জানুয়ারি ২৮, ২০২০ ১৮:২৯ Asia/Dhaka

ইরানের প্রতিবন্ধী কল্যাণ ও পুর্নবাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাহেল হেম্মাতি বলেছেন, অনেক অভিভাবকই মনে করেন শিশুদেরকে সব সময় সত্য কথা বলা একটা কঠিন কাজ।

কিন্তু আসলে বিষয়টা সেরকম নয়। শিশুদেরকে বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমরা যখন শিশুকে সুন্দরভাবে বাস্তবতা বুঝিয়ে বলি তখন তারা বুঝতে পারে। শিশুরা সাধারণত মা-বাবাকে সব ক্ষেত্রেই অনুকরণ করে, তাদের মতো আচরণ করার চেষ্টা করে। এ কারণে সত্য বা মিথ্যা বলার অভ্যাসটাও গড়ে উঠে মা-বাবার আচরণ অনুকরণ করেই। পরিবারের সদস্যরা মিথ্যা বলছে, এটা দেখার পর শিশুরা প্রথমেই অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে। এরপর আস্তে আস্তে সে নিজেই মিথ্যা বলতে শুরু করে। কারণ অনেক পরিবারেই দেখা যায় মা-বাবা সন্তানকে মুখে বলছে মিথ্যা বলো না আবার সন্তানের সামনেই অন্য কাউকে মিথ্যা বলছে।

বাবা-মা অনেক সময় বাসায় বসে অথবা ফোনে অন্যকে এমন সব মিথ্যা বলে যা শিশুর সামনে সহজেই ধরা পড়ে যায়। এ অবস্থায় কথা ও কাজের ভিন্নতা দেখে শিশু সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারে না এবং নিজেও মিথ্যা বলা শেখে। অনেক পরিবারেই দেখা যায় স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে এবং স্ত্রী তার স্বামীর সঙ্গে অবলীলায় মিথ্যা বলে যাচ্ছে। এ ধরণের সম্পর্ক শিশুকে মিথ্যা বলতে আরও বেশি উৎসাহিত করে। শিশুরা নানা কারণে মিথ্যা বলতে পারে। কখনো কখনো তারা বকা বা শাস্তির ভয়ে মিথ্যা বলে। স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে হোমওয়ার্ক করা, খাবার খাওয়া, দুষ্টুমি করা, পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়া  ইত্যাদি ক্ষেত্রে মিথ্যা বলার প্রবণতা বেশি থাকে। স্কুলগামী শিশুরা অনেক সময় সহপাঠীদের মাঝে নিজেকে আলাদাভাবে পরিচয় করাতে চায়। নিজেকে অনেক বেশি স্মার্ট, সাহসী ও দক্ষ হিসেবে তুলে ধরতে চায়। এ জন্য সে বানিয়ে বানিয়ে অনেক মিথ্যা গল্প করে। তারা ভূতের গল্প, অদ্ভুত কোনো বীরত্বের কাহিনি ইত্যাদি বলে থাকে। অনেক সময় তারা বলে বেড়ায় যে, তারা নিজেরাই চোর ধরে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

যেসব মা-বাবা শিশুদের যথেষ্ট সময় দেন না তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতেও শিশুরা মিথ্যা বলে। এ জন্য অনেক মিথ্যা বাহানা তৈরি করে, অভিনয় করে। এভাবে মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হয়। অনেক সময় শিশুরা মনে করে সত্য বললে অন্য পক্ষ অখুশি হবে বা কষ্ট পাবে এবং বন্ধুত্ব ছিন্ন হয়ে যাবে। যেমন কোনো বন্ধু একটি নতুন পেনসিল এনে জিজ্ঞাসা করল কেমন হয়েছে? যদি পেনসিলটি পছন্দ না-ও হয় তবুও সে বলে সুন্দর। কারণ অসুন্দর বললে বন্ধুটি কষ্ট পেতে পারে। এভাবে অন্যকে খুশি করার জন্য মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হয়। তবে কোনো শিশুর মধ্যে মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হলে তা বন্ধ করতে কৌশলে কাজ করতে হবে। শিশু মিথ্যা বলছে এটি বুঝতে পারলে তাকে বকা না দিয়ে সরাসরি কথা বলতে হবে। কারণ মিথ্যা বলার পেছনে তারও কিছু যুক্তি বা কথা থাকতে পারে। সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে এবং মিথ্যা বলা যে খারাপ সেটি ভালোভাবে বুঝাতে হবে।  শিশুকে শিশুর মতো করে বুঝাতে হবে, তার সঙ্গে রাগ দেখালে চলবে না। একটা খারাপ প্রবণতা বন্ধ করতেও শিশুর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে।

প্রথম থেকেই শিশুকে তার আবেগ স্পষ্টভাবে বলতে শেখাতে হবে। শিশুকে সততা ও নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়ার একটি ভালো উপায় হলো ভালো গল্প। গল্পের মাধ্যমে সত্যবাদিতা শেখানো যেতে পারে। এমন সব গল্প বলতে হবে যেখানে সত্যবাদিতার জয়গান থাকে এবং সত্যবাদীরা প্রশংসিত হয়। শিশুদের সত্য বলার সাহস জোগাতে হবে। এই দায়িত্ব প্রধানত মা-বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের। মনে রাখতে হবে শিশুরা বড়দের সব কাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ কারণে আমোদের কথাবার্তায়, কাজকর্মে ও আচার-আচারণে সততা ও সত্যবাদিতার ছাপ থাকতে হবে। আমাদেরকে এমন হতে হবে যাতে যে কেউ যেকোনো বিষয়ে আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারে। এর ফলে শিশু যেমন সত্যবাদী হয়ে উঠবে তেমনি আমরাও ইহকাল ও পরকালে পুরস্কৃত হতে পারব। আল্লাহতায়ালার কাছে ইহকালে এবং পরকালে সত্যবাদী ব্যক্তি পুরষ্কার পাবেন। একজন সত্যবাদী মানুষ আল্লাহ ও মানুষের কাছে অধিক প্রিয়। মহান আল্লাহ সত্যবাদীদের মর্যাদা দিয়েছেন এবং মানুষকে সত্যবাদীদের সাহচর্য নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে মিথ্যাবাদিদের কেউ পছন্দ করেন না এবং কোনো ক্ষেত্রেই তাদের ওপর নির্ভর করা যায় না। মিথ্যাচার মানুষকে কুপথে পরিচালিত করে। মিথ্যা এমন এক বিষয় যা প্রমাণ করতে বারবার মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। মিথ্যাবাদীর চরম পরিণতির কথা আল্লাহ নিজেও ঘোষণা করেছেন। মিথ্যাবাদীরা ইহকাল ও পরকাল-উভয় জগতেই অপমান ও অনাস্থার সম্মুখীন হয়।

তবে একজন মিথ্যাবাদী মানুষ যে সব সময় মিথ্যাবাদীই থাকবে তা নয়। এ ধরণের মানুষও নিজের চেষ্টা ও অন্যের সহযোগিতায় সত্যবাদী মানুষে পরিণত হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য দৃঢ় ইচ্ছা ও মনোবল জরুরি। একইসঙ্গে আল্লাহর সহযোগিতাও চাইতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।