ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছরেও নিশ্চিত হয়নি প্রমিত বানান রীতি
বিনম্র শ্রদ্ধায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে বাংলাদেশের মানুষ। বিশেষ এ দিনটি নানা আয়োজনে বায়ান্ন’র ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে পুরো দেশ। কিন্তু বছরজুড়ে শুদ্ধ বাংলা চর্চা আর প্রমিত বানানরীতি উপেক্ষা করে চলেন অনেকে।
দীর্ঘদিনেও সমতা আসেনি বাংলা বানানে। যে যার ইচ্ছেমতো বানানে শব্দ লিখছেন। কী সরকারি কী বেসরকারি, সব দপ্তরেই দেখা যায় বানান বিভ্রাট আর অসমতা। সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন সব জায়গাতেই ভুল বাংলার ছড়াছড়ি। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের হাতে থাকা ব্যানারগুলোতেও শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখা ভুল বানানে। হ্রস ই'র পরিবর্তে অনেকেই লিখেছেন দীর্ঘ ঈ।
১৯৫২ সালে যে স্থান থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক আমতলার ফটকের নামফলকেই রয়েছে বাংলা বানান ও ব্যাকরণের ভুল প্রয়োগ। ভুল বানানে লেখা হয়েছে প্রাঙ্গণ, ফেব্রুয়ারি আর দাবি। বাক্যগঠনের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসামঞ্জস্যতা, বাহুল্য দোষ।
সরকারি নথিতে, সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এমন ভুল বাক্য ব্যবহার হয় এখনো। সরকারি বানান নিয়েও সমতা আসেনি। কেউ লিখেন হ্রস ই দিয়ে আবার কেউ দীর্ঘ ঈ। আবার একই প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে দেখা যায় একাধিক বানান।

বিদেশি ভাষার শব্দগুলো নিয়েই ঝামেলা কিছুটা বেশি। সাধারণ নিয়ম উপেক্ষা করেই খেয়াল খুশি মতো বানানে বিদেশি শব্দ লিখেন অনেকে। স্টেশনারি, স্টল, স্টিলের মতো শব্দগুলোতে চলে আসে মুর্ধণ্য ষ। ফার্মেসি, সার্জারি এ জাতীয় অনেকে শব্দে হরহামেশা ব্যবহার করা হচ্ছে দীর্ঘ ঈ। বার্ন শব্দটি কেন মুর্ধন্য দিয়ে লেখেন, জানা নেই তাদের। আবার সুপ্রিম কোর্টের বানানে আছে দীর্ঘ ঈ।
প্রমিত বাংলা বানান রীতি প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। যার নিজের নামের শুদ্ধতা আনতেই সময় লেগেছে অনেক দিন। নিজেদের বানান রীতি এড়িয়ে দীর্ঘদিন তারা একাডেমি বানান লিখেছে দীর্ঘ ঈ দিয়ে।
তবে ভাষা প্রবাহমান, মানুষ যা গ্রহণ করবে, শেষাবধি সেটাই টিকে থাকবে বলে মনে করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ডক্টর জালাল আহমেদ। তার মতে, আইন করে মানুষকে কোন শব্দ লিখতে বাধ্য করা সম্ভব নয়। ভাষাকে মানুষের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। মানুষ যা গ্রহণ করবে সেটাই টিকবে। মানুষ গ্রহণ না করায় অনেক ভাষা ও শব্দ হারিয়ে গেছে। এভাবেই ভাষা সমৃদ্ধ হয়। আর নানা কারণে মানুষও ভাষা আন্দোলনের চেতনায় বাংলা চর্চা থেকে সরে এসেছে বলে মনে করেন তিনি।
আবার চায়না কীভাবে চীন হলো, আর সাউথ কোরিয়া বা সাউথ আফ্রিকা দক্ষিণ কোরিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকা হলো, সেটাও ভাববার বিষয়। তবে চাপিয়ে দিয়ে নয়, সরকারের পদক্ষেপ আর মানুষের সচেতন চর্চায় প্রমিত রূপ নেবে বাংলা, এমনটাই মনে করে জালাল আহমেদ।#
পার্সটুডে/শামস মণ্ডল/আশরাফুর রহমান/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।