ইয়েমেনের চোরাবালিতে সৌদি জোটের ক্রমবর্ধমান বিপর্যয়ের রহস্য
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i89204-ইয়েমেনের_চোরাবালিতে_সৌদি_জোটের_ক্রমবর্ধমান_বিপর্যয়ের_রহস্য
ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসনের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি হয়ে সপ্তম বছর শুরু হল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের সবুজ-সংকেতে সৌদি সরকার ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ এই যুদ্ধ শুরু করে।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
মার্চ ২৬, ২০২১ ২০:৩২ Asia/Dhaka
  • ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ আন্দোলনের প্রধান সাইয়্যেদ আবদুল মালিক হুথি
    ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ আন্দোলনের প্রধান সাইয়্যেদ আবদুল মালিক হুথি

ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসনের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি হয়ে সপ্তম বছর শুরু হল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের সবুজ-সংকেতে সৌদি সরকার ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ এই যুদ্ধ শুরু করে।

সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে ১৫ দিনের মধ্যে গোটা ইয়েমেনে বিজয়ী হবে তার জোট। কিন্তু বাস্তবে এখনও সেই দিবা-স্বপ্ন দুরাশাই থেকে গেছে। বরং দিনকে দিন ইয়েমেনে বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হচ্ছে সৌদি জোট এবং এমনকি চূড়ান্ত পরাজয়ও হয়তো অপেক্ষা করছে এই জোটের জন্য। ষষ্ঠ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ইয়েমেনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা সৌদি অবস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের  ২৬টি  হামলা চালায়। 

ইয়েমেনের প্রতিরোধ যুদ্ধ এটা প্রমাণ করেছে যে বর্তমান যুগে শক্তি খাটিয়ে বা গায়ের জোরে কোনো স্বাধীন দেশকে দখল করা বা সেখানকার ক্ষমতার মসনদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিপর্যয়ের আরেকটি বড় কারণ হল এই জোটের শরিক দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও লক্ষ্যের বিভিন্নতা। আরব আমিরাত অনেক ক্ষেত্রে সৌদি সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে না। বরং দক্ষিণ ইয়েমেনে ও বন্দর এলকাগুলোতে প্রভাব আর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আমিরাতের লক্ষ্য। 

সৌদি সরকার  পলাতক ও গণ-ধিকৃত মনসুর হাদি সরকারকে ইয়েমেনের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে গিয়ে এখন দেশটির চোরাবালিতে এমনভাবে আটকে গেছে যে রিয়াদ এখন না থাকতে পারছে না ছাড়তে পারছে ইয়েমেনের মাটি। বিপর্যস্ত অবস্থায় যুদ্ধ শেষ করতে চাইলে সৌদিকে এখন অনেক বেশি ক্ষতির শিকার হতে হবে ও বেশি ছাড় দিতে হবে বলে সৌদি সরকার এখনই এ যুদ্ধ বন্ধ করতে চাচ্ছে না। অন্যদিকে সৌদি সরকার এখনও এ যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেয়নি বলে ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ আন্দোলনের প্রধান সাইয়্যেদ আবদুল মালিক হুথি গতকাল মন্তব্য করেছেন। হুথিরা সম্প্রতি যুদ্ধ-বিরতির সৌদি প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। 

ইয়েমেনে দীর্ঘ এ যুদ্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। কারণ কয়েকটি মুসলিম দেশ পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত থাকায় ইসরাইল এইসব দেশের দিক থেকে নিরাপদ থাকছে। ইসরাইল শিশু ঘাতক হিসেবে সবচেয়ে কুখ্যাতি অর্জন করলেও এখন সৌদি আরবও এক্ষেত্রে তার সমপর্যায়ে আসায় ইসরাইলের এ অপরাধ কিছুটা ঢাকা পড়েছে।

অন্যদিকে পাশ্চাত্যের শক্তিগুলো ব্যাপক পরিমাণে সৌদি জোটের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হলেও তারাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শরিক হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে নিন্দিত হচ্ছে। 

ইয়েমেন ইস্যুতে জাতিসংঘের অনিরপেক্ষতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতাও নগ্নভাবে প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু ইয়েমেনের দরিদ্র জনগণই সবচেয়ে বেশি হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে যা এই শতকের সবচেয়ে বড় মানবীয় বিপর্যয়। ইয়েমেনে সৌদি জোটের নির্বিচার হামলায় হতাহত হয়েছে ৪৩ হাজারেরও বেশি ইয়েমেনি নারী-পুরুষ ও শিশু। গৃহহারা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ ইয়েমেনি। দেশটিতে চলছে দুর্ভিক্ষ। ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে বহু শিশু। ইয়েমেনের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর বেশিরভাগই এমনভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে যে  আগ্রাসন শেষ হলেও হাজার হাজার কোটি ডলার দরকার হবে এইসব ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। মানবীয় বিপর্যয় ছাড়াও ইয়েমেনের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা হবে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