রেডিও তেহরানের শ্রোতার দৃষ্টিতে ফার্সি নববর্ষ বা নওরোজ
সর্বপ্রথমে রেডিও তেহরানের সকল কর্মকর্তা, কলাকুশলী এবং সকল শ্রোতা বন্ধুদের জানাই নওরোজের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। ‘নওরোজ’ একটি ফারসি শব্দ। এর বাংলা অর্থ ‘নতুন দিন’।
নওরোজ মূলত ইরানি জাতি ও বৃহত্তর ইরানের জনগোষ্ঠীর মধ্যে পালিত হয়ে থাকে। ইরান ছাড়াও আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া, ইরাক, কাজাখস্তান, কসোভা, কিরগিজিস্তান, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে এ উৎসব পালনের রেওয়াজ রয়েছে।
নওরোজ হলো ইরানের সবচেয়ে আনন্দঘন উৎসব। সে কারণেই এই নওরোজকে বলা হয় ঈদে নওরোজ।
ঠিক কবে নওরোজ উৎসব পালিত হয় সে বিষয়ে সবাই একমত নন। তবে কবি ফেরদৌসীর অমর কাব্য শাহনামা ও ঐতিহাসিক তাবারীর বর্ণনা অনুযায়ী- ইরানের প্রাচীন কিংবদন্তীতে উল্লেখিত বাদশাহ জামশেদ ছিলেন এ উৎসবের প্রথম আয়োজক। কেউ কেউ বলেন, ইরানের হাখামানেশীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট দ্বিতীয় সাইরাস বা কুরুশ ‘ব্যাবিলন জয়ের বছর' তথা খ্রিস্টপূর্ব ৫২৮ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় উৎসব হিসেবে ঘোষণা ও পালন করেন। পারস্য সম্রাট প্রথম দারিয়ুশ শাসনকালে উৎসব পার্সেপোলিস প্রাসাদ কমপ্লেক্স বা তাখতে জামশিদে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এই উৎসবে উপস্থিত হয়ে ইরানি সম্রাটকে নানা উপহার সামগ্রী দিতেন। এই উপহার সামগ্রী বিনিময় প্রথা এখনও চালু আছে।
নওরোজের দিন ইরানি পরিবারের সকল সদস্য নতুন পোশাকে সজ্জিত হয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগদান করে। তারা সকলে একত্রে বসে টিভি, রেডিও প্রভৃতি গণমাধ্যমে বর্ষবরণের ঘোষণা শোনার অপেক্ষায় থাকে। ঘোষণা হওয়ার পরই তারা সকলে সমস্বরে নিচের দোয়াটি পাঠ করে:
ইয়া মুকাল্লেবাল কুলুবি ওয়াল আবছার ইয়া
মুদাব্বেরাল লাইলি ওয়ান নাহার
ইয়া মুহাভ্ ভেলাল হাওলে ওয়াল আহ ওয়াল
হাভ্ ভেল হালানা ইলা আহসানিল হাল
(হে অন্তর্দৃষ্টি সমূহের বিবর্তনকারী
হে রাত ও দিনের বিবর্তনকারী
হে অবস্থা ও অবস্থাসমূহের বিবর্তনকারী
আমাদের অবস্থাকে তুমি উত্তম অবস্থায় পরিবর্তন করো)
বাংলা নববর্ষ থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নববর্ষের উৎসব যত আনন্দময় জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পালিত হোক না কেন তা নববর্ষের প্রথম দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে একমাত্র ফারসি নববর্ষ দীর্ঘ সময়জুড়ে পালিত হয়ে থাকে। কারণ নওরোজ বা নববর্ষ ইরানি জাতির সবচেয়ে বড় জাতীয় উৎসব। রাষ্ট্রীয়ভাবে ও নওরোজ বা ফার্সি নববর্ষকে সবচেয়ে বড় জাতীয় উৎসব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
নওরোজ উৎসব রেডিও তেহরানের শ্রোতাদেরও জন্য কম উৎসাহের নয়। তাদের আশা নওরোজে রেডিও তেহরানের অনুষ্ঠানসূচিতে আসবে বড় পরিবর্তন। সবার আশা ‘প্রিয়জন’ নতুন আঙ্গিকের অনুষ্ঠানমালায় সপ্তাহে দু’দিন ফিরে আসুক। আর বিজ্ঞানবিষয়ক নতুন কোনো অনুষ্ঠান নতুন অনুষ্ঠানসূচিতে শামিল হোক।
আশা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়েই মানুষের জীবন। নওরোজে নতুন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা রেখে আর একবার সকলকে ইরানি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের মত ইতি টানছি।
ধন্যবাদান্তে
বিধান চন্দ্র সান্যাল
ঢাকা কলোনী, বালুরঘাট
দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।