রংপুরে ৬০০ টাকার লবণ এখন ১৪০০ টাকা: সংকটে চামড়া ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশুর চামড়া আঞ্চলিক মোকামগুলোতে আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা চামড়ার ৬০ ভাগ আড়তে এসে পৌঁছেছে।
চামড়া আড়তে আনার সময় বিভিন্ন স্থানে গাড়ি, ভ্যান থামিয়ে জোর করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের দের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়ছেন। তাছাড়া চামড়া ভারতে পাচারের অভিযোগ তো বরাবরের মতোই রয়ে গেছে।
তারচেয়েও বড় সংকট দেখা দিয়েছে চামড়া সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত লবনের উচ্চ মূল্যের কারণে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ পশুর চামড়ার আড়ত রংপুর নগরীর কামারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ৬শ’ টাকা বস্তা লবণ এখন কিনতে হচ্ছে ১৪শ’ টাকায়। তারপরও লবণ পাওয়া যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। একটা চামড়ায় লবণ দিতে আগে একশ’ টাকা খরচা হতো এবার ৩শ’ টাকা খরচ হচ্ছে। তাও সরবরাহ মিলছে না।
এ প্রসঙ্গে রংপুর বিভাগীয় সাংবাদিক আবদুস শাহেদ রেডিও তেহরানকে বলেন, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে লবন সংগ্রহের মূল্য এবার বেশি পড়ছে। এবার আগাম বৃষ্টি এবং অতি বৃষ্টির কারণে কক্সবাজারে লবন উৎপাদন কম হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রামে পাইকারী বাজারে জলাবদ্ধতার ফলে লবন নষ্ট হয়ে যাবার কারণে সংকট দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে আড়তদাররা বলেছেন, ‘এবার অনেক ট্যানারি বন্ধ। তাছাড়া ট্যানারি মালিকরা গত বছরের সব টাকাই পরিশোধ করেনি। এ কারণে তারা অর্থ সংকটে রয়েছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে এবার আমাদের অনেক টাকা লোকসান হবে।’
এ দিকে ঢাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ঈদুল আজহার দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে কোরবানি দেওয়া গরু ও ছাগলের চামড়ার বিপুল পরিমাণ প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার হয়ে গেছে। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে চামড়ার দাম কম হওয়ায় নানা উপায়ে অবৈধভাবে এসব চামড়া পাচার হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্ক্রিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান ঘনমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক কোরবানির পশু জবাই হয়েছে। কিন্তু সে হিসেবে চামড়া প্রান্তিক,পাইকারি ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের কাছে নেই।
তিনি জানান,তারা আগে থেকেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন। তাদের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। আর্থিক অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে প্রান্তিক, পাইকারি ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
টিপু সুলতান বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ের খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সময়মতো টাকা না পাওয়ায়, সীমান্তবর্তী জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা ভারতে চামড়া বিক্রি ও পাচার করছেন। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ চামড়ার দাম কম হওয়ায় তারা নানা অবৈধ উপায়ে চামড়া কিনে নিচ্ছেন।’
চামড়া ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন,তারা ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা হলেও ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরসহ নানা অজুহাতে ট্যানারি মালিকরা টাকা পরিশোধ করছেন না। এ কারণে তারাও খুচরা ব্যবসায়ীদের টাকা দিতে পারছেন না। ফলে এবার লালবাগের পোস্তায় কাঁচা চামড়া বাজারে একশ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম চামড়া এসেছে।’
এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে চামড়া ব্যবসায় অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ট্যানারি ব্যবসায়ীদের হিসেবে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া,৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এসব চামড়ার অর্ধেকেরও বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৩