বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বাজেট: বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i71200-বাংলাদেশ_সরকারের_অর্থ_বাজেট_বিভিন্ন_মহলের_প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের পাশাপাশি তুলে ধরেছেন ভাল-মন্দ নানা দিকও।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
জুন ১৪, ২০১৯ ১৯:১২ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের পাশাপাশি তুলে ধরেছেন ভাল-মন্দ নানা দিকও।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এডিপিতে ২ লাখ ২হাজার ৭২১ কোটি বরাদ্দসহ মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। আর অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি। আয় ব্যয় মিলিয়ে অনুদান ছাড়া সামগ্রিকভাবে ঘাটতি এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে সরকার।

প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ডক্টর মাহবুবউল্লাহ। তিনি বলেন, যে পরিমাণ ব্যয় ধরা হয়েছে। সেই পরিমাণ আয়ের সংস্থান নেই। অতীতের বাজেটগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে। যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, অর্জিত না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন হয়ে থাকে। এবার সেটা ঘটবে না তা মনে করার কোন কারণ নেই।

তার মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল ঘাটতি থাকায় সরকারকে প্রচুর পরিমাণ ঋণ করতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থা, সঞ্চয়পত্র অথবা বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে। তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ পাওয়ার সুযোগ কম। নিজেরাই তারল্য সংকটে ভুগছে। সরকারকে ঋণ দিলে বেসরকারি বিনিয়োগ হবে না। কর্মসংস্থান বাড়বে না। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। আর বাজেটের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন; সেইসঙ্গে লক্ষ্য পূরণ করা। কিন্তু রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান অবস্থার উত্তরণ না ঘটলে চ্যালেঞ্জ উতরানো সম্ভব নয়।

মাহবুব উল্লাহ আরও বলেন, সরকার প্রতি বছরই বড় আকারের বাজেট দেয়। যদিও অর্থনীতির তুলনায় তা খুব বেশি নয়। কিন্তু বাজেটে প্রচুর অসামঞ্জস্য দেখা যায়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও বাড়ছে না কর্মসংস্থান। আবার ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে। ফলে কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী যে আশার সঞ্চার করেছিলেন, বাজেটে তার প্রতিফলন দেখাতে পারেননি।

এদিকে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, প্রস্তাবিত বাজেটে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বচ্ছল ও উচ্চ আয়ের মানুষকে বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে। করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে সম্পদের ক্ষেত্রে সারচার্জের সীমা। যারা আয় করে তাদের জন্য সুবিধা নেই, অথচ সম্পদশালীদের সুবিধা দেয়া হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে গরীব মানুষের পক্ষে বলা হয়েছে। আমি আগেও বলেছি, এ ইশতেহার একটি সুলিখিত, সুচিন্তিত দলিল। বাজেটে যা সিরিয়াসলি নেই।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজেট ঘাটতি পূরণে গতানুগতিক হিসাব মেলানো হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে চাপ তৈরি করতে পারে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সংস্কার ও নীতি যথেষ্ট নয়। আর বাজেট অর্থায়নে ব্যাংকিংখাতের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক। সরকারের ঋণের কারণে দায়-দেনা পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।#

পার্সটুডে/শামস মন্ডল/বাবুল আখতার/১৪