‘রেডিও তেহরান না থাকলে অনেক বিষয়ে ঘোর অন্ধকারেই থেকে যেত বাঙালিরা’
(last modified Sun, 20 Jun 2021 05:22:52 GMT )
জুন ২০, ২০২১ ১১:২২ Asia/Dhaka
  • ‘রেডিও তেহরান না থাকলে অনেক বিষয়ে ঘোর অন্ধকারেই থেকে যেত বাঙালিরা’

রেডিও তেহরানের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে 'আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ' আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের লেখাগুলো পার্সটুডে ডটকমে প্রকাশিত হচ্ছে। বিজয়ী ১২ জনের পাশাপাশি মানসম্মত সবার লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। আজ প্রকাশিত হলো বাংলাদেশের ঝিনাইদহের শ্রোতা মোঃ আব্দুস সেলিমের লেখা।

বাংলা ভাষীদের জন্য রেডিও তেহরান :

বিশ্বে বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এখানে শিক্ষিতের হার কম থাকায় অন্য ভাষা বোঝার লোকও নগন্য। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো নিজেদেরকে জানান দিতেই মূলত তাদের বাংলা কার্যক্রম। কিন্তু রেডিও তেহরান এর সম্পূর্ণ বিপরীত। মুসলমানদের সার্বিক বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতেই যেন রেডিও তেহরান। রেডিও তেহরান না থাকলে বিশ্ব কুটকৌশলীদের অপতৎপরতা এবং বিশ্ব মুসলিমদের প্রকৃত অবস্থাসহ অনেক বিষয়ে সম্পর্কে ঘোর অন্ধকারেই থেকে যেত বাঙালিরা।

সত্য সংবাদ পরিবেশনে রেডিও তেহরান: 

কথায় কথায় ‘বাপের বেটা সাদ্দাম’। আমেরিকা-ইরাক মিত্রতা, ইরাক কর্তৃক বিনা কারণে ইরানে হামলা, নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্রসহ সকল প্রকার যুদ্ধসামগ্রী সবই পশ্চিমাদের অপার দান। ইহুদিবাদীদের হাতের পুতুল সাদ্দামকে দিয়ে ৮ বছরব্যাপী ইরানে হামলা চালিয়ে লক্ষ লক্ষ নিরাপরাধ মানুষকে হতাহত করা হয়। বিনা কারণে ইরানিদের উপর ৮ বছর ধরে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া সাদ্দাম তখনও হিরো। শুধুমাত্র বিশ্ব মিডিয়ার অকল্যাণেই তা সম্ভব হয়েছে। একমাত্র রেডিও তেহরানের কারণেই সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ইরানের সাধারণ মানুষের করুণ দুর্দশার কথা বিশ্ববাসী তথা বাঙালিদের জানার সুযোগ হয়েছে।

সেদিন অর্থাৎ ২০১৩ সালে হঠাৎ ভুঁইফোড় আবুবকর আল বাগদাদী ও আইএস কর্মকাণ্ড। জঘন্য ও ভয়ঙ্কর ইহুদি সন্ত্রাসবাদকে ইরাক ও সিরিয়ার নিরাপরাধ জনগণের উপর চাপিয়ে দেয় পশ্চিমা ও ইহুদিবাদীরা। আইএস-এর নির্মম বর্বরতা অতীতের সকল বর্বরতাকে হার মানায়। কোথাকার কোন জাতপাতহীন ব্যক্তিকে মুসলমানদের প্রথম খলিফা আবু বকর ও প্রসিদ্ধ নগরী বাগদাদের নাম ভাঙিয়ে ইসলামী খেলাফত বলে চালিয়ে দেয়। বহু আলেম-ওলামাসহ সাধারণ জনগণ এ খেলাফতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে এজন্য যে, রাসুল (সা.) পরবর্তী সেই খেলাফত আবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল! হায়রে বিশ্ব মিডিয়া! একমাত্র রেডিও তেহরানের বদৌলতে আমরা সে সময় জানতে পারলাম যে, আইএস একটি ভয়ঙ্কর ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন। তারপর বীরের জাতি, বিপ্লবী জাতি ইরানিদের নেতৃত্বের কারণে এবং তাদের অমূল্য রক্তের বিনিময়ে ইহুদি সন্ত্রাসবাদ আইএস প্রায় নির্মুলের পথে।

ইসলাম প্রচারে রেডিও তেহরান:

বর্তমানে মুসলমানগণ যখন বিভিন্ন দল, উপদল, মাজহাবে বিভক্ত এবং একে অপরের মুখোমুখি তখন রেডিও তেহরানের বদৌলতে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষীরা রেসালত পরবর্তী ইমামতি ধারার তথা পবিত্র আহলে বায়েতের অনুসারী প্রকৃত মুসলমানদের পরিচয় লাভের সুযোগ পাচ্ছে। মহানবী (সা.)-এর জীবনের ঘটনাবলী, নবীনন্দিনী হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.) ও ইমামগণের জন্মদিবস, শহীদ দিবস ও সর্বোপরি মর্মান্তিক কারবালা হত্যাকাণ্ডের বিষয়াবলী নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে সত্যান্বেষী মানুষ অনায়াসেই প্রকৃত ইসলামের অনুসারী ও মুসলমানবেশী মুনাফিকদের স্বরূপ উদঘাটন করতে পার। তাইতো রেডিও তেহরানের কল্যাণে বিশ্বের আনাচে কানাচে পবিত্র আহলে বায়েতের অনুসারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জিহাদের ময়দানে ইসলামী ইরান ও রেডিও তেহরান:

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর থেকে অদ্যাবধি ইরান শত্রুর বহুমুখী ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন। প্রতিটি মুহূর্তে তাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অগণিত ইরানির বুকের তাজা রক্ত দিতে হচ্ছে অহরহ। শত্রুদের সন্ত্রাসী হামলা সংসদ অধিবেশন পর্যন্ত বাদ যায়নি। ইসলামী সরকারকে উৎখাত করতে এবং ইরানকে মেধাশূন্য করতে বহু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, লেখক, পরমাণু বিজ্ঞানী ও সর্বশেষ মহাবীর শহীদ কাসেম সোলাইমানির মত সমরবদিকেও হারাতে হয়েছে। বিশ্ব সন্ত্রাসীরা যখন ইরাক, সিরিয়া, ইয়মেনে, ফিলিস্তিনিসহ বিভিন্ন দেশকে তছনছ করছে এবং অবলীলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তখন ইসলামি ইরান হামাস, হিজবুল্লাহ, আনসারুল্লাহসহ বিভিন্ন প্রতিরোধকামী ও স্বাধীনতাকামী সংগঠনের পাশে থেকে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদকে মোকাবলো করে যাচ্ছে। বিশ্বমিডিয়া যখন বিশ্বসন্ত্রাসীদের পক্ষে তখন রেডিও তেহরানের কারণেই আমরা বিভিন্ন যুদ্ধের সত্য ও সঠিক তথ্য পেয়ে থাকি।

বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের দোয়ায় আরো চোখ ধাঁধানো উৎকর্ষতায় উৎকর্ষিত হবে ইসলামী ইরান এবং আরো সমৃদ্ধ হবে রেডিও তেহরান।

লেখক: মোঃ আব্দুস সেলিম, সাং: মধুগঞ্জ বাজার, উপজেলা: কালীগঞ্জ, জেলা: ঝিনাইদহ।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২০

 

 

 

ট্যাগ