বিশ্ব নদী দিবস
নদীর সংখ্যা বিতর্ক চলছে, কমছে নৌপথ; বালু খেকোদের কবলে ভাঙছে নদী
নদী মাতৃক বাংলাদেশে আসলে মোট নদ-নদীর সংখ্যা কত এ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। দখল-দূষণে কত নদী হারিয়ে গেছে সেই সংখ্যাও সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই কারও। দেশের নদ-নদী নিয়ে যখন এমন অবস্থা তার মধ্যে নদীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন।
তারা বলছে, দেশের নদ-নদীর সংখ্যা ৯০৭টি। শেষ পর্যন্ত তাদের এ তালিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ (রোববার) বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস।
নদী গবেষকরা বলছেন, দেশে নদ-নদী রয়েছে ১ হাজার ৬০০-এর বেশি। কিন্তু এনআরসিসির তালিকায় তা নেমে এসেছে ৯০৭টি। আবার সরকারি অন্যান্য তালিকার সঙ্গেও এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এনআরসিসির খসড়া তালিকার বাইরেও দেশে আরও অন্তত ৬০০ নদী রয়েছে। নদী কমিশন তাদের পর্যালোচনায় জানিয়েছে, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নদী চিহ্নিত করতে হবে সিএস মেনে। অথচ কোন জরিপ রেকর্ডের ভিত্তিতে নদী কমিশন খসড়া তালিকা তৈরি করেছে, তা উল্লেখ নেই।
জানা গেছে, গত ৫০ বছরে দেশের নদ-নদীর সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে দূষণ ও ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের পাশাপাশি অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ন, আবাসন এবং সেতু, কালভার্ট ও স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে ছোটবড় আরও অনেক নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের নগরায়নের ফলে নদীগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে তার ফলাফল শূন্যই থেকে যায়। আমরা ধীরে ধীরে নদী দূষণ করছি ও দখল করছি। এখন যদি এসব বন্ধ করতে না পারি তবে সামনে আমাদের দুর্দিন আসছে।
বাংলাদেশে এক সময় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল, এখন অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারের মতো। হারিয়ে যাওয়া নৌপথের তালিকায় ক্রমেই যোগ হচ্ছে নতুন নাম। সড়কের মতো গতি আর নৌপথে আধুনিক যাত্রীসেবা যোগ না হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। নদী মরে যাচ্ছে বলেই হারিয়ে যাচ্ছে নৌপথ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,নদীগুলোকে বাঁচাতে হলে নদী নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।
নৌপথ রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, দেশের নৌপথ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু এই আন্দোলন ততদিন সফল হবে না, যতদিন না আইনের সঠিক ব্যবহার করা যাবে।
এ বিষয়ে ‘রিভারাইন পিপলস’ নামের নদী বিষয়ক সংগঠনের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, সরকারিভাবে নদী নিয়ে কাজ করছে প্রায় ১৮টি সংস্থা। এসব সংস্থার মধ্যে নেই কোনও সমন্বয়, নেই কোনও যোগাযোগ। যে যার মতো কাজ করে। এসব প্রতিষ্ঠানকে একটি প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। না হলে এভাবে নদীগুলোকে বাঁচানো কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।#
পার্সটুডে/বাদশা রহমান/আশরাফুর রহমান/২৪