আগস্ট ১৭, ২০১৯ ২১:১৩ Asia/Dhaka

সবার সাথে আলোচনা বা পরামর্শ না করে ভারতের সংবিধান থেকে কাশ্মীর নিয়ে ৩৭০ ও ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিল করা কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যায় হয়েছে বলে সবাই মনে করে। রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার মুসলিম সদস্য আহমদ হাসান।

তবে তিনি একথাও বলেছেন, দুটি ধারা বাতিলের পর ভারতের সাধারণ জনগণ এটিকে সমর্থন জানিয়েছে। তিনি মনে করেন, জম্মু-কাশ্মীরের নেতাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা দরকার। আহমদ হাসান বলেন, জম্মু-কাশ্মীরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা এবং থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব আহমদ হাসান, কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেয়া পদেক্ষপকে কেউ কেউ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বললেও কংগ্রেসসহ ভারতেরই বহু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব মোদি সরকারের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। আপনি কী বলবেন?

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ

আহমদ হাসান: দেখুন, ভারতের রাজ্য সভার উচ্চকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণা দেন। রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে তখনই বিষয়টি জানলাম। তবে তার আগে কাশ্মীরে এতবেশি সামরিক এবং আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। নানারকম বিষয়ও ভাবা হচ্ছিল। তবে রাজ্যসভায় ঘোষণার পর বিষয়টি স্পষ্ট হলো।

দুটি অনুচ্ছেদ বাতিলের ফলে কাশ্মিরের বিশেষ সুবিধা বাতিল হলো এবং রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হলো। এটি সবার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। এটি অ্যাপ্রুভ হবে এমনটি কেউ ভাবেন নি। অমিত শাহ'র ঘোষণার পর দেখা গেল সাধারণ ভারতীয়রা এটিকে সমর্থন করছে। তবে সবাই বলছে এ দুটি ধারা বাতিলে কিংবা কাশ্মীর প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মোদি সরকার কারও সাথে কোনো আলোচনা  এবং পরামর্শ করেন নি। তাছাড়া কাশ্মীরের বিধানসভা ভেঙে দেয়ার পর যারা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, এমএলএ ছিলেন কিংবা যারা সেখানকার নেতা আছেন তাদের কারও সাথে কোনো পরামর্শ করেন নি। আকষ্মিকভাবে দুটি ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়া হলো। এটি অন্যায় হয়েছে বলে সবাই মনে করছেন।

রেডিও তেহরান: জ্বি জনাব আহমদ হাসান, আপনি যে কথাটি বললেন যে কেন্দ্রীয় ভারত সরকার কাশ্মিরের ৩৭০ ও ৩৫-এ ধারা বাতিল করা নিয়ে কারও সাথে তেমন কোনো পরামর্শ করে নি এবং বিষয়টি ভালো হয় নি বলে বিভিন্ন দল ব্যক্তি মন্তব্য করেছে। তো ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চলেছে তাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতিক্রিয়া

আহমদ হাসান: জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার পর এ বিষয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতিক্রিয়া আমি দেখেছি। তবে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সামনে খুব বেশি অপশন নেই বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। কেননা যুদ্ধ আসলে কোনো সমাধান নয়। দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। ফলে যুদ্ধ করে দুটি দেশের কেউই খুব বেশি লাভবান হতে পারবে বলে আমি মনে করি না। তবে একথা সত্য কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় পক্ষ ভাবা হয়। কাশ্মীর নিয়ে আমরা সবাই বলে আসছি কাশ্মীর ইস্যুটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়। তবে এখন আর সেটি স্বীকার করা হচ্ছে না। এখন বলা হচ্ছে কাশ্মীর কেবল ভারতের। দ্বিপক্ষীয় যে বিষয়টি ছিল এতদিন সেটি সরকার শেষ করে দিয়েছে। কাশ্মীরের যে অংশটি পাকিস্তানের মধ্যে আছে সেটিকে তারা বলে আজাদ কাশ্মীর আমরা বলি পাক অধিকৃত কাশ্মীর। সেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরকেও আমরা নিয়ে নেব বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় আমি বলব এ প্রসঙ্গে তাদের কাছে খুব বেশি অপশন নেই। শুধু তাই নয় দেখা যাচ্ছে এ ব্যাপারে অনেক মুসলিম দেশেরও সমর্থন পাচ্ছে না ইমরান খান বা পাকিস্তান। এ বিষয়ে ভারতের সমর্থনের পাল্লা অনেক ভারী। এখানে শুধু আমরা দেখতে পাচ্ছি চীন খানিকটা পাকিস্তানের পক্ষে রয়েছে।

