মেয়রের পদত্যাগ দাবি
ঢাকায় ডেঙ্গুর আতঙ্ক বাড়ছে; এখনো প্রস্তুত করা হয়নি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল
রাজধানীতে ডেঙ্গুর আতঙ্ক বেড়েই চলছে; ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আগের তুলনায় রোগীরা দ্রুত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ নগরবাসী ডেঙ্গু মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে শনিবার সকালে রাজধানীতে এক মানববন্ধন করেছে। ধানমন্ডি-সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে মানববন্ধনের আয়োজন করে ধানমন্ডিবাসী সচেতন তরুণ ও যুব নাগরিকগণ।
মানববন্ধনে দক্ষিণ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কড়া সমালোচনা করে বক্তাগণ বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। আর মেয়র তার পরিবার নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন।
এ সময় বক্তারা দক্ষিণ সিটি মেয়র তাপসকে ব্যর্থতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করারও আহ্বান জানান । আর বিক্ষুব্ধ নগরবাসী মেয়রের একটি কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন। এর আগে উচ্চ আদালত কর্তৃক গঠিত বিচারবিভাগীয় কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার সমালোচনা করে একটি সুপারিশমালা পেশ করেছে। তবে এটি এখনও আদালতে শুনানি হয়ে বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা

ওদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ৪ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ১৪৫ জন । আর মারা গেছেন পাঁচজন।
দেশে চলতি বছরের শুরু থেকে ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ৫০১ জন । আর মারা গেছেন ৫১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬৫ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ২৭৩ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, আগের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর শুরুতেই তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা ও বমির উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আর শিশুদের ক্ষেত্রে পেট ব্যথাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া এবারের ডেঙ্গুতে খাওয়ার রুচিও চলে যাচ্ছে। যার কারণে খুব দ্রুত রক্তচাপ কমে যাচ্ছে। ডেঙ্গু এ বছর শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাশেদুল হাসান কনক বলেন, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত যেসব শিশু মারা যাওয়া খবর পেয়েছি, তাদের বেশিরভাগই পাঁচ থেকে সাতদিনের মধ্যে মারা গেছে, চিকিৎসার সময়ও পাওয়া যায়নি।
‘সবাই ধরেই নিয়েছে ভাইরাল ফিভার, আরেকটু দেখা যাক’, আর এতেই বিপদ এসেছে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। তার পরামর্শ, জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে।
এখনো প্রস্তুত করা হয়নি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল
দেশে করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গু ভয়ংকর রূপ ধারণ করায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ২৩ আগস্ট ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ছয়টি হাসপাতালকে ডেডিকেটেড ঘোষণা করে। এগুলো হলো—স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতাল ও গাজীপুরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সক্ষমতা যাচাই না করেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দিয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল, যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য অবকাঠামো না থাকায় চিকিৎসা শুরু করতে পারছে না কোনও কোনও হাসপাতাল। কোনও হাসপাতাল সীমিত সম্পদের ব্যবহার করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রস্তুত না করেই হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড কেন করা হলো জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের একটা জুম মিটিংয়ে এরকম একটা সিদ্ধান্ত ছিল। সে অনুযায়ী ডিক্লেয়ার করা হয়েছিল। তবে এখন চেষ্টা করা হচ্ছে, হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করার জন্য।#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।