বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি মনিটরিং জরুরি
ফেব্রুয়ারির আগেই চিনির বাজার অস্থির, রমজানে ভোগান্তির শঙ্কা ভোক্তা অধিকারের
বাংলাদেশে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে জোর চেষ্টার কথা বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। গেল সপ্তাহে জেলা প্রশাসকদেরও এ বিষয়ে সতর্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে এরই মধ্যে দাম বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণা আসার পর বাজারে আবারো বাড়ল চিনির দাম।
এতদিন কেজি ১১০ টাকায় বিক্রি করা চিনি এবার দাম বেড়ে ১২৫ টাকা হয়ে গেছে। ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠলেও বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে চিনির দাম স্বাভাবিক করতে বরাবরের মতো ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে সরকার।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ) চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। নতুন মূল্য অনুযায়ী প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হবে ১১২ টাকায় এবং খোলা চিনি বিক্রি হবে ১০৭ টাকায়। নতুন এ দাম আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। বর্তমান মূল্য অনুযায়ী প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১০৭ টাকা এবং খোলা চিনি ১০২ টাকা। তবে বাজারের কোথাও এই দামে এখন চিনি মেলে না। প্যাকেটজাত চিনি এখনই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়, আর খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের দাবি মিল থেকে চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্যে চিনি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি করতে পারছে না। তবে মিলারদের দাবি তারা সরবরাহ ঠিক রেখেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় মজুদ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
জিগাতলা এলাকার নাফি জেনারেল স্টোরের দোকানি স্বপন ফকির বলেন, কারওয়ান বাজারে রসিদ ছাড়া প্রতি বস্তা চিনি কিনে আনতে হয় ৫ হাজার ৫৫০ টাকায়। দোকানে সরবরাহ করা কোম্পানির বিক্রয়কর্মীদের কাছ থেকেও প্যাকেটের গায়ের মূল্যের চেয়ে ২ টাকা বেশিতে কিনতে হয়। এখন তো সরকার আরেক দফা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। আমরা আগের দামেও চিনি পাব না। দাম আরও বাড়াবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
শান্তিনগর কাচা বাজারে চিনি কিনতে আসা রাসেল মিয়াজি নামে এক ক্রেতা বলেন, রমজানের সময় চাহিদার শীর্ষে থাকে চিনি। সরকার এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারে তাহলে আমাদের জন্য রমজানে চিনি পাওয়া আরও কষ্ট হয়ে যাবে।
চিনির ডিলার তিশা স্টোরের স্বত্বাধিকারী সুমন বলেন, মিল মালিকরা চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখছে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা চাহিদা মতো চিনি দিচ্ছে না। অগ্রিম টাকা দিয়েও মিল থেকে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।

২০২১ সালের জুলাই-ডিসেম্বর ৬ মাসের তুলনায় ২০২২ সালের শেষ ৬ মাসে চিনির আমদানি ২ লাখ ৮ হাজার টন কমেছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সাধারণ সময়ে প্রতি মাসে দেড় লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও রমজানে এই চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে ৩ লাখ টন বা তারও বেশিতে পৌঁছায়।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন রেডিও তেহরানকে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার কারণে বাজার সব সময়ই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিমুনাফাখোরদের বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারি পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন এ ক্যাব নেতা। নইলে আসন্ন রমজানে চিনিসহ নিত্যপণ্যের বাজার আবারো অস্থির হয়ে ওঠার শঙ্কা প্রকাশ করেন এস এম নাজের হোসাইন। #
পার্সটুডে/নিলয় রহমান/আশরাফুর রহমান/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।