কথাবার্তা: মহামারি করোনায়-১০০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে শঙ্কা আইআরসির
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ২৯ এপ্রিল বুধবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি বাবুল আখতার। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- করোনা মোকাবেলায় ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ প্রস্তাব-দৈনিক ইত্তেফাক
- চাঁদপুরে ২১ শ বস্তা চাল নিয়ে কার্গো উধাও-দৈনিক মানবজমিন
- করোনায় ১০০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে শঙ্কা- আইআরসি-দৈনিক যুগান্তর
- সংকটের মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড-দৈনিক সমকাল
- বরিশাল হাসপাতালের লিফটের নিচে ডাক্তারের লাশ-দৈনিক কালের কণ্ঠ
- গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা দাবি-দৈনিক ভোরের কাগজ
- দৈনিক যুগান্তর লিখেছে,গণস্বাস্থ্যের ৮০০ কিট চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র' পরীক্ষা করা হবে সক্ষমতা
ভারতের শিরোনাম:
- ভারতে একদিন মৃত্যুতে রেকর্ড, নতুন আক্রান্ত ১৯০০ জন-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
- করোনায় মৃত্যু সন্দেহে মহিলার শেষকৃত্য বাধা পুলিশ ও চিকিৎসকদের উপর হামলা চালাল গ্রামবাসী-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
- করোনা,মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়াল, সেনসেস্ক উর্ধ্বমুখী-দৈনিক আজকাল
পাঠক/শ্রোতা! এবারে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১) ত্রাণ বিতরেণের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ এমন খবর দিয়েছে দৈনিক মানবজমিন। কিন্তু অনিয়েমের নানা অভিযোগ বন্ধ হচ্ছে না। কী বলবেন?
২) ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াতে চায় আমেরিকা। কিন্তু কূটনৈতিক সুত্রগুলো বলছে- এ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আমেরিকার পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব তোলা হলে তা সাথে সাথেই নাকচ করা হবে। এ সম্ভাবনা কতটা?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:

বিশ্ব করোনা পরিস্থিতির আপডেট খবর একনজরে: নানান বিধিনিষেধ, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর গ্রাফ বিশ্বব্যাপী উপরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দৈনিক যুগান্তরে লেখা হয়েছে এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ৩১,৩৮,৮৮৬ জন। সেইসঙ্গে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২ লাখ ১৮ হাজার ০১০ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯ লাখ ৫৬হাজার ০৫৭ জন।
দৈনিক মানবজমিনের খবরে লেখা এখনই লকডাইন শিথিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরোধিতা। এদিকে দৈনিক কালের কণ্ঠ খবর দিয়েছে, দেশে দেশে লকডাউন শিথিল অব্যাহত। করোনা মোকাবেলার টাকা যাচ্ছে দুর্নীতিবাজদের পকেটে ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে খবরটি পরিবেশিত হয়েছে। এদিকে করোনা পরীক্ষায় অবহেলা হবে আত্মঘাতী এমন একটি শিরোনাম ছাপা হয়েছে দৈনিকটিতে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রাণহানিকে ছাড়িয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যুর সংখ্যা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র নিলর্জ্জ মিথ্যা বলছে , ট্রাম্পের বিষোধগারে চীন- এ খবর দুটি দিয়েছে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা।

দুর্বল অর্থনীতির ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোকে জরুরি সহায়তা না করলে মহামারী করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী ১০কোটি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।-দৈনিক ইত্তেফাক/যুগান্তর
মঙ্গলবার এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি)।
এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পশ্চিমা মিডিয়া ।
তারা জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে একটি প্রতিবেদনে তৈরি করেছে আইআরসি।
তাদের সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো অস্থিতিশীল ও যুদ্ধ-সংঘাত কবলিত কয়েক ডজন দেশে করোনা মোকাবেলায় এখনই আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। তা না করলে মহামারীটির সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে হাতে সময় খুব কম। ধনী দেশগুলোর শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আইআরসির প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেছেন, দাতা দেশগুলো একজোট হয়ে এখনই তহবিল গঠন না করলে অন্তত ৩০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে করোনা। এই সংখ্যাটার কথা ভেবে হলেও আমাদের জাগতে হবে।
তিনি বলেন, এই মহামারীর সম্পূর্ণ, ধ্বংসাত্মক এবং অপ্রতিরোধ্য ক্ষয়ক্ষতি কিংবা বিপর্যয় এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ভঙ্গুর অর্থনীতি ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে অনুভূত হয়নি। এই মহামারি থেকে রক্ষা পেতে দাতাদেরকে জরুরিভিত্তিতে এসব দেশকে আর্থিক সহায়তা করতে হবে। আইআরসির দৃষ্টিতে করোনা সংক্রমণের জন্য এসব ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ইয়েমেন অন্যতম।
এ বিষয়ে একমত আন্তর্জাতিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)।
সংস্থাটির ইয়েমেন কার্যক্রমের ব্যবস্থাপক ক্যারোলিন সেগুইন বলেন, উন্নয়নশীল বহু দেশেই সরকারি হিসেবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক কম হলেও সত্যিকার অর্থে এ সংখ্যা অনেক বেশি। আমরা মনে করি যুদ্ধাহত দেশ ইয়েমেন এরইমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা গেছেন। তাদের কেউ হাসপাতালে মারা যাননি। তাই এ সংখ্যা হিসাবে আসছে না।
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি:

