মুসলিম উম্মাহ ও আরব এতিহ্যের সঙ্গে জোলানির বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
ইসরায়েলের সঙ্গে জোলানির আসন্ন বিপজ্জনক চুক্তি: নতুন ক্যাম্পডেভিড-এর ফাঁদ!
-
ইসরায়েলের সঙ্গে জোলানির আসন্ন বিপজ্জনক চুক্তি: নতুন ক্যাম্পডেভিড-এর ফাঁদ!
পার্স টুডে - একজন ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক সিরিয়ার নতুন শাসক জোলানি ইহুদিবাদী দখলদারদের সাথে এক বিপজ্জনক চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে বলেছেন: "তার শাসনামলে সিরিয়া ইসরায়েলের প্রহরী হয়ে উঠেছে এবং মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে একটি বিষাক্ত ছুরি বিদ্ধ করেছে, কিন্তু সিরিয়ার জনগণ এই বিশ্বাসঘাতকতার মুখে চুপ থাকবে না।"
আন্তর্জাতিক পত্রিকা রাই আল-ইয়ুমের প্রধান সম্পাদক ও বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক আব্দুল বারী আতওয়ান এই সংবাদপত্রের এক নতুন শীর্ষ সম্পাদকীয়টি উৎসর্গ করেছেন কথিত নিরাপত্তা চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার অজুহাতে সিরিয়ার জোলানি সরকারের কর্মকর্তা ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত সরাসরি আলোচনা বা বৈঠকের বিষয়ে।
তিনি লিখেছেন: সিরিয়ার নতুন শাসক জোলানি সম্প্রতি একটি মিডিয়া প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাত করেছেন। এতে উপস্থিতদের বেশিরভাগই ছিলেন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও আরব টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে কুয়েতের প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী সামি আব্দুল লতিফ আন-নিসফসহ আমিরাত ও সৌদি আরবের মিডিয়া-ব্যক্তিত্বরা এতে উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল মিডিয়ার লোকজনের মধ্যে জোলানির প্রথম আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি।
ইসরায়েলের সঙ্গে আপোস-রফা করতে জোলানির প্রকাশ্য সবুজ-সংকেত
আতওয়ান আরও লিখেছেন, জোলানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে দখলদার ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের চলমান আলোচনা প্রক্রিয়া জোরদারের খবর ও এইসব ছবি এমন সময় প্রকাশ হল যখন আরও আগে গত সপ্তায় বর্তমান সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আশ-শাইবানি ও দখলদার ইসরায়েলের কৌশলগত নীতি বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকে আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলার সময় জোলানি বলেছেন, সিরিয়া ও এ অঞ্চলের স্বার্থ রক্ষার জন্য যদি ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয় তাহলে সিরিয়া তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু এখানে সিরিয়ার ও আঞ্চলিক স্বার্থ বলতে কোন্ ধরনের স্বার্থ ও ফিলিস্তিনি আশা-আকাঙক্ষার স্থান এবং দেশটির পবিত্রতা বা পবিত্র স্থানগুলোর কি অবস্থা হবে তা স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন আতওয়ান। ইসরায়েলের সঙ্গে আপোস-রফা করতে জোলানির প্রস্তুতিকে আতওয়ান সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করেন। কারণ ইসরায়েলের জন্য তার নিরাপত্তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লেবানন ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর মাধ্যমে এবং ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বিপজ্জনক সমঝোতার বিস্তারিত বিবরণ
সম্ভাব্য সমঝোতার কোনো কিছু জোলানির মুখ থেকে প্রকাশ না হলেও সেসব ফাঁস করেছে ইসরাইলি মিডিয়া। ইসরাইলের চ্যানেল ১২ এইসব তুলে ধরেছে যা নিম্নরূপ:
জল, স্থল ও আকাশে পরিপূর্ণ যুদ্ধ-বিরতি!
