মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান বলেই অস্তিত্ব জগতের প্রকৃত সুলতান
আসমাউল হুসনা-৯০ (সুলতান নামের তাৎপর্য)
মানুষ দুনিয়ার বুকে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে আল্লাহর যোগ্য প্রতিনিধি হতে হলে এবং মহান আল্লাহর সত্যিকারের অনুরাগী হতে হলে তাঁর নামগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে।
প্রকৃত খোদা-প্রেমিকরা জানেন কখন ও কোন অবস্থায় মহান আল্লাহ'র কোন্ কোন্ নাম-এর শরণাপন্ন হতে হবে। মহান আল্লাহর পবিত্র নামগুলো কেবল এক-একটি শব্দ নয় বরং ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। বিভিন্ন সময়ে এইসব নামের প্রকাশ ও বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত এমনই আরেকটি নাম সুলতান سُلْطَانُ । এর অর্থ কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা। মহান আল্লাহ হচ্ছেন নিরঙ্কুশ তথা সর্বময় কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। তিনি সর্বশক্তিমান বলেই অস্তিত্ব জগতের প্রকৃত সুলতান।
অবশ্য আরবি ভাষায় সুলতান বলতে কোনো রাষ্ট্রের প্রধান শাসক বা বাদশাহকেও বোঝায়। ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যে সম্রাট সুলতান উপাধি ব্যবহার করেন তিনি হলেন গজনির সম্রাট সুলতান মাহমুদ। এরপরে অন্য বাদশাহ বা সম্রাটরাও ধীরে ধীরে এই উপাধি ব্যবহার শুরু করেন। অটোম্যান বা উসমানি তুর্কি সাম্রাজ্যের ও ইরানের সাফাভি বংশের শাসকরা সুলতানুল আযম, সুলতানুল আদেল এবং সুলতানুল ইসলাম ও মুসলিমিন –এইসব উপাধি ব্যবহার করেছেন।
সুলতানের আরেকটি অর্থ দলিল বা প্রমাণ। অনেকে মনে করেন জাগতিক বিষয়ে বিজয় ও কর্তৃত্ব বোঝাতে সুলতান শব্দটি ব্যবহার করা হলেও যখন আধ্যাত্মিক বিষয়ে সালতানাত (তথা ক্ষমতা ও শক্তি) শব্দ ব্যবহার করা হয় তখন আসলে দলিল-প্রমাণ তথা হুজ্জাত ও বুরহানের অর্থই প্রকাশ পায়।
পবিত্র কুরআনে সুলতান নাম বা শব্দ মোট ৩৭ বার এসেছে। কুরআনের ২৫টি সুরায় বিভিন্ন রূপে এই নাম বা শব্দ দেখা যায়, এসবের মধ্যে ১৪ টি ক্ষেত্রে তা বুরহান, হুজ্জাত ও দলিলের সমার্থক অর্থবোধক। যেমন, সুরা নাম্ল্-এর ২১ নম্বর আয়াতে মহা-সম্রাট হযরত সুলাইমান নবীর (আ) দরবারে হুদহুদ পাখির অনুপস্থিতির বিষয়ে এই মহান নবীর মন্তব্যে দলিল বা কারণ অর্থে সুলতান শব্দের উল্লেখ দেখা যায়। তিনি বলেছেন, হুদহুদ পাখি যদি তার অনুপস্থিতির ব্যাপারে স্পষ্ট দলিল দেখাতে না পারে তাহলে তাকে অবশ্যই কঠিন শাস্তি দেব অথবা তাকে জবাই করব!
