এপ্রিল ২৯, ২০২০ ১৩:৩০ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারায় মহান আল্লাহ বলেছেন, 'হে ইমানদাররা! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা খোদাভীতি বা তাকওয়া অর্জন করতে পার।' (২:১৮৩)-

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় নামাজ ও রোজা এবং আল্লাহকে স্মরণ করার মত ইবাদতগুলো সব যুগেই সব অবস্থাতেই জরুরি।

রোজা খুবই কল্যাণকর ও মূল্যবান খোদায়ি বিধান। রোজা রাখাও সহজ নয়। কারণ সব সৌভাগ্যময়, পবিত্র ও বরকতময় বিধান বা কাজ কঠিন হয়ে থাকে।  কথায় বলে কষ্ট ছাড়া মিষ্ট মেলে না। তবে রোজায় যে কষ্ট বা পরিশ্রম বা পুঁজি বিনিয়োগ করা হয় তা এর বিপুল প্রতিদান ও পুরস্কারের তুলনায় খুবই কম। অর্থাৎ খুব কম পুঁজিতে বহু গুণ বেশি লাভ রয়েছে রোজায়। 

রোজার রয়েছে তিনটি পর্যায়: এ পর্যায়গুলো হল ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করা, পাপ বর্জন ও উদাসীনতা থেকে দূরে থাকা।

একটি হাদিসে বলা হয়েছে রোজা ফরজ করা হয়েছে এ জন্য যাতে এক বিশেষ সময়ে ধনী ও দরিদ্র সমান অবস্থায় থাকে। ধনীর অজস্র ধন থাকায় সে সব ধরনের দামি খাবার ও পানীয় সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু রোজার দিনে রোজা রাখার ফলে ধনীও বাধ্য হয় রসনাকে সংযত রাখতে।  ফলে ধনীরা এ সময় কিছুটা বুঝতে পারে যে ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও দারিদ্র কতটা কষ্টকর! রোজা রেখে ধনীও নফসকে দমিয়ে রাখেন স্বেচ্ছায়!

 

হাদিসে দেখা যায় রোজার আরও এক উদ্দেশ্য হল কিয়ামত বা বিচার দিবসের ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও নিঃস্বতার কথা মনে করিয়ে দেয়া। সেই কঠিন দিনে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নানা বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে কৈফিয়ত দিতে মানুষের যে কত কষ্ট হবে তা স্মরণ করিয়ে দেয় রোজা।  রোজা ক্ষুধা ও তৃষ্ণাসহ নানা কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা যোগায়। দরিদ্ররা আগে থেকেই ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কষ্ট কি তা জানেন। কিন্তু ধনীরা তা কেবল রোজার সময়ই বুঝতে পারেন। অর্থাৎ রোজা সব শ্রেণীর মানুষকে শেখায় অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতা।

পবিত্র রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান বলেছেন:

মহানবী (সা:) বলেছেন: রমযান মাসে তোমাদের জন্য যে সব নেয়ামত ও বরকত আছে তা যদি তোমরা জানতে তাহলে তোমরা মহান আল্লাহর কাছে (এ জন্য) বেশি বেশি কৃতজ্ঞতা ( শুকর) প্রকাশ করতে।

ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করা এবং বিশেষ ধরনের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা – এসবই হচ্ছে এমন কিছু ইসলামী ও স্বতঃস্ফূর্ত অনুশীলন যা নানা ধরনের প্রতিকুলতার মোকাবেলাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে মানুষকে শক্তি যোগায়।  রোজা নানা ক্ষেত্রে সংযম পালনের ও কষ্ট সয়ে নেয়ার ধৈর্য যোগায় এবং তা কিয়ামত সম্পর্কে উদাসীনতা দূর করে চিন্তাকে করে প্রখর, সতর্ক ও সচেতন। এভাবে রোজা মানুষকে জোগায় পবিত্রতা, ঔজ্জ্বল্য ও কোমলতা।

রোজার আরেকটি পর্যায় হল পাপ বর্জন। এ জন্য দরকার দৃঢ় ইচ্ছা ও মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা। পানাহার ও ইন্দ্রিয়-তৃপ্তি বর্জনের চেয়ে  পাপ বর্জন অনেকের জন্যই বেশ কঠিন। চোখ, কান, জিহ্বা ও মনকে নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে দূরে রাখা না হলে শুধু পানাহার-বর্জনের রোজায় কোনো লাভ নেই। আসল রোজাদার হতে হলে মানুষকে তার প্রতিটি অঙ্গ-এমনকি চুল ও চামড়াকেও গোনাহ থেকে দূরে রাখতে হবে ।

একবার এক মহিলা তার খাদেম সম্পর্কে কটু কথা বলেছিল। মহানবী (সা) তা লক্ষ্য করে কিছু খাবার হাতে নিয়ে ওই মহিলাকে বলেন: এগুলো খাও। ওই নারী বললেন: আমি তো রোজা রেখেছি। মহানবী বললেন: তুমি কেমন রোজা রেখেছ যে নিজ খাদেমকে গালি দিলে

মহান আল্লাহ মানুষকে কেবল পানাহার ও বিশেষ জৈবিক আনন্দ থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখতে রোজার বিধান দেননি। নানা ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে দূরে রাখাও এ বিধানের অন্যতম উদ্দেশ্য। অন্যদের পরিহাস করা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, হিংসা ও শত্রুতা করা এবং এ জাতীয় আরও অনেক অনৈতিক কাজ থেকে মনকে পবিত্র করাও রোজার অন্যতম শর্ত।

রোজার তৃতীয় শর্ত বা স্তরটি হল এমন সব কাজ থেকে দূরে যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে বা আল্লাহর কথা ভুলিয়ে দেয়।  বিশ্বনবী (সা) মহান আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করেছিলেন: রোজার অর্জন বা সাফল্যটা কী? মহান আল্লাহ বলেন: রোজা হৃদয়ের মধ্যে হিকমাত বা প্রজ্ঞার নানা ঝর্ণাধারা বইয়ে দেয়। হৃদয় যখন প্রজ্ঞার কর্তৃত্বাধীন হয় তখন তা বয়ে আনে আলোকিত ও স্পষ্ট জ্ঞান। আর এই জ্ঞান যখন হাসিল হয় তখন তা ইয়াকিন তথা সুনিশ্চিত বিশ্বাস বয়ে আনে যা হযরত ইব্রাহিম (আ) চেয়েছিলেন আল্লাহর কাছে। রমজানের দোয়াগুলোতে বার বার এ বিষয়টি চাওয়া হয় আল্লাহর কাছে। যিনি ইয়াকিন অর্জন করেন তার কাছে জীবনের সব বিপদ ও প্রতিকুলতা সহজ হয়ে যায়  এবং পর্বততুল্য নানা বাধার কঠিন সংকটেও তিনি থাকেন অপরাজেয়। সব সংকট আর বাধা-বিপত্তির বিন্ধ্যাচল পেরিয়ে আল্লাহর পথে অবিচল থাকার শক্তি আসে যে ইয়াকিন থেকে তাও অর্জন করা সম্ভব রোজা রেখে। রোজা যখন মানুষকে প্রতিনিয়ত আল্লাহর স্মরণে মশগুল রাখে ও মহান আল্লাহর মারেফাতের আলো প্রোজ্জ্বল করে তখন এমনই অপরাজেয় হয় সে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ পর্যায়ে উপনীত হওয়ার তৌফিক দেন।

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/ ৫