ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৯ ২০:২৫ Asia/Dhaka

ইসলামী ইরানের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদীদের বিরোধের বড় কারণ হল ইরানের ইসলামী রাষ্ট্রের স্থপতি ইমাম খোমেনী (র) শোষণকামী বিশ্ব-ব্যবস্থাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিম এশিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এই ব্যবস্থাকে পরাজিত করেছেন।

অথচ এর আগে কেউই এই ব্যবস্থাকে রুখে দাঁড়াতে বা চ্যালেঞ্জ করার সাহস করেনি। শুধু তাই নয় শত-সহস্র বাধা ও তুমুল প্রচারণা সত্ত্বেও ইরানের রাজনৈতিক, আদর্শিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। আর এটাই হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরতার সুফল তথা ইসলামী শক্তির অনন্য প্রকাশ। ইসলামী ইরান নিষেধাজ্ঞাগুলোকে পরিণত করেছে উন্নয়নের অনন্য সুযোগে।

সমাজবাদের পতনের পর পুঁজিবাদ ও ইহুদিবাদও এখন মৃত্যু-শয্যায় শ্রেণী-বৈষম্য ও শোষণের কারণে। অন্যদিকে আধুনিক যুগে বিশ্বের খাঁটি ইসলামী রাষ্ট্রের মডেল হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামী সভ্যতা পুননির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামী ইরান। নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রে সফল এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমাম খোমেনীর যোগ্য অনুসারী ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী।

ইমাম খোমেনীর মৃত্যুর পর গত ত্রিশ বছরে লেবানন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর সাফল্যের পেছনে রয়েছে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রভাব। গাজার হামাস ও জিহাদ আজ এতই শক্তিশালী যে তাদের মাত্র দুই দিনের প্রতিরোধের মুখে দখলদার ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাব ও শক্তি যে কত ব্যাপক তা পশ্চিমা শক্তিগুলোর নানা প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট। ইসলামী বিপ্লবের প্রভাব ঠেকানোর জন্য পাশ্চাত্য হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করছে। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী প্রচারমাধ্যমগুলো এমন ব্যাপক ও বিরতিহীন প্রচারণা শুরু করে যাতে অন্য কোনো দেশের মুসলমানরা ইসলামী বিপ্লবের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে না পারে। এ ধরনের অব্যাহত প্রচারণায় এখনও বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। অবশ্য ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও মূল্যবোধকে বুঝতে না পারা, ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তার প্রভাব এবং শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের মত সাম্প্রদায়িক হীন চিন্তাও অনেক ক্ষেত্রে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের গুরুত্ব ও সাফল্যকে অনেক মুসলমানের কাছে আড়াল করতে সক্ষম হয়েছে। 

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকে বিশ্বব্যাপী নানা ক্ষেত্রে ইসলামী গণজাগরণের প্রবাহ জোরদার হয়েছে। এই ধারা নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও মুসলিম উম্মাহকে নানা ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যবদ্ধ করছে। পাশ্চাত্যের বেতনভোগী কলম-সন্ত্রাসী ও মুর্তাদদের উত্থানের মোকাবেলায় মুসলমি উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ এর অন্যতম প্রমাণ। আধুনিক যুগে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে সাহিত্য অঙ্গনে পশ্চিমাদের অন্তহীন ক্রুসেডের শরিক মুসলিম নামধারী মুনাফিক ও শীর্ষস্থানীয় কলম-সন্ত্রাসীদের অংশগ্রহণকে কার্যকর পন্থায় বাধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মরহুম ইমাম খোমেনী।  ইসলাম ধর্মের প্রকাশ্য ও চরম অবমাননাকারী সালমান রুশদির প্রতি মুর্তাদ তথা ইসলাম ধর্মত্যাগী হওয়ার ও তার মৃত্যুদণ্ডের  ফতোয়া প্রদান করে ইমাম খোমেনী (র) গোটা মুসলিম উম্মাহকে আত্মসম্মানবোধ ও মর্যাদাবোধ রক্ষার আন্দোলনে শরিক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ ছাড়াও মুসলমানদের প্রথম কিবলার শহর তথা বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার জন্য রমজানের শেষ শুক্রবারে বিশ্ব-কুদস দিবস পালনের প্রথা চালু করে ইমাম খোমেনী (র) ফিলিস্তিন মুক্তির আন্দোলনকে মুসলমানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আন্দোলনে পরিণত করার ও ইসলামী ঐক্য জোরদারের পথ সুগম করেন।

