এপ্রিল ২৭, ২০২০ ১১:৪০ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা পবিত্র রমজানের রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা.)'র একটি বিখ্যাত ভাষণের কিছু অংশ তুলে ধরেছিলাম।

ওই একই ভাষণে মহানবী (সা.) বলেছেন,হে মানুষেরা! এই মাসে সৎ আচরণের চর্চাকারী  তথা সুন্দর আচরণকারীরা কিয়ামতের দিন পুলসিরাত পার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে। আর যারা অসৎ তাদের পাগুলো সেদিন পিছলে যেতে চাইবে। যে কেউ এই মাসে তার অধীনস্থ কর্মীদের কাজের বোঝা কমিয়ে দেবে আল্লাহ পরকালে তার হিসাব-নিকাশ সহজ করবেন এবং যে কেউ এই মাসে অন্যকে বিরক্ত করবে না মহান আল্লাহ তাকে কিয়ামত বা বিচার-দিবসের দিন নিজের ক্রোধ হতে নিরাপদ রাখবেন। যে কেউ রমজান মাসে কোনো এক ইয়াতিমকে সম্মান করবে ও তার সঙ্গে দয়ার্দ্র আচরণ করবে মহান আল্লাহও বিচার-দিবসে তার প্রতি দয়ার দৃষ্টি দেবেন। যে এই মাসে নিজের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো আচরণ করবে, মহান আল্লাহও বিচার-দিবসে তার প্রতি দয়া করবেন, আর যে এই মাসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে আল্লাহও তাকে নিজ রহমত থেকে দূরে রাখবেন।'

বিশ্বনবী (সা.) রমজান প্রসঙ্গে আরও বলেছেন,

''যে রমজানে এ মাসের জন্য নির্দেশিত বা নির্দিষ্ট ইবাদতগুলো করবে আল্লাহ তাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। যে এই মাসে ফরজ বা অবশ্য পালনীয় ইবাদত বা দায়িত্বগুলো পালন করবে তাকে অন্য মাসে ওই একই কাজের পুরস্কারের চেয়ে সাতগুণ বেশি পুরস্কার দেয়া হবে। যে রমজান মাসে আমার ওপর সালাওয়াত বা দরুদ পাঠাবে আল্লাহ বিচার দিবসে তার ভাল কাজের পাল্লা ভারী করে দেবেন, অথচ অন্যদের পাল্লা হাল্কা থাকবে।

যে এই মাসে পবিত্র কুরআনের মাত্র এক আয়াত তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে এত সওয়াব দেবেন যে তা অন্য মাসে পুরো কুরআন তিলাওয়াতের সমান হবে।

বিশ্বনবী (সা.) রমজান প্রসঙ্গে আরও বলেছেন,

হে মানুষেরা! বেহেশতের দরজাগুলো এই মাসে তোমাদের জন্য খোলা থাকবে। আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তা তোমার জন্য বন্ধ হয়ে না যায়। রমজান মাসে দোযখের দরজাগুলো বন্ধ রয়েছে, আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তা তোমার জন্য কখনও খুলে না যায়। এই মাসে শয়তানগুলোকে হাতকড়া পরিয়ে বন্দী রাখা হয়েছে, আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তারা তোমাদের ওপর কর্তৃত্ব করতে না পারে।"

পবিত্র রমজানের ফজিলত তুলে ধরতে গিয়ে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান আজ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাফর সাদিকের একটি বক্তব্য শোনালেন।  জনাব খান বলছিলেন:

ইমাম সাদিক ( আঃ) বলেছেন: রমযান মাসের এমন হক (অধিকার) ও মর্যাদা রয়েছে যে এর ফলে কোনো মাসই এ মাসের ( রমযান) সদৃশ ( ও সমকক্ষ ) নয়।

পবিত্র রমজান আত্মশুদ্ধি তথা আত্মগঠন ও আত্ম-সংশোধনের শ্রেষ্ঠ মাস। কারণ রমজানে রোজাদার অনেক বৈধ তৃপ্তি বা হালাল বিষয় ভোগ করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত রেখে নাফস্‌ বা নিজের সঙ্গে জিহাদ তথা শ্রেষ্ঠ জিহাদে মশগুল থাকেন।

আমরা অনেকেই শারীরিক মৃত্যুকে কত বেশি ভয় পাই। কবর-আজাব বা কবরের অন্ধকার ঘরের কথা ভাবতেই শিউরে উঠি আমরা অনেকেই। কিন্তু আত্মার মৃত্যু অনেক বেশি ভয়ানক। আত্মাকে অসুস্থ রাখার জন্য পরকালে কোটি কোটি বছর কিংবা কেউ কেউ  চিরকাল দোযখের আগুনে জ্বলবে এবং চিরকাল অন্যদের কাছে লজ্জিত হয়ে থাকবে। আত্মার কিছু রোগ হল স্বার্থপরতা বা আত্মকেন্দ্রীকতা, হিংসা, কার্পণ্য, অলসতা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলা ইত্যাদি।

কেউ আমাদের হিংসুক বললে তা সহ্য করতে পারি না। বরং জোরেশোরে অস্বীকার করি। কিন্তু রমজানে নিজেই ভেবে দেখুন: আমার ভেতরে কি কি সমস্যা আছে? আমি কতটা আত্মপ্রেমিক ও পরশ্রীকাতর? নিজের জন্য যা পছন্দ করি অন্যের জন্যও তা পছন্দ করছি কি? নিজের বেলায় ভালো পদ, ভালো সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান আশা করলেও অন্যের ক্ষেত্রেও তা করছি কি? গিবত ও চোগলখোরির মত মারাত্মক পাপের অভ্যাস আমার রয়েছে কি? অন্যরা আমার বিশেষ কিছু ত্রুটি বা দোষ গোপন রাখুক-এই আশা করলেও আমি কি অন্যদের ক্ষেত্রেও সেই একই প্রত্যাশা পূরণ করছি? কোনো কিছু কেনা বা বেচার সময় যে মূল্য আশা করি নিজের বেলায় অন্যের বেলায়ও কি তা আশা করছি?

কোনো কোনো বিষয়ে খুব ধার্মিক হয়ে অন্যদের অনেক অধার্মিকতার তীব্র নিন্দা জানালেও ধর্মের সব বিষয়েই কি আমি নিজেকে এভাবে উন্নত করতে পেরেছি? নিজের ভালো কাজের কথা প্রচার করে বা উপকারের জন্য খোঁচা দিয়ে সেসবের সাওয়াবকে কি ধ্বংস করছি? ভালো কাজের জন্য অন্যদের বাহবা বা প্রশংসা আশা করছি কি? অন্যদের বাহবা বা নিন্দার ভয় না করে সব কাজ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করছি কি?  -  বার বার এ জাতীয় প্রশ্ন নিজেকেই নিজে করতে থাকুন। এরপর নিজেই নিজের চিকিৎসা করুন।  মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আত্মিক রোগ-বালাই থেকে মুক্ত হওয়ার তৌফিক দিন।

 তৃতীয় রোজার দোয়া ও তার অর্থ:

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।