেটিক বের হচ্ছে না। এই যে ওয়াটার টাইট কিংবা এয়ার টাইটের যে কাজ সেটি কিন্তু করে পাইলস।  

রেডিও তেহরান: ডা.মো.আসাদুজ্জামান-পাইলসের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজের কথা বললেন-আর কাজগুলো নিয়ে যদি আলোচনা করেন।

ডা.মো. আসাদুজ্জামান: পাইলসের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে অ্যানাল সেন্সিং। অর্থাৎ পায়খানার রাস্তা দিয়ে শক্ত, নরম যে কোনো ধরনের পায়খানা আসতে পারে আবার বাতাসও আসতে পারে। এখন ধরুন আমি বসে আছি কিংবা দাঁড়িয়ে আছি। যখন বায়ু ত্যাগের প্রয়োজন হলো-তখন সেখানে বাতাস আসল নাকি পায়খানা আসল, সেটি কোন ধরনের পায়খানা আসল সেটা কিন্তু আমরা দেখি না কেবল বুঝতে পারি। কীভাবে বুঝতে পারি? বুঝতে পারার ধরণটা হচ্ছে-পাইলসের ওখানে বিভিন্ন ধরনের রিসেপটর দেয়া আছে। তারা এটা সেন্সিং করে আমাদের ব্রেইনে সিগন্যাল পাঠায় যে এখন বাতাস আসছে বায়ু ত্যাগের প্রয়োজন বা এখন পাতলা পায়খানা আসছে এটাকে একটু টাইট করে রাখতে হবে নইলে বের হয়ে যাবে। এই যে সেন্সিংয়ের কাজ-সেটি পাইলস করে থাকে। তাহলে এসব থেকে বোঝা যায় পাইলস কত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ যখন সেটা বেড়ে যায়, তার সাপোর্ট থাকে না তখন সেটি পাইলস রোগ।

রেডিও তেহরান: ডা.মো.আসাদুজ্জামান, আমাদের হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। আজকের পর্বের শেষ দিকে যেটুকু সময় আছে-তারমধ্যে যদি আপনি পাইলসের লক্ষণগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করেন-অর্থাৎ কীভাবে বোঝা যাবে যে পাইলস হয়েছে?

ডা.মো. আসাদুজ্জামান: দেখুন, কোনো ব্যক্তি কীভাবে বুঝবেন যে তার পাইলস হয়েছে। হেমোরয়েডস, পাইলস বা অর্শ -এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে। এখানে হেমো বা হাইমা- অর্থ হচ্ছে রক্ত(HEM-uh-roids) আর রেইমা মানে হচ্ছে ফ্লো বা প্রবাহ। এটি ল্যাটিন শব্দ। এর মানে হচ্ছে- রক্ত প্রবাহিত হওয়া। অর্থাৎ পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়া। সহজ  ভাষায় আমরা এমনটি বুঝি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা আমাদের কাছে এসে বলে থাকেন আমার পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়ে। এটাই হেমোরয়েড বা পাইলসের প্রধান লক্ষণ। আর এই রক্তটা পড়ে সাধারণত ব্যথাহীনভাবে। মানে ব্যথামুক্ত রক্তপাত হয়। অনেক সময় এমনও দেখা যায় যে কারো পায়খানার রাস্তা দিয়ে পাইলস থেকে রক্ত পড়ছে অথচ বুঝতেও পারছে না। কখনও যদি তিনি নিচের দিকে খেয়াল করেন অথবা হাই কমোড ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে ফ্লাশ করার আগে নিচের দিকে দেখেন যে পানি লাল হয়ে আছে তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তার পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত পড়ছে। আর এটাই হলো পাইলসের প্রধান লক্ষণ যে পায়খানার রাস্তা দিয়ে ব্যথামুক্ত রক্তপাত হওয়া।

তো ডা.মো.আসাদুজ্জামান, অর্শ বা পাইলস রোগ নিয়ে প্রথম পর্বে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ডা.মো.আসাদুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ। সেইসাথে রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক স্বাস্থ্যকথা অনুষ্ঠানের সব শ্রোতা ভাই-বোনকে আমার আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২

ট্যাগ