জুলাই ০৪, ২০২৩ ২০:১০ Asia/Dhaka

হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা পবিত্র কুরআন ও ইসলামী আদর্শের আলোকে সর্বকালের সেরা নারী।

মহান আল্লাহ হযরত ফাতিমাকে প্রাচুর্য বা কাউসার বলে উল্লেখ করে সুরা নাজিল করেছেন এবং হযরত ফাতিমার মত অতি বড় তথা মহা-নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে মহানবীকে বিশেষ নামাজ আদায়ের ও কুরবানির নির্দেশ দিয়েছেন।ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র) বলেছেন,

'একজন মানুষের যত মহত গুণ থাকা উচিত সেসবই হযরত ফাতিমার মধ্যে ছিল প্রোজ্জ্বল। তিনি কোনো সাধারণ নারী ছিলেন না। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক নূরের অধিকারী ঐশী নারী ও সকল অর্থে একজন পরিপূর্ণ ইনসান। গুণাবলীর দিক থেকে তিনি ছিলেন মহানবীর এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের গুণাবলীর সমপর্যায়ের। যে কোনোভাবেই বর্ণনা করা হোক না কেন, আসলে বর্ণনার মাধ্যমে তাঁর সব প্রশংসা তুলে ধরা সম্ভব নয়। ফাতিমার সম্পর্কে নবী পরিবার থেকে যেসব বর্ণনা এসেছে সেসবই ছিল শ্রোতাদের বোধগম্যতার মাত্রা-নির্ভর। সাগরকে কি একটা কলসিতে রাখা যায়? অন্যরাও তাঁর সম্পর্কে যা যা বলেছেন সেসবই তাদের অনুধাবন ক্ষমতার আলোকেই বলেছেন, তাঁর প্রকৃত মর্যাদা বা উচ্চতার সমপর্যায়ের নয় সেসব প্রশংসা।'

অনেকেই মনে করেন মহানবীর (সা) কন্যা হওয়ার কারণেই হযরত ফাতিমার মর্যাদা এমন উচ্চ পর্যায়ের। অথচ মহানবীর (সা) অন্য কন্যাও ছিলেন হযরত উম্মে কুলসুম, রোকাইয়া ও যাইনাব নামের! কিন্তু মহানবী (সা) তাঁদের কাউকে 'আমার শরীরের অংশ' বলে উল্লেখ করেননি। কেবল হযরত ফাতিমা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'ফাতিমা আমার দেহের অংশ, সে আমার হৃদয়। সে আমার পিঠের দুই প্রান্তের মাঝখানে অবস্থিত আত্মা। যে কেউ তাকে কষ্ট দিবে সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল। আর যারা আমাকে কষ্ট দিল তারা আল্লাহকেই কষ্ট দেয়!'অন্য কথায় নবী-কন্যা হওয়ার কারণেই ফাতিমা অনন্য সম্মানের অধিকারী তা ঠিক নয়, বরং তিনি আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুরাগী, পরহিজগার, আরেফ ও দাসী বলেই এমন মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। হযরত ফাতিমার মহতী নানা গুণ ও নৈতিক আচরণের অনন্য সুরভী চিরকাল মানবজাতিকে বিমুগ্ধ করে রাখবে এবং তাঁর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ বাড়তেই থাকবে, বাড়তে থাকবে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যাও।

হযরত ফাতিমা বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার পর থেকেই মহানবীর কাছে তাঁর এই কন্যার বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে কুরাইশদের গণ্যমান্য ও নেতৃস্থানীয় অনেকের পক্ষ থেকে। কিন্তু মহানবীর (সা) জবাব ছিল এই যে তিনি এ বিষয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। একদিন জিবরাইল ফেরেশতা মহানবীর (সা) কাছে এসে জানান যে মহান আল্লাহ বলেছেন, যদি আলীকে ফাতিমার জন্য সৃষ্টি না করতাম তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত ফাতিমার স্বামী হওয়ার উপযুক্ত কোনো পুরুষ পাওয়া যেতো না!হযরত আলীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রাক্কালে দরিদ্র হযরত আলীর সম্পদ বলতে ছিল কেবল জিহাদের একটি তরবারি, একটি বর্ম এবং একটি উট যা দিয়ে তিনি মদিনার বাগানগুলোতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু বাহ্যিক সম্পদের প্রতি হযরত ফাতিমার কোনো আকর্ষণ ছিল না। বরং হযরত আলীর উচ্চ পর্যায়ের ঈমান, সাহসিকতা, বীরত্ব ও মহানুভবতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েই তিনি হযরত আলীকে বিয়ে করার খোদায়ি নির্দেশ মেনে নেন।

'যদি আলীকে ফাতিমার জন্য সৃষ্টি না করতাম তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত ফাতিমার স্বামী হওয়ার উপযুক্ত কোনো পুরুষ পাওয়া যেতো না!'

