ট্রাম্প এবং শি'র সাক্ষাৎ; চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান হবে?
-
ট্রাম্প এবং শি'র সাক্ষাৎ
পার্সটুডে-দক্ষিণ কোরিয়ায় APEC শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের প্রেসিডেন্টগণ দেখা করেছেন এবং বেশ কিছু চুক্তি করেছেন।
ছয় বছরের মধ্যে এটাই দু'নেতার মধ্যে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ। কিন্তু কানাডার প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবর্তিত আচরণ এই বাণিজ্য-যুদ্ধ বিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
পার্সটুডে আরও জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় APEC শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেখা করেছেন। ৩০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার একটি বিমান ঘাঁটিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রায় ১০০ মিনিট স্থায়ী হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, এই বৈঠকের ফলে ফেন্টানাইলের ওপর মার্কিন শুল্ক ২০ থেকে ১০ শতাংশে হ্রাস, বিরল মৃত্তিকার চীনা রপ্তানি পরণ্যর ওপর নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে এক বছরের জন্য স্থগিত করা এবং চীনও মার্কিন সয়াবিন ক্রয় পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন এই চুক্তি তার তীব্রতা কমাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইল মাদক পাচারের অজুহাতে চীনা পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করেছেন। চীনও সয়াবিন এবং বিরল মাটির ধাতুর উপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যার ফলে মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চীনা রপ্তানিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চাপ, যার মধ্যে ৫ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ২ লাখ কর্মসংস্থান হ্রাস, সেইসাথে সেমিকন্ডাক্টর এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য বিরল মাটির জরুরি প্রয়োজনীয়তা, ট্রাম্পকে অবশেষে চীনের সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেছে। আসন্ন ২০২৬ সালের নির্বাচনে তার দলের সম্ভাবনা যেন বৃদ্ধি পায় সেটাও ছিল এই চুক্তির একটা নেপথ্য কারণ।
অবশ্যই, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মূলধন হারিয়ে যাওয়া রোধ এবং লিথিয়াম ব্যাটারির মতো কিছু উন্নত শিল্পে তার আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও চীনের এই ধরনের চুক্তির প্রয়োজন ছিল, তবে কানাডার সাথে বাণিজ্যের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণের পরিবর্তন চীনের জন্য একটি জাগরণের সংকেত। ট্রাম্প, যিনি তার প্রথম মেয়াদে USMCA (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো কানাডা চুক্তি) কে "সর্বকালের সেরা চুক্তি" বলে অভিহিত করেছিলেন, ২০২৫ সালে USMCA-এর অন্য দুই সদস্য, কানাডা এবং মেক্সিকোর ওপর ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং অটোমোবাইলের উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এরপর, কানাডার অন্টারিও প্রদেশের প্রচারণার কারণে শুল্কের বিরুদ্ধে রিগ্যানের কড়া কণ্ঠস্বরের কারণে ট্রাম্প আলোচনা বন্ধ করে দেন এবং কানাডার ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করেন।
এই প্রবণতা চুক্তির ব্যাপারে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির অভাবের বিষয়টি প্রমাণ করে। অতএব, এটা খুব নিশ্চিত নয় যে দুই দেশের নেতাদের স্বাগত বক্তব্য এবং পরবর্তীকালে প্রধান বিতর্কিত বিষয়গুলোতে চুক্তি দীর্ঘকাল ধরে চলবে কিংবা ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনার দ্বারা প্রভাবিত হবে না। বিশেষ করে "আমেরিকা প্রথম"-এই স্লোগান বাস্তবায়নের জন্য ট্রাম্পের পরস্পরবিরোধী এবং তাড়াহুড়োপূর্ণ আচরণ বিবেচনায় নিতে হবে কেননা অন্যদের স্বার্থ উপেক্ষা করার ইতিহাস রয়েছে ট্রাম্পের।#
পার্সটুডে/এনএম/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।