রেডিও তেহরান: জনাব আহমদ হাসান- আমি চীন প্রসঙ্গেই আসছি। আপনি যে বললেন অনেক দেশই পাকিস্তানের পক্ষে নেই তবে কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। চীনের উদ্বেগ কতটা যৌক্তিক এবং কেন তাদের এই উদ্বেগ?

Image Caption

আহমদ হাসান: দেখুন, চীনের উদ্বেগের বিষয়টি আসলে ভূ-রাজনৈতিক। পলিটিক্সে আজকাল তো আর নীতি আদর্শের কোনো ব্যাপার নেই। চীনের দাবি লাদাখের দিকের যে এলাকা সেটি তাদের। তবে আমরা সেটিকে ভারতীয় এলাকা বলে মনে করি এবং সেখানকার প্রশাসন ভারতের। আর কৌশলগত দিক থেকে অঞ্চলটি চীনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে চীন ওই অঞ্চলকে নিজেদের পক্ষে রাখতে চায়।

একদিকে চীনের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন বাড়ছে একইসাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়ছে দুটি দেশের মধ্যে। এছাড়া মহাসাগরে আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও দেশ দুটির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয় রয়েছে। ফলে বিষয়টি একটু জটিল। আর সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে চীনের মতে তারা পাকিস্তানকে সমর্থন জানালে তাদের স্বার্থ বজায় থাকবে। আর সে কারণেই চীন পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে বলে আমার মনে হয়।

রেডিও তেহরান: জনাব হাসান, আপনি চীন প্রসঙ্গে বললেন। পাশাপাশি আপনি বললেন দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। তো আমরা দেখলাম, আমেরিকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খান নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান বিরাট সেনাবাহিনীর লালন করে এবং দু দেশই পরমাণু শক্তিধর দেশ। কাশ্মীর নিয়ে পরিস্থিতি খারাপ করে তুললে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। অনেকে তার এ বক্তব্যকে যুদ্ধের হুমকি হিসেবে দেখছেন। আপনার মূল্যায়ন কী?

আহমদ হাসান: দেখুন, আমিই আগেই বলেছি আসলে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের হাতে তেমন কোনো অপশন নেই। পাকিস্তান আসলে এ বিষয়ে কী করতে পারে! পাকিস্তান-ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলে তাদের কোনো লাভ হবে না। সামরিক দিক থেকে ভারত একটি বড় শক্তিশালী দেশ। এছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশ ভারতের পক্ষে। পাকিস্তানের পক্ষে তেমন কোনো দেশ নেই। সবাই এ বিষয়ে ডায়ালগের পরামর্শ দিচ্ছে। তো ডায়ালগের বিষয়টি আগেও ছিল এখনও আছে। তবে ভারত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাশ্মীরের ব্যাপারে তাতে পাকিস্তান আসলে তেমন কিছু করার মতো অবস্থায় নেই।

রেডিও তেহরান:  জনাব আহমদ হাসান, সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাইব জম্মু-কাশ্মীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি কেমন?

জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি থমথমে

আহমদ হাসান: দেখুন, আমরা আশা করছি জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। কাশ্মীরে এখনও ৪৪ ধারা জারি রয়েছে। ভারতীয় সেনা সব জায়গায় মোতায়েন রয়েছে। কাশ্মীরিদের যে কোনোধরনের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মোকাবেলা করার জন্য তারা প্রস্তুত। আমি মনে করি আস্তে আস্তে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে হবে। ভারত সরকারের উচিত হবে কাশ্মীরের মানুষের সাথে কথা বলা, সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বলা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভবিষ্যতে কাশ্মীরকে তাদের রাজ্যের যে মর্যাদা ছিল সেটা ফিরিয়ে দেয়া হবে। তবে কাশ্মীরে এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৭