করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের পোশাকখাত: করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন প্রস্তাব ও পরামর্শ
(last modified Sun, 17 Jan 2021 06:55:43 GMT )
জানুয়ারি ১৭, ২০২১ ১২:৫৫ Asia/Dhaka

করোনার সময়ে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে এ খাতের শ্রমিকের আয়ের ওপরও।

সদ্য প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ খাতের শ্রমিকদের গড়ে আয় কমেছে ৮ শতাংশ। এর ফলে ৫৮ শতাংশ শ্রমিকের আর্থিক চাপ আগের তুলনায় বেড়েছে। আয় কমে যাওয়ায় ৮২ শতাংশ শ্রমিকের দৈনিক খাবার গ্রহণও অতীতের তুলনায় কমে গেছে। শুধু তাই নয়, এই সময়ে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের হয়রানিও বেড়েছে ১৭ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল কোভিড-১৯ সৃষ্ট সংকট থেকে পোশাকখাতের উত্তরণ: সরবরাহ চেইনভিত্তিক সমাধান সম্ভব কি? শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এই জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, করোনা মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা ঢালাও ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে। পরবর্তী সময়ে এর বেশিরভাগই ফিরে এলেও দর কমেছে। এছাড়া এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকার সহায়তা দিলেও শ্রমিক ছাঁটাই ও লে অফের মতো ঘটনা ঘটেছে। এমনকি এখনো নিরবে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। আবার অনেক কারখানা নতুন নিয়োগও দিচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শ্রমিক কার্যক্রম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকার এ খাতের জন্য প্রণোদনার আওতায় সহায়তা দিলেও নিচের দিকে এ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। কোনো সমিতির (বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ) সদস্য নয়; কিন্তু রপ্তানির পোশাক তৈরি করে, তাদের বিষয়টি দেখা দরকার। এ খাতের জন্য টেকসই ব্যবস্থা তৈরি করতে কেন্দ্রীয় সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। এ ধরনের সংকট মোকাবিলা আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক।

এ প্রসঙ্গে টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন রেডিও তেহরানকে বলেন, তারা এতদিন যে সব কথা বলে আসছিলেন সেটাই আজ সিপিডি’র গবেষণায় ধরা পড়েছে।

আবুল হোসেন মালিকদের উদ্দেশ করে বলেন, শ্রমিকরা করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে, পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে কারখানায় উৎপাদন চালু রাখছে। তারপর তাদের ছাঁটাই হতে হয়েছে, কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারাও বা কাজে আছেন তাদেরও বর্তমান বাজারমূল্যে সংসার চলছে না। এ অবস্থায় তিনি শ্রমিকদের রক্ষায় সরকারের প্রতি দায়িত্বশীল হবার আহ্বান জানান। 

সিপিডি’র আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এ সংকট সম্মিলিতভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গার্মেন্টস খাতের ওপর চাপ এলে শ্রমিকদের বিপদ বাড়বে। তাদের অস্তিত্বও প্রশ্নের মুখে পড়বে। সরকার আবারও প্রণোদনা দেবে—এমন তথ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রণোদনা ঋণের সুদ পরিশোধের সময় বাড়াবে- সে চিন্তা হচ্ছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় আঞ্চলিক ঐক্যের ওপর বিশেষ জোর দেন। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, শ্রমিকদের রক্ষায় সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিমাব্যবস্থা চালু করা এবং রিজিওনাল রেসপন্স প্রয়োজন।

সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়েজ, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়া অঞ্চলের প্রধান জিয়াউর রহমান, শ্রমিক নেতা আমিরুল হক আমিন, কল্পনা আক্তার, বাবুল আক্তার, তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