নিষেধাজ্ঞাগুলো কীভাবে ইরানকে শক্তিশালী করেছে?
-
নিষেধাজ্ঞাগুলি কীভাবে ইরানকে শক্তিশালী করেছে?
পার্সটুডে-ইরানকে থামিযে দেওয়ার জন্য পশ্চিমারা যে নিষেধাজ্ঞাগুলো চাপিয়ে দিয়েছিল তা দেশটির জাতীয় অগ্রগতির সূচনা বিন্দুতে পরিণত করেছে।
গত চার দশক ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানকে দুর্বল করার লক্ষ্যে আরোপ করা হয়েছিল। অথচ সেই নিষেধাজ্ঞা ইরানকে দেশীয় অবকাঠামো, বৈজ্ঞানিক প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করেছিল এবং জাতীয় উন্নয়নের পথকে পুনর্নির্ধারণ করেছিল।
পার্সটুডে লিখেছে, যদিও স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাবর্তনের ফলে দেশটির অর্থনৈতিক বিনিময়ের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে কিন্তু ইরান তার প্রতিরোধমূলক অর্থনীতি এবং দেশীয় সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে উন্নয়নের পথ অব্যাহত রেখেছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, তেলের উপর নির্ভরতা যা ইরানের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শতকরা ৮৫ ভাগেরও বেশি ছিল তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটি হ্রাস পেয়েছে এবং বাজেটে তেলের প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগে এ পৌঁছেছে। তবে এই কাঠামোগত রূপান্তর ইরানের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করেছে এবং তেল-বহির্ভূত খাতের বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছে।
জ্ঞানভিত্তিক শিল্পের ক্ষেত্রেও ইরানে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন ঘটেছে। জ্ঞানভিত্তিক পণ্যের রপ্তানি শতকরা ৬৮ ভাগ এবং উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্যের রপ্তানি শতকরা ৪২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক বিজ্ঞান উৎপাদনে ইরান ১৫তম স্থানে ছিল এবং ন্যানোপ্রযুক্তিতে শীর্ষ ছয়টি দেশের মধ্যে ছিল। আন্তর্জাতিক পেটেন্টের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যা উদ্ভাবন এবং জাতীয় নরম শক্তির বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের ইরানের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ওষুধ শিল্পে ইরান শতকরা ৮৫ ভাগ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। কৃষিতে শতকরা ৯৭ ভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
খনি শিল্পে ১৮% ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আর তামা, ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি ইরানের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। প্রতিরক্ষা খাতে, নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বড় ধরনের বিকাশ ঘটেছে যা ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। ইরান মহাকাশে দেশীয় উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে এবং তার সাইবার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
কূটনীতিতে, ইরান পশ্চিমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার পরিবর্তে চীন, রাশিয়া এবং ভারতের মতো উদীয়মান শক্তির সাথে তার সম্পর্ক প্রসারিত করেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার ইরানকে কিছুটা হলেও ডলারের আধিপত্য থেকে মুক্ত করেছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং ব্রিকস গ্রুপের মতো জোটের সদস্যপদ ইরানের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধি করেছে।
উপসংহারে বলা যায়, নিষেধাজ্ঞা ইরানকে বিচ্ছিন্ন করেনি বরং কৌশলগত ক্ষেত্রে নিরাপদ সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করে তার জাতীয় শক্তিকে পুনর্নির্ধারণ করেছে। এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ইরান দেখিয়েছে যে, বহিরাগত চাপ জাতীয় স্বনির্ভরতা, উদ্ভাবন এবং কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে একটি সহায়ক বিষয় হতে পারে।#
পার্সটুডে/জিএআর/২৯