বুয়েটে ছাত্র খুন: ২ ছাত্রলীগ নেতা আটক, জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা- কাদের
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহ-সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদ।
স্থানীয় চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ দু’জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
রোববার রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে বেশকিছু আঘাতের চিহ্ন ছিল। আবরার ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়।
সহপাঠিদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাত আটটার দিকে আবরারকে শেরে বাংলা হলে তার ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত দুইটা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা বলছেন, ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে পিটানো হয়।
হল সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-ভারত মধ্যকার চুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় গতকাল রাতে 'শিবির' আখ্যা দিয়ে মারধর করে আবরারকে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে সিড়িতে ফেলে যায়। তবে নিহত আবরার ফাহাদ শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না বলে দাবি করেছেন তার চাচা মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমান দাবি করেন, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। হানিফ সাহেবের বিভিন্ন মিটিংয়েও আমরা যাই।
ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু স্বীকার করেছেন, আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত আটটার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেইজে তার লাইক দেয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত তিনটার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে।
শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, ডাক্তারের ফোন পেয়ে হলে আসি। এসে ছেলেটির লাশ পড়ে আছে। ডাক্তার মাসুক এলাহী জানান, রাত তিনটার দিকে হলের শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দেয়। আমি হলে গিয়ে সিড়ির পাশে ছেলেটিকে শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পাই। ততক্ষণে ছেলেটি মারা গেছে। তার সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই।
ঘটনার বিষয়ে লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপ- পুলিশ কমিশনার কামাল হোসাইন জানান, হল প্রশাসনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। এসে ছেলেটির লাশ দেখতে পাই। পরে তা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে শেরে বাংলা হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাফর ইকবালের কাছে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ দেখার জোড় দাবি জানান। তখন প্রাধ্যক্ষ গড়িমসি করলে কান্নায় ভেঙে পড়েন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
এ অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ না দেখে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার না দেখে নিজেরা কোথাও না যাওয়ার এবং প্রশাসনের কাউকেও বাইরে না যেতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ‘পিটিয়ে হত্যা’র রহস্য উদঘাটন করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ সকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভিন্ন মতের জন্য একজন মানুষকে মেরে ফেলার কোনো অধিকার কারও নেই। কাজেই এ ক্ষেত্রে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।