এপ্রিল ১৬, ২০২২ ১৬:৩০ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা তওবার গুরুত্ব ও নানা ধরণ এবং তওবার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু কথা বলেছি। ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী বান্দার প্রাপ্য অধিকার মহান আল্লাহও ক্ষমা করতে পারেন না।

তাই আমরা যেন মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সতর্ক থাকি। মধ্যরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করলে মহান আল্লাহ আমাদের নানা পাপের ব্যাপারে তওবা কবুল করবেন বলে আশা করা যায়। কিন্তু কোনো ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘন করে থাকলে প্রথমত তার অধিকার বা প্রাপ্য ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই ব্যক্তি যদি মারা যান তাহলে সেই প্রাপ্য তার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের কাছে দিতে হবে এবং প্রাপ্য সম্পদ ফেরত দিতে অসমর্থ হলে তাদের কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। কারো  গিবত করে থাকলে সে জন্যও ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা চাইতে গেলে মহাবিপত্তির আশঙ্কা থাকলে আল্লাহর কাছে তার জন্য ক্ষমা চাওয়া, তার জন্য দরুদ পাঠ ও নফল নামাজ পড়া এবং তার নামে দান খয়রাত করা হচ্ছে এ সংক্রান্ত পাপ থেকে তওবার অন্যতম শর্ত বা পদ্ধতি। আর এ ধরনের পাপের জন্য আল্লাহর কাছেও ক্ষমা চাইতে হবে।

মহানবী(সা) বলেছেন, পবিত্র রমজানে সর্বোত্তম আমল হল পাপ না করা। রমজান বা অন্য যে কোনো সময় আমরা যত ভালো কাজই করি না কেন পাশাপাশি যদি নানা পাপে জড়িয়ে পড়ি তাহলে পুণ্যের খাতা শূন্য হতে বাধ্য। মনে রাখতে হবে আমরা যখনই পাপ করি তখনই এক ধরনের শির্কে জড়িত হই এবং রমজান মাসে পাপ করা মানে মহান আল্লাহর প্রদত্ত ভোজ-সভা থেকে নিজেকে বের করে কদর্যতা বা দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে প্রবেশ করা!  আমরা অনেকেই পরচর্চা ও গিবতের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ  নবী করিম (সা.) বলেছেন : ‘রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ অপর কোন মুসলমানের গীবত না করে ততক্ষণ সে আল্লাহর ইবাদাতে থাকে যদিও সে নিদ্রিত হয়।’ কাফী, চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৬৪। মহানবী (সা.) বলেন : ‘রোজাদারের নিদ্রাও ইবাদত এবং তার শ্বাস-প্রশ্বাস তাসবীহ।’ বিহারুল আনওয়ার : ৯৩তম খণ্ড, পৃ. ২৪৮। হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘রোজাদার ব্যক্তির নিদ্রা হচ্ছে ইবাদত, তার নীরবতা হচ্ছে তাসবীহ এবং তার দোয়া আল্লাহর দরবারে মনজুর হয়ে থাকে এবং তার আমল দ্বিগুণ হয়ে থাকে। আর নিশ্চয়ই রোজাদার ব্যক্তির জন্য ইফতারের সময় এমন একটি দোয়া রয়েছে যা প্রত্যাখ্যাত হয় না।’- বিহারুল আনওয়ার : ৯৩তম খণ্ড, পৃ. ৩৬০। 

আগামীকাল ১৫ ই রমজান বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র বড় নাতি হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)'র পবিত্র জন্ম-বার্ষিকী। মুসলিম বিশ্বের যোগ্য ইমাম হিসেবে তাঁকে গড়ে তুলেছিলেন স্বয়ং বিশ্বনবী (সা.), আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.)। তাঁর জন্ম হয়েছিল মদীনায় হিজরি তৃতীয় সনে ও মুয়াবিয়ার ষড়যন্ত্রে শহীদ হন হিজরি ৫০ সনে। তিনি সমাহিত হন মদীনার জান্নাতুল বাকিতে।

মহানবী (সা.) প্রিয় এই নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করা ছাড়াও তাঁর সঙ্গে খেলতেন। একবার তিনি এই নাতির জন্য আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করে বলছিলেন: হে আল্লাহ! আমি হাসানকে ভালবাসি, তাই আপনিও তাদের ভালবাসুন যারা হাসানকে ভালবাসে। মহানবী আরো বলেছেন, যারাই হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসে আমিও তাদের ভালবাসি, আর আমি যাদের ভালবাসি আল্লাহও তাদের ভালবাসেন, আর আল্লাহ যাদের ভালবাসেন তাদের বেহেশত দান করবেন এবং যারা হাসান ও হুসাইনের সঙ্গে শত্রুতা রাখে তাদেরকে আমিও আমার শত্রু মনে করি, ফলে আল্লাহও তাদের শত্রু হন, আর আল্লাহ তার শত্রুকে জাহান্নামে পাঠাবেন। 

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন: হাসান ও হুসাইন বেহেশতি যুবকদের সর্দার। এরা দু' জন আমারই সন্তান। তিনি আরো বলেছেন: হাসান ও হুসাইন-দু'জনই মুসলমানদের ইমাম বা নেতা, তা তাঁরা তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে বিপ্লব করুক বা নাই করুক কিংবা ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক।

সমর্থকদের নিষ্ক্রিয়তা ও আদর্শিক বিচ্যুতিসহ নানা দিক থেকে পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল থাকায় ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, ইমামের প্রধান সেনাপতিসহ অনেকেই ভেতরে ভেতরে মুয়াবিয়ার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত রাখলে ইসলাম পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত এবং সুযোগ-সন্ধানী রোমানরা বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে নিত। এ ছাড়াও এ চুক্তির ফলে মুয়াবিয়ার প্রকৃত চেহারা জনগণের কাছে তুলে ধরা সহজ হয়েছিল।

ইমাম হাসান (আ) কয়েক বার তাঁর সম্পদের অর্ধাংশ ও পুরো অংশ দান করেছেন দরিদ্রদের। তিনি অন্তত ২৫ বার পায়ে হেঁটে হজ করেছেন।

 ইমাম হাসান (আ) বলেছেন, নিশ্চয়ই কল্যাণে প্রবেশে সক্ষম চোখ হল পূর্ণ-দৃষ্টির চোখ, সতর্কবাণী শুনে তা থেকে লাভবান-হওয়া কানই হল সবচেয়ে শ্রবণ-সক্ষম কান এবং দ্বিধা-সংশয় থেকে মুক্ত অন্তরই হল নিখুঁত অন্তর। 

মহান আল্লাহ আমাদের জন্য কুরআনের এবং মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের  অনুসারী হওয়ার পথ সহজ করে দিন এই মহাপুরুষদের শানে দরুদ পাঠানোর বরকতে।

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।