অলিম্পিকে হিজাব নিষিদ্ধ: ফ্রান্স সরকারের নীতির সমালোচনা করল জাতিসংঘ
(last modified Thu, 28 Sep 2023 10:13:43 GMT )
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ ১৬:১৩ Asia/Dhaka
  • জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের মুখপাত্র মার্তা হুরতাদো
    জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের মুখপাত্র মার্তা হুরতাদো

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের মুখপাত্র মার্তা হুরতাদো আগামী বছর প্যারিসে অনুষ্ঠেয় '২০২৪ অলিম্পিক গেমসে' ফরাসি ক্রীড়াবিদদের হিজাব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন।

তিনি জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, 'একজন নারী কী পোষাক পরবেন, আর কী পরবেন না সে সিদ্ধান্ত তার উপর চাপিয়ে দেয়া কারোরই উচিত নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান অনুসারে, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মতামতের উপর বিধিনিষেধ, যেমন পোশাকের ধরন, শুধুমাত্র তখনই প্রয়োগ করা যেতে পারে যদি এটি জননিরাপত্তা বা সুস্থ সমাজের জন্য হুমকি হয়। কিন্তু ইসলামি শালিন পোষাক কোনো হুমকিও নয় কোনো সামাজিক সমস্যাও তৈরি করে না।'

জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা এমন সময় হিজাব ইস্যুতে ফ্রান্স সরকারের নীতির সমালোচনা করলেন যখন ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রী আমেলি আউদিয়া ক্যাস্টেরা সম্প্রতি ফরাসি মুসলিম নারীদের অলিম্পিক গেইমসে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেন। তিনি দাবি করেন, 'অলিম্পিক গেইমস চলাকালীন হিজাব পরলে তার মধ্য দিয়ে মূলত ধর্মীয় প্রতীক ফুটে ওঠে এবং ফ্রান্স ধর্মান্তরিত হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়'। এ ছাড়া, হিজাব পড়লে ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষভামূর্তী ক্ষুন্ন হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

হিজাব নিয়ে ফরাসি ক্রিড়ামন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে ফরাসি মুসলিম ক্রীড়াবিদদের পক্ষ  থকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্যারিস ইতিমধ্যেই ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মেয়েদের স্কুলে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছে।

ফ্রান্সে গির্জা ও রাষ্ট্রকে পৃথক রাখার যে আইন রয়েছে তা ফরাসি ভাষায় 'লে-ল্যসিটে' নামে পরিচিত। এ আইন ধর্মনিরপেক্ষতার একটি চরম রূপ। এ আইন অনুসারে, ধর্ম রাষ্ট্রীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না কিন্তু ধর্মীয় বিষয়ে সমস্ত পাবলিক স্থান ও অফিস থেকে যাবতীয় ধর্মীয় প্রতীক অপসারণের চেষ্টা করবে সরকার। স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় এবং খেলাধুলার অনুষ্ঠানে হিজাব ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এই বিতর্কিত আইন ও চিন্তাধারারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ফ্রান্সে, ধর্মনিরপেক্ষ আইনের লঙ্ঘনের কারণে ধর্মীয় প্রতীকসহ স্কুল এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়া নিষিদ্ধ এবং এই আইনের একই অজুহাতে ২০০৪ সাল থেকে সরকারী স্কুলগুলোতে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে, ফ্রান্সের ডানপন্থী দলগুলো মুসলিম মেয়েদের  মাথায় স্কার্ফ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিলেও বামপন্থী রাজনীতিবিদরা মুসলিম নারী ও মেয়েদের অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ফরাসী ক্রীড়াবিদদের হিজাব পরার অধিকার নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সমালোচনা আসলে এই দেশে স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের সমান অধিকারের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে, ইউরোপের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যালঘুদের আবাসস্থল ফ্রান্সের মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরিধানের কারণে নানা ধরনের চাপ ও বিধিনিষেধের শিকার হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বাধা আরোপ করা হয়েছে শিক্ষাকেন্দ্রে হিজাব পরার কারণে। ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটাল ২০০৩ এদেশের স্কুলে পর্দানশীল মেয়েদের স্কার্ফ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সময় দাবি করেছেন যে ইসলামিক হিজাব, শিক্ষাক্ষেত্রে ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ আইন লঙ্ঘন করে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আসলে ফরাসি সরকারের ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক কোনো ধারণা  নই আর এ কারণেই তারা স্কুলে এবং এরপর এখন অলিম্পিক গেমসে ইসলামিক হিজাব নিষিদ্ধ করাসহ ইসলামবিরোধী পদক্ষেপকে  সমর্থন করেছে।

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