বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ
চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনায় পর্যুদস্ত অর্থনীতি। কর্মহীন হয়ে এবং আয় কমে গিয়ে দারুণ কষ্টে আছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। এমন দুর্দিনে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি।
গত দু’ সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে দাম বেড়েছে প্রধান খাদ্য পণ্য চালসহ তেল, ডাল, মশলা, গোস্ত, সবজি ও ডিমের দাম। এ পরিস্থিতিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষেরা।
বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী যোগান না থাকায় বেড়েছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
চালের ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হচ্ছে সিন্ডিকেটকে। আর তারা মূলত ক্ষমতাসীন দলেরই লোক।
দোকানীরা জানিয়েছেন, চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।
রাজধানীর দোকানীরা জানান, কয়েক দফা তেলের দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ১৩৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার বোতল বিক্রি করছি ৬৯০ টাকায়।
আমদানি করা মশুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা।
ভারত থেকে মসলা আমদানিতে খরচ বেশী হবার কারণে বাজারে মসলার দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে দোকানিরা।
বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। সোনালি মুরগি ২২০-২৩০ ও লেয়ার মুরগি ২২০ টাকায়।
গতকাল (শুক্রবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গরুর গোস্ত বিক্রি হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায় আর খাসির গোস্তের কেজি ছিল ৮৫০-৯০০ টাকা।
এক মাস ধরেই সবজির বাজার চড়া। গত সাত দিনের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি কাঁচা পণ্যের কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। অজুহাত বৃষ্টি-বাদল লকডাউনে বাজারে সবজি সরবরাহ নিয়ামিত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি বাজারে দাম বেশী। ফলে খুচরা মূল্য বেশি।
তবে, প্রায় দুই সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, হঠাৎ করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় এবং দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ৪০ টাকা থেকে লাফিয়ে দাম বেড়ে কেজি ৬০ টাকা হয়ে যায়। তবে এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য মূল্য পরিস্থিতি
করোনা মহামারীতে অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়েছে। অনুন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটি অবর্ণনীয়। বিশ্বব্যাপী নতুন দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে। আর এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে যাচ্ছে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যাতে দরিদ্র দেশগুলোকে আরো বেশি সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
এফএও সম্প্রতি তাদের ষান্মাসিক ফুড আউটলুক রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে, চলতি বছরে বৈশ্বিকখাদ্যপণ্যের আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাবে। যার অন্যতম প্রভাবক হবে জাহাজীকরণের বাড়তি ব্যয়। সব মিলিয়ে এ বছরখাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় ১ দশমিক ৭১৫ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। এ বছরখাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় গত বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করেছে ফাও।
আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির এ ধারা আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করবে।
অন্যদিকে খাদ্য ঘাটতির দেশগুলো সম্পর্কে প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে এফএও বলেছে, চলতি বছরে এসব দেশের খাদ্য আমদানিতে ব্যয় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পর্যটননির্ভর অর্থনীতিরদেশগুলো।
দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তা আরো হুমকিতে ফেলেছে মহামারী। এরই মধ্যে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী অপুষ্টিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরো বাড়াবে বলে সতর্ক করছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংগঠনগুলো।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।