আনসারুল্লাহ'র নয় জন শীর্ষস্থানীয় নেতা নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার শিকার
মজলুম ইয়েমেনের ওপর জুলুম করছে জাতিসংঘও!
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইয়েমেনের জনপ্রিয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন আনসারুল্লাহ'র আরও তিন শীর্ষস্থানীয় নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইয়েমেনে প্রায় সাত বছর ধরে চলছে সৌদি সরকারি বাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের আগ্রাসন।
জাতিসংঘ বার বার প্রকাশ্যেই বলে আসছে যে যুদ্ধের কারণে কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের শিকার হয়েছে ইয়েমেন। আগ্রাসীদের নির্বিচার বোমা বর্ষণে ধ্বংস হয়ে গেছে ইয়েমেনের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি অবকাঠামো। আগ্রাসন ও এর ফলে সৃষ্ট নানা সংকটের কারণে এক লাখেরও বেশি ইয়েমেনি প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও কয়েক লাখ। বাড়ি ঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শরণার্থী বা উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ ইয়েমেনি। সৌদি বোমা হামলায় ইয়েমেনি শিশু নিহত হওয়ায় জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন সৌদি সরকারকে শিশুর অধিকার লঙ্ঘনে সবচেয়ে বেশি তৎপর সরকার বলে উল্লেখ করেছিলেন।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুদ্ধ বন্ধ করা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা জাতিসংঘের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলেও বৈশ্বিক এই সংস্থা আন্তর্জাতিক অনেক সংকটেই নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখছেনা। ইয়েমেনে সংকটে জাতিসংঘ প্রকাশ্যেই আগ্রাসী সৌদি জোটের পক্ষ নিয়ে রাজনীতিকে মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গতকাল তথা দশ নভেম্বর আনসারুল্লাহ'র শীর্ষস্থানীয় আরও তিন নেতাকে নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করল। এ নিয়ে আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নয় জন শীর্ষস্থানীয় নেতা নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার শিকার হলেন।
আনসারুল্লাহর এই তিন শীর্ষস্থানীয় নেতা সামরিক কমান্ডার এবং তারা মা'রিব প্রদেশসহ রণাঙ্গনে আগ্রাসীদের মোকাবেলায় ইয়েমেনের জাতীয় ঐক্য সরকারের অনুগত সশস্ত্র বাহিনীর নানা সামরিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক কমিটির বিবৃতিতে এই তিন নেতাকে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে দাবি করা হয়েছে!
এই তিন নেতার অন্যতম হলেন আবদুল করিম গ্বামেরি যিনি আনসারুল্লাহ'র প্রতিরোধ-অভিযানগুলোর সমন্বয়ক ও মা'রিব প্রদেশের সাম্প্রতিক অভিযানগুলোর কমান্ডার। গতকালের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা কবলিত আনসারুল্লাহর আরেক নেতা হলেন ইউসুফ আলমাদানি। ইনি আনসারুল্লাহর অন্যতম প্রধান নেতা এবং কয়েকটি প্রদেশের সামরিক অভিযানের কমান্ডার। আর তৃতীয় নেতা হলেন সালেহ মিসফার (Saleh Mesfer Saleh Al Shaer) যিনি রসদ সরবরাহের বিষয়ে ইয়েমেনি জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এ ধরনের তৎপরতায় আগ্রাসী ও জালিম সৌদি জোটই লাভবান হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইয়েমেনের জাতীয় ঐক্য সরকারের সেনারা মা'রিব প্রদেশে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিজয় অর্জন করেছে এবং বহু অঞ্চল মুক্ত করেছে তারা। গোটা মা'রিব প্রদেশ হানাদার-মুক্ত হওয়ার পথে। আর তাতে রিয়াদ খুবই ভীত ও বিচলিত। আর এ অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদ আনসারুল্লাহ'র কমান্ডারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি সরকারকে রাজনৈতিক সান্ত্বনা যোগাচ্ছে। জাতিসংঘের এ ধরনের তৎপরতা শান্তির প্রতিকূল ও তাতে সৌদিরা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অপরাধযজ্ঞ জোরদারেরই উৎসাহ পাচ্ছে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১১