বৈরুতে আব্দুল্লাহিয়ানের সংবাদ সম্মেলন
'আমরা তখনই ভিয়েনা সংলাপে ফিরব যখন পাশ্চাত্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্তরিক হবে'
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, তেহরান কেবল তখনই ভিয়েনায় পরমাণু বিষয়ক আলোচনায় ফিরে আসবে যখন পাশ্চাত্য পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্তরিকতার প্রমাণ দেবে।
তিনি লেবাননের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ভিয়েনা আলোচনায় ইরানি জাতির অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি ভিয়েনা সংলাপে ফেরার বিষয়ে তেহরানের আগ্রহের কথা জানিয়ে এও বলেছেন, ওই সংলাপের পেছনে তিনি নিজের সময় নষ্ট করবেন না এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কতটুকু আন্তরিক সেটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে পরমাণু সমঝোতায় ফেরার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরমাণু সমঝোতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি কোনো রকম আগ্রহ দেখাননি। ফলে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে এ বিষয়টিই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন আচরণের ওপর আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে। তারা যদি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে তাহলে ভিয়েনা আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফলের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হতে পারি।
পরমাণু সমঝোতার ক্ষেত্রে তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে ইরান প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ আজ পর্যন্ত একটি প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করেনি। অথচ পরমাণু সমঝোতা একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি দু পক্ষই এটি বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী পাশ্চাত্যের দেশগুলো এ প্রচার চালাচ্ছে যে ইরান যদি ভিয়েনা আলোচনায় ফিরে না আসে তাহলে তারা সুযোগ হাত ছাড়া করবে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে পরমাণু সমঝোতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এর আগে বলেছেন, ইরান কেবল তখনই পরমাণু সমঝোতা ফের বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইরান বিরোধী সমস্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তিনি বলেন, কেবল মুখের কথা কিংবা কাগজে লিখিত কোনো কিছুকে আমরা বিশ্বাস করব না এবং সত্যিই তারা নিষেধাজ্ঞা তুলেছে কিনা তা যাচাই বাছাই করেই আমরা পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন শুরু করব।
পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে ৮০০'র বেশি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও ওই নিষেধাজ্ঞা বলবত রেখেছে। এ অবস্থায় কার্যকরভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হল কিনা সে নিশ্চয়তা চায় ইরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে মস্কো সফরে গিয়ে বলেছেন, আলোচনা যদি শুধু আলোচনার জন্য হয় কিংবা তা লোক দেখানোর জন্য হয় তাহলে ইরান এ ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
ভিয়েনা আলোচনায় ফেরার ব্যাপারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দুদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত পরমাণু সমঝোতায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেরার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে এবং দ্বিতীয়ত, পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে তেহরানের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরছেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।