 

আল্লাহর প্রিয়ভাজন মুমিন হওয়ার অন্যতম শর্ত হল অল্পে তুষ্টি। হযরত ফাতিমা ছিলেন এর প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ বিষয়টি ইহকাল ও পরকালীন আত্মিক প্রশান্তি, মুক্তি ও সৌভাগ্যের নিয়ামক।  মহানবী (সা.) হযরত ফাতিমার বিয়ের রাত্রির জন্যে একটি পোশাকের ব্যবস্থা করেন। কারণ হযরত ফাতিমার পরনের পোশাকে তালি দেয়া ছিল। এমন সময় একজন ভিক্ষুক দ্বারে কড়া নাড়ে। পরিধানের জন্যে একটি জামা ছিল তার প্রার্থনা। হযরত ফাতিমা তাঁর পরনের তালি দেয়া কাপড়টি দান না করে বিয়ের সেই নতুন পোশাকই দান করেন ।  কারণ তিনি জানতেন পবিত্র কুরআনের এই আয়াত যেখানে বলা হয়েছে : তোমরা যা ভালবাস তা থেকে দান না করা পর্যন্ত কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। (সুরা আলে ইমরান, ৯২)

হযরত সালমান ফারসি একবার হযরত ফাতিমার পরনে তালি দেয়া কাপড় দেখে ভীষণ কষ্ট পেয়ে বলেন : হায়! রোমান ও পারস্য সম্রাটদের কন্যারা স্বর্ণের সুতাযুক্ত রেশমি কাপড় পরিধান করে ও স্বর্ণের পালঙ্কে বসে অথচ সর্বোচ্চ গৌরবের অধিকারী মুহাম্মদ (সা.) কন্যার পরনে পশমি আবা,যার বারো স্থানে রয়েছে তালি! হযরত ফাতিমা তখন বললেন, হে সালমান! মহান আল্লাহ সুন্দর পোশাক ও স্বর্ণের আসনগুলো আমার জন্য রেখেছেন বিচার দিবসের জন্য।

হযরত ফাতিমা (সা) স্ত্রী হিসেবে হযরত আলীর প্রতি ছিলেন অত্যন্ত দয়ার্দ্র এবং তাঁর জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষায় নিবেদিত। তাই হযরত ফাতিমার সঙ্গে মহান আলীর বিয়ের কিছুকাল পর মহানবী (সা) ফাতিমার আচরণের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মহান আল্লাহর আনুগত্যের পথে আমি তাঁকে সর্বোত্তম সাহায্যকারী হিসেবে পেয়েছি।

হযরত আলীর সঙ্গে সংসার শুরু করার সময় সাংসারিক কাজের বিষয়ে বাবার পরামর্শ নিতে এসেছিলেন হযরত ফাতিমা। মহানবী সা. ঘরোয়া কাজগুলো ফাতিমাকে ও বাইরের কাজগুলো আলীকে সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন। এই শ্রম-বিভাজনের বিষয়ে হযরত ফাতিমা বলেন, এই শ্রম-বিভাজনের পরামর্শে আমি যে কত বেশি আনন্দিত হয়েছি তা একমাত্র আল্লাহই জানেন! 

 এ ছাড়াও মহানবী (সা) হযরত ফাতিমাকে বলেছিলেন যখনই ঘরের কাজে ক্লান্তি অনুভব করবে তখন আল্লাহর প্রশংসাসূচক  কয়েকটি বাক্যাংশ বা বাক্য উচ্চারণ করবে, ফলে কাজকর্ম সহজ হয়ে যাবে। সেই তাসবিহগুলো হল: ৩৪ বার আল্লাহু আকবর বলা যার অর্থ আল্লাহ সবচেয়ে বড়, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ বলা যার অর্থ আল্লাহরই সব প্রশংসা এবং ৩৩ বার সুবহানআল্লাহ বলা যার অর্থ মহান আল্লাহ পবিত্র! – পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর এই তাসবিহ পাঠ করাকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। হযরত ইমাম বাকির (আ) বলেছেন,   এই তাসবিহ পড়ে আল্লাহর কাছে গোনাহর জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন, শয়তান দূর হয়ে যায় এবং দয়ালু আল্লাহ খুশি হন। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