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর পাশ্চাত্যে শিক্ষিত অমুসলমানদের মধ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রবণতা জোরদার হয়। নওমুসলিমদের এক বড় অংশের মধ্যে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের গভীর প্রভাবের বিষয়টি লক্ষ্যনীয়। ইতালির ফিয়াট কোম্পানির মালিকের ছেলে অ্যাডওয়ার্ডো অ্যানিয়েলি ও কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নারী মেলানি ফ্রাঙ্কলিনের (বর্তমানে মার্জিয়া হাশেমি ) ইসলাম গ্রহণসহ আরও অনেকের কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়। হলিউড অভিনেতা শ্যান স্টোন ইসলামী বিপ্লবের দেশ ইরানে এসে এখানকার আধ্যাত্মিক ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অনাবিল পরিবেশ দেখে মুসলমান হন এবং তার নতুন নাম হয় ক্রিস্টোফার আলী স্টোন। ইসলামী ইরানের পবিত্র মাজারগুলোও এখন অতীতের অন্য সময়ের চেয়ে অমুসলিমদেরকে বেশি মাত্রায় ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে ভূমিকা রাখছে। প্রতি বছরই মাশহাদে ইমাম রেজার (আ) পবিত্র মাজারে মুসলমান হচ্ছেন অনেক অমুসলিম। পবিত্র কোমে এসে মুসলমান হন টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা লরেন বুথ। ফলে অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করছেন যে চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়ে পাশ্চাত্যে মুসলমানেরাই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়।                                

শিক্ষিত অমুসলমানদের মধ্যে মুসলমান হওয়ার হিড়িককে বাধাগ্রস্ত করতে পাশ্চাত্যের সহযোগিতায় নানা মুসলিম দেশে গড়ে তোলা হয়েছে আলকায়দা ও দায়েশ বা আইএস-এর মত বর্বর ধর্মান্ধ তাকফিরি-ওয়াহাবি গোষ্ঠী। তাদের নানা নৃশংসতা ও পৈশাচিকতা প্রচার করছে পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রিত সংবাদের জগত। তারা দেখাতে চায় যে ইসলাম মানেই বর্বরতা, সন্ত্রাস ও নৃশংসতা! কিন্তু এরিমধ্যে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলমান ও পশ্চিমা জনগণও এই ষড়যন্ত্র অনেকাংশেই বুঝতে পারায় এই মহাষড়যন্ত্রও এখন বুমেরাং হয়ে উঠছে।

বিশ্বের সচেতন মুসলমানদের কাছে, এমনকি অমুসলমানদের কাছেও এটা স্পষ্ট ইরানের ইসলামী বিপ্লবী সরকার জুলুম ও শোষণের বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্য যে কোনো সরকারের চেয়ে বেশি সোচ্চার ও মজলুমের সবচেয়ে বড় সহযোগী।

ইসলামের ঐতিহ্যবাহী সংগ্রামের পতাকাকে আধুনিক যুগে ইরানই সর্বোচ্চ পর্যায়ে উড্ডীন করে ফিলিস্তিন, কাশ্মির, বসনিয়া, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনের সংগ্রামী ও মজলুম জনগণকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে। তাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও পশ্চিমা উপনিবেশবাদসহ সব ধরনের শোষণ-বিরোধী সংগ্রামী অমুসলিম জাতি ও সরকারগুলোও ইরানের সমর্থক বা বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার সংগ্রামী সরকারগুলোর সঙ্গে ইরানের সুসম্পর্কই এর প্রমাণ। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/ ৮