ট্রাম্পের অভিযোগের প্রতি চীন যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল?
https://parstoday.ir/bn/news/event-i151750-ট্রাম্পের_অভিযোগের_প্রতি_চীন_যেভাবে_প্রতিক্রিয়া_জানাল
পার্সটুডে–ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি কারো জন্য কোনো হুমকি নয়।
(last modified 2025-09-08T11:35:30+00:00 )
সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৫ ১১:৫২ Asia/Dhaka
  • চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও ​​জিয়াকুন
    চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও ​​জিয়াকুন

পার্সটুডে–ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি কারো জন্য কোনো হুমকি নয়।

পার্সটুডে জানিয়েছে, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, অন্যান্য দেশের সাথে বেইজিংয়ের সহযোগিতা সম্প্রসারণ কোনও তৃতীয় দেশের জন্য হুমকি নয়।

গুও জিয়াকুন এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বেইজিং, মস্কো এবং পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে একটি 'ষড়যন্ত্র" রয়েছে' বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে দাবি করেছেন তা ঠিক নয়। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের সাথে চীনের সম্পর্ক বৃদ্ধি কখনও কোনও তৃতীয় দেশের জন্য ষড়যন্ত্র বা হুমকি নয়।' তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'চীন কখনই তার কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নে তৃতীয় কোনও দেশকে টার্গেট করে না।'

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক সহকারীও ট্রাম্পের ব্ক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বেইজিংয়ে চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার নেতাদের উপস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের প্রতি প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, 'সেখানকার কোনও নেতাই কোনও ষড়যন্ত্র করেননি এবং এটি তাদের মনেও ছিল না।'

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার বেইজিংয়ে এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন।

বেইজিংয়ে বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজ করার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার নেতাদের ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ট্রাম্প দাবি করেন, আপনারা আমেরিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র খুঁজছেন। আপনারা যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন তখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং  উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ট্রুথ সোশ্যালে একটি বার্তায় এসব কথা লিখেছেন।

বুধবার বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী স্মরণে একটি অনুষ্ঠান হয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ প্রায় ২৫টি দেশের নেতা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠান শুরু হয় চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের ভাষণের মধ্য দিয়ে। এরপর হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে একটি সামরিক কুচকাওয়াজ, ১০০টিরও বেশি বিমানের একটি মহড়া এবং চীনা সশস্ত্র বাহিনীর শত শত ইউনিটের স্থল সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হয়।

কুচকাওয়াজ চলাকালীন, চীনের সামরিক বাহিনী ড্রোন, আকাশ, সমুদ্র এবং স্থল ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা প্রদর্শন করে এবং বিভিন্ন যুদ্ধবিমান এবং বোমারু বিমানের উড্ডয়ন প্রত্যক্ষ করে। অনুষ্ঠান চলাকালীন, বেইজিং প্রথমবারের মতো DF-5S কৌশলগত আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে। ক্ষেপণাস্ত্রটি তরল জ্বালানি দিয়ে তৈরি এবং এর পরিসর সমগ্র গ্রহকে আচ্ছাদিত করে। এছাড়াও, চীন বেইজিংয়ে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক ত্রয়ী হিসেবে তার কৌশলগত স্থল, সমুদ্র এবং বিমান বাহিনী প্রদর্শন করেছে।

পশ্চিমা বিশ্লেষকরা স্বীকার করেছেন যে, চীনের মহাকুচকাওয়াজটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কাছে একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা পাঠানোর জন্য সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। উদ্বোধনী ভাষণে শি জিনপিং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, বিশ্ব 'শান্তি এবং যুদ্ধের মধ্যে একটি অবস্থার" মুখোমুখি হচ্ছে এবং কঠোরভাবে বলেন, চীন কখনই কোনও দাঙ্গাবাজ রাষ্ট্রকে ভয় পাবে না।

গার্ডিয়ান সংবাদপত্র চীনা প্রেসিডেন্টের এইসব মন্তব্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের প্রতি ইঙ্গিত হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে। শি আরও উল্লেখ করেছে যে, শত্রুদের বিরুদ্ধে চীনা জনগণ সর্বদা এক এবং ঐক্যবদ্ধ।

মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসও একটি প্রতিবেদনে চীনে বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজের বিষয়টি বিশ্লেষণ করে লিখেছে যে, চীন এই কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখিয়েছে যে আমেরিকান নেতৃত্বের বিকল্প রয়েছে। 'চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া তাদের পরিস্থিতি বোঝে' এ শিরোনামের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, 'বুধবার বেইজিংয়ে যখন শি জিনপিং একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তখন এটি কেবল যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনের বিষয় ছিল না; তারচেয়েও বেশি কিছু ছিল।

রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার নেতাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত, শি জিনপিং বিশ্বকে একটি সতর্কা বার্তা পাঠিয়েছেন যে, আমেরিকান নেতৃত্বের একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প রয়েছে এবং চীন এই দেশগুলির সাথে সমন্বয় করে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করতে পারে। কথিত বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার প্রধান স্থপতি অর্থাৎ আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।'

মাত্র মাস দুই আগে, কয়েকজন পর্যবেক্ষক চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া-এই চার দেশের মধ্যে তাদের ভাষায় তথাকথিত 'পরিবর্তনের অক্ষ'কে উড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং জোটকে মৃত বা অতিরঞ্জিত বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে চার দেশের ঐক্যের বিষয়টি এখন তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, বেইজিংয়ে চীনের মহাকুচকাওয়াজ কেবল সামরিক শক্তির প্রদর্শনই ছিল না, বরং চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যে প্রদর্শনের একটি মঞ্চও ছিল। এমন একটি ঘটনা যা পশ্চিমা আধিপত্যকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছে।#

পার্সটুডে/জিএআর/৭