রাশিয়া-ভারত সহযোগিতা সম্প্রসারণ কি ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগ নীতির ফসল?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151418-রাশিয়া_ভারত_সহযোগিতা_সম্প্রসারণ_কি_ট্রাম্পের_চাপ_প্রয়োগ_নীতির_ফসল
পার্সটুডে- ট্রাম্প প্রশাসন যখন মস্কোর সাথে সম্পর্ক কমাতে নয়াদিল্লির উপর চাপ দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো সফরে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করেছেন।
(last modified 2025-08-26T11:51:57+00:00 )
আগস্ট ২৬, ২০২৫ ১৬:১৫ Asia/Dhaka
  • • রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের  সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
    • রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

পার্সটুডে- ট্রাম্প প্রশাসন যখন মস্কোর সাথে সম্পর্ক কমাতে নয়াদিল্লির উপর চাপ দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো সফরে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করেছেন।

পার্সটুডে জানিয়েছে, ২১শে আগস্ট প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে আন্তঃসরকারি বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা কমিশনের ভারতীয় পক্ষের চেয়ারম্যান সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

এর একদিন আগে, জয়শঙ্কর এবং মান্তুরভ মস্কোতে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি যৌথ কমিশনে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর, রাশিয়ার প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন: 'গত পাঁচ বছরে রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়ার তিনটি বৃহত্তম বৈদেশিক বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে ভারত অন্যতম। রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বাণিজ্য জাতীয় মুদ্রা ব্যবহার করে পরিচালিত হয়।' রাশিয়ার প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী মান্তুরভ আরো বলেন, 'রাশিয়া এবং ভারত যৌথভাবে উত্তর সমুদ্র রুট এবং উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোর তৈরি করতে চায়। আমরা আশা করি যে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানি ক্ষেত্রে রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যে সহযোগিতা প্রসারিত হবে, যার মধ্যে রয়েছে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প'।

জয়শঙ্করের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও জোর দিয়ে বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থান গুরুত্ব পাচ্ছে, বিশেষ করে একটি নতুন, বস্তুনিষ্ঠ বহুমেরু কেন্দ্রিক ব্যবস্থা স্থাপত্য গঠন। এই নতুন বাস্তবতায়, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, ব্রিকস এবং জি-২০ এর মতো ফোরামগুলো ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করছে।"

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাশিয়ার তেল কেনার অজুহাতে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের অভূতপূর্ব হুমকি এবং চাপের কথা উল্লেখ করে বলেন: "রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার অভিযোগে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ও চাপে ভারত বিস্মিত, কারণ ওয়াশিংটন এর আগে বিশ্ব বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উপর জোর দিত।" ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেন যে চীন বা ইউরোপের মতো ভারত রাশিয়ার তেল বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের বৃহত্তম ক্রেতা নয় এবং আমরা এমন একটি দেশ যার সম্পর্কে আমেরিকানরা গত কয়েক বছর ধরে বলে আসছে যে রাশিয়া থেকে তেল কিনে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। তিনি বলেন, "সত্যি বলতে, মার্কিন যুক্তিতে আমরা খুবই বিস্মিত।

ভারতীয় কর্মকর্তার বক্তব্য থেকে আবারও বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ইস্যুতে ওয়াশিংটনের দ্বৈত নীতির পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সাথে আমেরিকার আধিপত্যবাদী এবং হুমকিমূলক আচরণের প্রকাশ পেয়েছে। বাস্তবতা হল, রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় অব্যাহত থাকার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক চাপ সত্ত্বেও, ভারত বিভিন্ন মাত্রায় মস্কোর সাথে সম্পর্ক সম্প্রসারণের উপর জোর দিয়ে চলেছে এবং ওয়াশিংটনের হুমকির কাছে আত্মসমর্পণ করেনি।

বলা যায়, রাশিয়া-ভারত সহযোগিতার সম্প্রসারণ মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ এবং ভারী শুল্ক আরোপে প্রতিক্রিয়া। ভারত-রাশিয়ার সহযোগিতা বিস্তারের কারণগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:  

- ভারতীয় পণ্যের উপর মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি: ট্রাম্প প্রশাসন ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে, যা বাণিজ্য উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং ভারতকে ওয়াশিংটনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের, বিশেষ করে রাশিয়া এবং চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে বাধ্য করেছে।

- ওয়াশিংটনের চাপের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরোধ: নয়াদিল্লি কেবল পিছু হটেনি, বরং রাশিয়া এবং চীনের সাথে তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্রুততর গতিতে প্রসারিত করেছে। এই পদক্ষেপ ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বজায় রাখার দৃঢ় সংকল্পকে প্রতিফলিত করে।

- রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়: ভারত রাশিয়ার তেলের অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ক্রয়গুলিকে ইউক্রেনের যুদ্ধের অর্থায়ন হিসেবে দেখছে এবং অর্থনৈতিক চাপের মাধ্যমে ভারতকে এই পথ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। তবে, ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে পশ্চিমাদের "দ্বৈত নীতি"র উদাহরণ বলে মনে করেছে।

- জ্বালানি ও পরিবহন সহযোগিতার উন্নয়ন: রাশিয়া ও ভারতের জ্বালানি ক্ষেত্রে যৌথ প্রকল্প রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আর্কটিকের সম্পদ আহরণ এবং উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোরের উন্নয়ন।

সামগ্রিকভাবে, মনে হচ্ছে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের সম্প্রসারণকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে যার লক্ষ্য পশ্চিমাদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা এবং একতরফা মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা, বিশেষ করে ট্রাম্পের আমলে। এই সহযোগিতাগুলি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই প্রসারিত হচ্ছে না বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে, যা বিশ্ব ব্যবস্থার বহুমুখীকরণ এবং এশিয়ায় ওয়াশিংটনের প্রভাব হ্রাস করার উপর জোর দেওয়া।#

পার্সটুডে/এমআরএইচ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।