ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরমে, বন্ধ হল ভিসা
কানাডায় খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র সম্প্রতি সেদেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মন্তব্যের জেরে ভারত ও কানাডার মধ্যে চরম কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
উভয় দেশের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টিভাবে একজন করে কূটনীতিককে বহিষ্কার এবং প্রবাসী ও পর্যটকদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করার পর এবার ভারতের পক্ষ থেকে কানাডার নাগরিকদের ভিসা ইস্যুর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়া স্থগিত রাখা হবে।
এদিকে, গত (বুধবার) কানাডায় বসবাসকারী এসএফজে নেতা গুরপতবন্ত সিংহ পান্নুন অবিলম্বে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দুদের কানাডা ছাড়ার জন্য হুমকি দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালে এসএফজেকে ‘ইউএপিএ’ আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
জানা গেছে, চলতি মাসেই স্বাধীন ও সার্বভৌম খালিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে কানাডার খলিস্তানপন্থি শিখ গোষ্ঠী ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে) অন্টারিওসহ কয়েকটি এলাকায় জমায়েত এবং গণভোটের ডাক দিয়েছে। ভারতে নিষিদ্ধ এবং খলিস্তানপন্থি সংগঠন সাম্প্রতিককালে কানাডার ভারতীয় দূতাবাসে বিক্ষোভ প্রদর্শনও করেছে।
কানাডার মাটিতে সে দেশের খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে হত্যার ঘটনায় ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা‘র ভূমিকা রয়েছে বলে গত (সোমবার) অভিযোগ করেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তার এ ধরণের বিবৃতির পরেই কানাডার এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। কানাডার ওই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় গত (মঙ্গলবার) ভারতের কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে দিল্লি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর পাশাপাশি, নিজ্জর হত্যার ঘটনায় দায় অস্বীকার করেছে ভারত। ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংহতির বিরোধী শক্তিকে কানাডা মদদ দিচ্ছে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই আবহেই গত (বুধবার) কানাডার উপর চাপ বাড়িয়ে কানাডায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা জারি করেছে নয়াদিল্লি। কানাডার স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে কুখ্যাতি তৈরি হয়েছে কানাডার। ভাবমূর্তির দিকে নজর দেওয়া উচিত তাদের।’
ইতোমধ্যে কানাডায় ভারতীয়দের উপর হুমকির অভিযোগ ঘিরে সতর্কবার্তা জারি করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও সেই আশঙ্কা খারিজ করে দিয়েছেন ট্রুডো সরকারের অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার। তার দাবি, কানাডা বিশ্বের নিরাপদতম দেশগুলোর অন্যতম।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিজ্জরের হত্যা নিয়ে কানাডার তোলা অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। এই ইস্যুতে এ পর্যন্ত ভারতকে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি কানাডা সরকার। কানাডায় ভারতীয় হাই কমিশন ও কনস্যুলেটগুলোর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। গা ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে সেদেশের সরকার। সেজন্য নিরাপত্তার কারণে আপাতত বন্ধ করা হয়েছে ভিসা পরিসেবা।
কানাডা খলিস্তানপন্থিদের সমর্থন করে তাদের আশ্রয় দেয় বলে অভিযোগ ভারতের। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ’র পক্ষ থেকে গত বুধবার বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং দুষ্কৃতী নেটওয়ার্কে জড়িত ৪৩ জনের তালিকা কানাডা সরকারকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ, ভারতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা অনেকেই কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কানাডায় খলিস্তানপন্থি বিক্ষোভকারীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত মার্চ মাসে ভারত সরকার কানাডার হাইকমিশনারকে তলবও করেছিল। এইসব কিছুকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার মধ্যে বর্তমানে চরম কূটনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/২২