‘রেডিও তেহরান বাংলা ৪০ বছরের সমৃদ্ধ একটি শ্রোতাবান্ধব প্রতিষ্ঠান’
(last modified Tue, 19 Apr 2022 19:36:29 GMT )
এপ্রিল ২০, ২০২২ ০১:৩৬ Asia/Dhaka
  • ‘রেডিও তেহরান বাংলা ৪০ বছরের সমৃদ্ধ একটি শ্রোতাবান্ধব প্রতিষ্ঠান’

অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই রেডিও তেহরানের দুই বাংলা, আসাম ও ত্রিপুরা এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের অগণিত শ্রোতাবন্ধুকে। অভিনন্দন আর প্রাণঢালা শুভেচ্ছা  তেহরানে অবস্থানরত সাংবাদিক ও সকল কলাকুশলীদেরকে। সত্যিই ভাবতে ভালো লাগে যে, প্রিয় বেতারকেন্দ্র রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান ৪০ বছর পূর্ণ করল।

১৯৮২ থেকে ২০২২। এসময়ে পারস্য উপসাগর আর বঙ্গোপসাগরে অনেক পানি গড়িয়েছে। ১৯৮২ সালে রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠানের যে ছোট্ট চারাটি রোপিত হয়েছিল তা পৃথিবীর বাংলাভাষী শ্রোতাদের কাছে সমাদৃত হয়ে উঠেছে। আমার ধারনা- বেতার সম্প্রচার এ যুগের মানুষের তথ্য চাহিদা মেটানোর জন্য এখনো সমান গ্রহণযোগ্য ও সহজলভ্য। প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কারের কারণে সনাতন রেডিও’র অবস্থান পরিবর্তন হয়ে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় স্থান করে নিয়েছে। প্রিয় বেতার এখন নানান মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে, শ্রোতা ইচ্ছা করলে ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং বা ইউটিউবে অথবা ওয়েবসাইটে শুনতে পারছে। বিগত দিনগুলোতে রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠানের সাথে ছিলাম- আল্লাহ যতদিন হায়াত দেন ইনশাআল্লাহ সাথেই থাকব।

এবার আমার রেডিও তেহরান তথা রেডিও শোনার নিতান্তই ব্যক্তিগত কিছু কথা নিবেদন করছি। ১৯৮২ সালে যখন প্রিয় তেহরান বেতারে বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সূচনা হয় আমি সদ্য স্নাতক এক বেকার। ঐ সময়টা ছিল আমার শ্রোতা জীবনে একটা উল্লেখযোগ্য সময়। রেডিওতে আমি সাধারণত বিশ্বের নানা দেশ থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠানের শ্রোতা ছিলাম। তবে আমি কখনোই সিরিয়াস ধরনের শ্রোতা হয়ে উঠতে পারিনি। রেডিও’র সাথে আমার মেলবন্ধন সেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আমার আব্বার মাধ্যমে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নানান বেতারে আকর্ষণ ছিল অনুরোধের আসরে পছন্দের গান বা পছন্দের শিল্পীর গান শোনার জন্য চিঠি দেয়া। ১৯৮২ তে প্রিয় বেতার তেহরান তাদের বাংলা ভাষার সম্প্রচার যখন শুরু হয় তখন বিশ্বে বেতার সম্প্রচারে ছিল অনেক খ্যাতনামা বেতার কেন্দ্র, সেসময় রেডিও তেহরান আপন মহিমায় স্থান করে নিয়েছে তাদের মধ্যে। বিশেষ করে ইরান-ইরাক যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধকালীন সময় বা ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিষয়ে রেডিও তেহরান সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ বলিষ্ঠ প্রচারের কারণে অল্পদিনের মধ্যে শ্রোতাদের কাছে স্থান লাভ করে। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় শ্রোতাদের মনে এমন জায়গা দখল করেছিল যে, তারা উৎসুক হয়ে বলতো এ ঘটনায় রেডিও তেহরান কী বলেছে!

অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে রেডিও তেহরানের সাথে, সেকালে চিঠিই ছিল যোগাযোগের মাধ্যম, চিঠির বদৌলতে যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল নিবিড়ভাবে, মোটামোটা খামে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ইকো অব ইসলাম, মাহজুবাহসহ ইসলামী বিপ্লবের নানান প্রকাশনা চলে আসত ডাকযোগে যা পোস্ট অফিসে আমার ইজ্জত বাড়িয়ে দিত। রেডিও তেহরানে লেখার দরুণ ঢাকার ইরানি দূতাবাসও পাঠাতো ইসলামী বিপ্লবের  ও ইরানি স্কলারদের লেখা নানান প্রকাশনা।

এখন পৃথিবীর নানা দেশ তাদের বেতার সম্প্রচার নিয়ে নতুন করে ভাবছে। কোনো কোনো দেশ তাদের রেডিও’র মিডিয়াম ও শর্টওয়েভে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তজার্তিক সম্প্রচারের ইতি টেনেছে। বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা অনেক নামী আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকরাও তাদের বেতার সম্প্রচার বন্ধ, সংকোচন করে রেডিও শ্রোতাদের হতাশার সাগরে ডুবিয়েছে। এমন ক্রান্তিকালেও পশ্চিমা নানা বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে রেডিও তেহরান বাংলা আজও পৌঁছে যাচ্ছে শ্রোতাদের কর্ণকুহরে। বর্তমান মাল্টিমিডিয়ার যুগে প্রত্যেক বেতারেরই রয়েছে ভাষাভিত্তিক ওয়েবসাইট। রেডিও তেহরানের অনলাইন সংস্করণ পার্সটুডে বাংলা বেশ সমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইট। আমাদের একটি নিউজপোর্টালের জন্য সংবাদ/তথ্য বা ছবি সংগ্রহ করতে আমি প্রতিদিনই ঢু মারি এখানে। আমার শ্রোতা জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি কোনো বিশেষ ব্যক্তির কারণে  কোনো কোনো অনুষ্ঠান ও বেতার শ্রোতাদের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নেয়। রেডিও তেহরান বাংলা’র চিঠিপত্র বিভাগের দায়িত্বে বর্তমানে যিনি আছেন তিনি অত্যন্ত সফল হয়েছেন ভারত-বাংলাদেশের শ্রোতাদের মেলবন্ধনে আবদ্ধ করতে (জনাবের নাম নাইবা নিলাম)। আজকে তেহরান বেতারের শ্রোতারা একটা পরিবারের মত। প্রিয়জনের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে তারা অনুষ্ঠান ও তাবৎ বিষয়ে বেশ সরব। তেহরান বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান ৪০ বছরের সমৃদ্ধ একটি শ্রোতাবান্ধব প্রতিষ্ঠান। আল্লাহ তেহরান বেতারের কল্যাণ দান করুন।

পরিশেষে দুটি সুপারিশ, বাংলাদেশ বেতারের সহযোগিতায় বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে এফএম সম্প্রচারের ব্যবস্থা। বর্তমান প্রচারসময় পরিবর্তন করে বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় একটা অধিবেশন সম্প্রচার (একটি জনপ্রিয় বেতার এসময় প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।)

 

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ

উথলী বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২০

ট্যাগ