জীবনশৈলী (পর্ব-১৫): সুন্দর জীবনের জন্য ব্যায়াম বা শরীরচর্চার গুরুত্ব
সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশাকরি সবাই ভালো আছেন। গত আসরে আমরা সুস্বাস্থ্য ও সুষম খাবার নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সুস্থতা ধরে রাখতে সুষম খাদ্যের বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়ম-নীতি মেনে চলা এবং সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রোগমুক্ত থাকতে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো জরুরি। শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ব্যায়াম বা শরীরচর্চা ভালো পন্থা। অল্প শারীরিক ব্যায়ামেও অনেক সুফল পাওয়া যায়। এমনকি প্রতিদিন পাঁচ মিনিটের পথ হেঁটে কোথাও গেলেও স্বাস্থ্যের কিছু উপকার হয়। চোখে না পড়লেও ব্যায়াম থেকে শরীর অনেকভাবে উপকৃত হয়। শরীরচর্চার কোনো বয়সসীমা নেই। ৮০ বছর বয়স পেরোনোর পরও শারীরিক সক্রিয়তার সুফল পাওয়া যায়। ব্যায়াম করার উদ্দেশ্য ভালো থাকা এবং সুখী ও সুন্দর জীবন যাপন করা। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এখন সারা বিশ্বেই জীবনযাত্রায় এক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও শরীরচর্চার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) নিজে নিয়মিত শরীর চর্চা করতেন। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব হচ্ছে তার দেহকে রক্ষা করা অর্থাৎ শরীরের যত্ম নেয়া। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) শরীর বা দেহের হক বা অধিকার সম্পর্কে বলেছেন, তোমার ওপর তোমার পালনকর্তার অধিকার রয়েছে, তোমার ওপর তোমার শরীরের অধিকার রয়েছে এবং তোমার ওপর তোমার পরিবারের অধিকার রয়েছে।
এই হাদিস থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তাহলো, রাসূলে খোদা মানুষের ওপর তার নিজের শরীরের অধিকারকে আল্লাহতায়ালার অধিকার ও পরিবারের অধিকারের পাশেই স্থান দিয়েছেন। এমনকি পরিবারের অধিকারের আগে এই অধিকারকে স্থান দিয়েছেন। এই হাদিসের মাধ্যমে এই বার্তাই পাচ্ছি যে, সুস্থ ও সবল দেহের অধিকারী হলে মানুষ সহজেই তার পালনকর্তা ও পরিবারের অধিকার সর্বোত্তম উপায়ে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.) মুসলিম সমাজের নেতা ও সামরিক কমান্ডার হিসেবে সাহাবিদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য নানা ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। মাঝে মধ্যে তিনি নিজেও এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। রাসূলে খোদা (সা.) ঘোড়দৌঁড়, তীর নিক্ষেপ ও সাঁতারকে উপকারী শরীরচর্চা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “পিতার ওপর সন্তানের অধিকার হলো, পিতা সন্তানকে লেখাপড়া, সাঁতার ও তীর-চালনা শেখাবে এবং সন্তানকে হালাল ও ভালো খাবার ব্যতীত অন্য কিছু খাওয়াবে না।

প্রত্যেক মানুষের জন্যই শরীর চর্চা বা ব্যায়াম জরুরি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, শারীরিক সুস্থতার জন্য সব বয়সের মানুষকে নিয়মিত শরীর চর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করতে হবে। জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে এটি হলো একটি সহজ পন্থা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিয়মিত শরীর চর্চা মনকে চাঙা রাখে। শরীরচর্চা করলে মস্তিষ্ক থেকে নানা ধরণের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। আর এসব রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চেহারায় লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। নিয়মিত শরীরচর্চাকারীকে বিষণ্নতা কিংবা হতাশা সহজে গ্রাস করতে পারে না। আধুনিকজীবনে শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ কমে গেছে। হাঁটাহাঁটির খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। রিক্সা থেকে শুরু করে নানা যানবাহন এখন আমাদের হাতের নাগালে। এ কারণে অনেকেই একদম হাটেন না। এটা ঠিক নয়। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুস্থ থাকতে সুযোগ পেলেই হাটা দরকার। এছাড়া এখন মানুষের খাদ্যাভ্যাসও বদলে গেছে। হাটাসহ শারীরিক তৎপরতা হ্রাস এবং খাদ্যাভ্যাস বদলে যাওয়ায় হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অস্থিক্ষয়, ক্যানসারসহ নানা ধরণের রোগ বেড়ে গেছে।
নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম কর্মস্পৃহা বাড়ায়। শরীর চর্চার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ হয়। ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র এবং রক্তনালি সচল থাকে। এতে করে সমস্ত শরীরে একটি সুস্থ প্রাণস্পন্দন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত শরীর চর্চা সুনিদ্রা নিশ্চিত করে। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য শরীর চর্চা অত্যন্ত উপকারী। শরীর চর্চা অনিদ্রা দূর করে, অতি নিদ্রার প্রবণতাও কমিয়ে দেয়। তবে মনে রাখতে হবে ঘুমানোর আগ মুহূর্তে শরীর চর্চা ব্যায়াম করা উচিত নয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ব্যায়াম করলে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভোরে শরীর চর্চা করা উপকারী। এ ছাড়া সন্ধ্যার আগে বিকেলটাও শরীর চর্চার জন্য উপযুক্ত সময়। যেহেতু শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করলে শরীরের ঘাম ঝরে, তাই ভোরে ও বিকেলে শরীর চর্চা করা ভালো।
ব্যায়ামাগারে গিয়ে শরীর চর্চা করা যেতে পারে। কিন্তু কর্ম ব্যস্ততার কারণে তা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। কাজ শেষ করে আলাদাভাবে শরীর চর্চা করার সময় মেলানো অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। এ কারণে দৈনন্দিন হাঁটা-চলা ও কাজ-কর্মের মাঝেই বিভিন্ন ধরনের শরীর চর্চা সেরে নিতে পারলে ভালো হয়। যেমন কোথাও কাছাকাছি যেতে হলে সময় করে সেখানে হেঁটেই যাওয়া উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। কাজকেও শরীর চর্চা হিসেবে নেয়া যেতে পারে। ঘরের নানা কাজ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শরীর চর্চার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা যদি ঘরের কাজ করি, তাহলে একদিকে যেমন সংসারের কাজ সম্পন্ন হবে তেমনি শরীর চর্চাও হয়ে যাবে।
টেবিলে অফিসের কাজ বা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে হাত-পা নড়াচড়া করানো এবং ঘাড়-কোমর ঘুরানো যেতে পারে। এছাড়া আরও নানা ধরণের পদ্ধতিতে শরীর চর্চা করা যেতে পারে। এছাড়া নানা ধরণের খেলা রয়েছে যেগুলো শরীর চর্চা হিসেবে গণ্য হয়। তবে সবার জন্য সব ব্যায়াম বা শরীর চর্চা উপযোগী নয়। যারা শরীর চর্চার বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা যেতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে ব্যায়ামই করুন না কেন তা নিয়মিত করতে হবে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। সারা দিন নিষ্ক্রিয় থেকে শরীরের সুস্থতা ধরে রাখা সম্ভব নয়।#
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।