পবিত্র কুরআনে সুলতান বলতে কখনও মুজিযা বা অলৌকিক ঘটনাকেও বোঝানো হয়েছে। যেমন, পবিত্র কুরআনের ৫১ নম্বর সুরা তথা সুরা যারিআত-এর ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: এবং নিদর্শন রয়েছে মূসার বৃত্তান্তে; যখন আমি তাকে সুস্পষ্ট মুজিযা বা সুলতানসহ ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছিলাম।–
এখানে সেই ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যখন মুসা নবীর লাঠি সাপ হয়ে ফেরাউনের যাদুকরদের কৃত্রিম সাপ তথা রশিগুলোকে খেয়ে ফেলেছিল। মহান আল্লাহর নবী হওয়ার ওই স্পষ্টতম প্রমাণ দেখে যাদুকররা সিজদা দিয়ে ও তওবা করে মহান আল্লাহ আর মুসার নবুওতের প্রতি ঈমান আনে। পবিত্র কুরআনের কোনো কোনো আয়াতে সুলতান শব্দ বা নামের পর মুবিন শব্দটি এসেছে। মুবিন অর্থ স্পষ্টকারী বা প্রকাশ্যকারী। এ দুই শব্দ পাশাপাশি আসলে তা মু'জিযার অর্থ বহন করে। আবার কখনও কুরআনের আয়াতে সুলতান শব্দের পর নাসির বা সাহায্যকারী শব্দটি এসেছে। যেমন, পবিত্র কুরআনের ১৭ নম্বর সুরা তথা সুরা আসরার ৮০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
এবং হে রাসুল আপনি বলুন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রত্যেক বিষয়ে সত্য ও কল্যাণের সাথে প্রবেশ করান এবং (সেখান থেকে) সত্য ও কল্যাণের সাথে বহির্গত করান, আর আমার জন্য আপনার পক্ষ থেকে সাহায্যকারী ক্ষমতা বা আধিপত্য ও প্রমাণ তথা সুলতানান নাসির দান করুন।’ -এ আয়াত থেকে স্পষ্ট আমাদের প্রত্যেক বিষয়ে সততা বজায় রাখা জরুরি এবং এমন সাহায্য জরুরি যাতে আমরা কখনও সত্য থেকে বিচ্যুত না হই ও মিথ্যার দিকে ঝুঁকে না পড়ি।
সুরা আর-রাহমান-এর ৩৩ নম্বর আয়াতেও সুলতান শব্দের উল্লেখ লক্ষণীয়। এ বাক্যে মহান আল্লাহ বলছেন: হে জিন ও মানবকুল, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রান্ত ও মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণের হাত বা সীমানা অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু খোদা-প্রদত্ত ক্ষমতা বা ছাড়পত্র তথা সুলতান ছাড়া তোমরা কখনও তা অতিক্রম করতে পারবে না।– অন্য কথায় মানুষ কখনও মহান আল্লাহর রাজ্যের সীমানা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম নয়। মানুষ যেখানেই যাক না কেন তা মহান আল্লাহর রাজ্যের আওতাধীন।
আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী-আ. যেমনটি দোয়া কুমাইলে বলেছেন,
হে আল্লাহ! বিশাল তোমার সাম্রাজ্য বা সালতানাত তথা কর্তৃত্ব (আল্লাহুম্মা আযুমা সুলতানুকা) এবং মহিমান্বিত তোমার মর্যাদা এবং তোমার পরিকল্পনা দৃশ্যাতীত। তোমার ক্ষমতা স্পষ্ট, তোমার শক্তি সবকিছুর উপর বিজয়ী, তোমার কর্তৃত্ব সর্বব্যাপী এবং অসম্ভব তোমার সাম্রাজ্য বা হুকুমাত থেকে পলায়ন।
যারা মহান আল্লাহর সুলতান নাম সম্পর্কে সচেতন তারা কখনও পাপের ধারে কাছেও যাওয়ার মত দুঃসাহসী হবে না। কারণ, তারা জানেন মহান আল্লাহর কর্তৃত্ব, রাজত্ব ও নজরদারির সীমানার আওতামুক্ত কোনো স্থান বা কোনো সময় বলতে কিছু নেই। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।