- ইহুদিবাদী ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সিরিয়ার দিক থেকে বা অন্যান্য দেশের দিক হতে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে এমন যে কোনো পদক্ষেপ প্রতিরোধ করা।
- তুরস্ক কর্তৃক সিরিয়ার সেনাবাহিনীর পুনরায় অস্ত্র-সজ্জিতকরণ রোধ করা এবং সিরিয়ার ভূখণ্ডের ভিতরে ক্ষেপণাস্ত্র ও আকাশ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতো যেকোনো কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
- দ্রুজ সম্প্রদায়কে সহায়তা দেয়ার ও তাদেরকে অবাধে চলাচলের সুযোগ করে দেয়ার অজুহাতে অধিকৃত ফিলিস্তিন এবং দক্ষিণ সিরিয়ার সুয়েইদার মধ্যে একটি মানবিক ক্রসিং বা করিডোর স্থাপন করা।
- অধিকৃত ফিলিস্তিনের সীমান্তে যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য দক্ষিণ সিরিয়া, যেমন দারা, কুনেইত্রা এবং সুয়েইদা, বিশেষ করে গোলান মালভূমির সম্পূর্ণ অসামরিকীকরণ।
ইসরায়েলের পাহারাদার হচ্ছেন জোলানি
এই নোট অনুসারে হিব্রু মিডিয়ায় প্রকাশিত এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দ্বারা ফাঁস হওয়া এই ধারাগুলোর উপর একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা থেকে বোঝা যায় যে জোলানি সরকার শিগগিরই দখলদার ইসরায়েলের সাথে একটি নিরাপত্তা স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি প্রতিষ্ঠা করবে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এটা এমন একটি চুক্তি যার লক্ষ্য হবে ইসরায়েলকে সব দিক থেকে সুরক্ষা দেয়া এবং সিরিয়াই এই কাঠামোতে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা প্রহরীর বা পাহারাদারের অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
আব্দুল বারী বলেছেন: "রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা ক্ষেত্র যাই হোক না কেন, ইহুদিবাদী দখলদার সরকারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ লক্ষ আরব ও মুসলিম জাতিগুলো তথা গোটা মুসলিম উম্মাহ এবং বিশ্বজুড়ে মুক্তমনা মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বড় বিশ্বাসঘাতকতা।" গাজা উপত্যকায় আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যখন গণহত্যা ও অনাহার চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে নৃশংস যুদ্ধ শুরু করেছে সে সময় দখলদার সরকারের সাথে সিরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক করা ও সিরিয়াকে ইহুদিবাদী সরকারের প্রহরীতে রূপান্তরিত করা, আরব ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসের হৃদয়ে একটি বিষাক্ত ছুরি বিদ্ধ করার সমতুল্য।
সিরিয়ার জাতি জোলানির বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করবে না
পরিশেষে বলা যায় আব্দুল বারী আতওয়ান জোর দিয়ে বলেছেন: "জোলানির শাসনামলে নতুন সিরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে আমরা অবশ্যই সামনের সারিতে থাকব, এবং আমরা এই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক পরিবর্তন তথা পিছু হটাকে ও বিশ্বাসঘাতকতাকে প্রত্যাখ্যান করব ও এর বিরুদ্ধে দাঁড়াব।" কিন্তু আমাদের সান্ত্বনা এই যে, মহান সিরিয়ান জাতি যারা সকল যুদ্ধে সাহস ও শৌর্য-বীর্য নিয়ে লড়াই করেছে, হাজার হাজার শহীদকে কুরবানি দিয়েছে এবং ৮,০০০ বছরেরও বেশি সময়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গর্বিত উত্তরাধিকারী তারা এই বিশ্বাসঘাতকতার মুখে চুপ থাকতে পারে না। সিরিয় জাতি দখলদারিত্ব বিরোধী প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে এবং সমস্ত অধিকৃত আরব ভূমি, বিশেষ করে জেরুজালেম-আলকুদস, গোলান মালভূমি এবং দক্ষিণ লেবানন মুক্ত করার ক্ষেত্রে সিরিয়াকে তার আসল অবস্থানে ফিরিয়ে আনবে। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।