বাংলাদেশে ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে লকডাউন শিথিল হচ্ছে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউন আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উদযাপন উপলক্ষ্যে শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সময় খুলে দেওয়া হবে দোকানপাট, শপিং মল। তবে সরকারি অফিস ভার্চুয়ালি খোলা থাকলেও বন্ধ থাকবে বেসরকারি অফিস।
আজ সোমবার (১২ জুলাই) বিকেলে মন্ত্রিপরিষধ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বিধি-নিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচল করবে । কোরবানির ঈদে মানুষের চলাচল ও পশুর হাটে বেচাকেনার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈদের পর আবারও দুই সপ্তাহের জন্য শাটডাউনে যাবে দেশ।
২৪ ঘণ্টায় ২২০ মৃত্যু
এদিকে, রোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের। আজ সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মহামারী করোনায় মৃত্যুর সারিতে রাজধানী ঢাকার পরই খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার অবস্থান। করোনার শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় ঢাকা জেলায় করোনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর কুষ্টিয়ায় এ হার ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে বিভাগভিত্তিক হিসাবে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ আর খুলনা বিভাগে এ হার ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটেছে ব্যাপকভাবে। ভারতীয় এ ডেল্টা ধরন খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলায় তীব্রতম হয়ে দেখা দিয়েছে। খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও কুষ্টিয়া তার অন্যতম। জেলাগুলোর সীমান্ত সংলগ্নতা, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ প্রভৃতি কারণে করোনার ভারতীয় ধরন জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী।
এ ছাড়া, রংপুর বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, করোনা সংক্রমিত আরও ৭৪৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে গত দশ দিনে রংপুর বিভাগে করোনায় প্রাণ হারাল ১৩৪ জন। ওদিকে, বরিশাল বিভাগে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আর এই সময়ে বিভাগে নতুন করে ৫৭৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামে জুলাই মাসের প্রথম ১১ দিনে ৬২৪৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এ সময় মারা যান ৭০ জন। এদের মধ্যে ৪৭ জনই মফস্বলের।
এদিকে বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামাঞ্চলে বর্ষাকালে সর্দি-জ্বর ও কাঁশিতে আক্রান্ত রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। কিন্তু হাসপাতালের বিড়ম্বনার ভয়ে অনেকে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না। অনেকে সাধারণ জ্বর ভেবে নাপা- প্যারাসিটামল খেয়ে দায় সারছেন। অবস্থা বেগতিক হলেই কেবল হাসপাতালে যাচ্ছেন। যখন অনেকের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।
গ্রামের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর চট্টগ্রাম সেক্রেটারি ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, গ্রামের মানুষ খুব কম সচেতন।এখানকার বেশিরভাগ মানুষ মুখে মাস্ক পড়েন না। যার ফলে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এদের অধিকাংশই লক্ষণ দেখা দিলেও নমুনা পরীক্ষা করেন না। যার ফলে সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় হাসপাতালে নেয়ার পরও অধিকাংশকে বাঁচানো যাচ্ছে না।
ফের শুরু টিকাদান
দেশে আজ থেকে আবার গণটিকাদান শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অপধিদপ্তর। পাশাপাশি আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ১২টি মহানগরে মডার্নার টিকা দেওয়া শুরু হবে।
দেশে প্রথম পর্যায়ে করোনা প্রতিরোধী টিকা প্রদান শুরু হয়েছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত না করেই ৫৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষকে ওই টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৩ লাখ ৯৫ হাজার ২১৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার একটি ও কুমিল্লার একটি কেন্দ্রে ৩০৭ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। এখনো ১৫ লাখ ২৪ হাজারের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছে।#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।