করোনায় বাংলদেশে করোনা কেড়ে নিল আর ৮ জনের প্রাণ। মোট মৃত্যু বেড়ে ১৬৩ , নতুন আক্রান্ত ৬৪১ জন। মোট আক্রান্ত ৭,৩০১ জন। দৈনিক প্রথম আলো, ইত্তেফাকসহ সব জাতীয় দৈনিকে খবরটি পরিবেশিত হয়েছে। আজ স্বাস্থ্য অধিদফতের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
দৈনিক কালের কণ্ঠের শিরোনাম –প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকরে ঢিলেমি। দৈনিকটির অন্য একটি খবরে লেখা হয়েছে,নতুন ধানেও নামছে না চালের দাম। দৈনিক সমাকলের একটি খবরে লেখা হয়েছে, করোনার ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থালে ফিরছে মানুষ। ৩৯২ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক।
আইসিইউ না পেয়ে রোগীদের করুণ মৃত্যু-দৈনিক ইত্তেফাকের এ শিরোনামের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,দেশে বর্তমানে আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে বেশির ভাগ রোগীর করুণ মৃত্যু ঘটছে।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরার বলেছেন, দেশে করোনার বাইরে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগীর আইসিইউ এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরকারি- বেসরকারি মিলিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টি আইসিইউ বেড আছে। আইসিইউ যাদের প্রয়োজন তাদের মধ্যে ৫০ শাতাং রোগীই মারা যায়। আবার সব রোগীকে করোনা মনে করা হচ্ছে। কোভিড ১৯ মুক্ত সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তি নিচ্ছে না অধিকাংশ হাসপাতাল। এক্ষেত্রে আইসিইউ বেড খালি থাকলেও ভতিৃ নেয়া হচ্ছে করোনা আতঙ্কে। এমন অবস্থার মধ্যে আই সিইউ যেকত প্রয়োজন তা মর্মে মর্মে বুঝছেন রোগী, অভিভাবকসহ সবমহল।
এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি
ভারতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বহাল তবিয়তে বিরাজমান করোনা। আতঙ্ক আর চিন্তার পারদ ছড়াচ্ছে। এ সম্পর্কে দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকার শিরোনাম-ভারতে একদিনে মৃত্যুতে নুতন রেকর্ড। এ খবরে লেখা হয়েছে,দ্বিতীয় দফার লডকাউনে মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩ মে। সংক্রমণের নিরিখে গোটা দেশকে তিন ভাগে ভাগ করে অর্থনীতির চাকা গড়ানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। এর মাঝেই দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে সারা দেশে, যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। দেশে এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৯৭ জন নতুন করে আক্রান্তও হয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৩১ হাজার ৩৩২ জন। সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। তার পরের দু’টি স্থানে রয়েছে যথাক্রমে গুজরাত ও দিল্লি।মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের হার প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে , দিল্লির প্রস্তাবে সিলমোহর দিল রাজ্যগুলো। করোনা কোপে দেশজুড়ে সিবিএসইর দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এদিকে রাজ্যে লকডাউন বাড়বে ? দৈনিকটির অন্য একটি খবরের শিরোনাম। সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে, করোনা রুখতে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠতেই বিশ্বনেতাদের পালটা আক্রমণ শানালেন WHO-এর ডিরেক্টর-জেনারেল টেড্রোস আধানম ঘেব্রিয়েসুস। তাঁর দাবি, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তাঁদের দেওয়া প্রাথমিক সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছে। আর সেকারণেই এই দেশগুলোকে এখন ভুগতে হচ্ছে। যেসব দেশে এই সতর্কবার্তা মেনে চলেছে, তারা অনেক ভাল জায়গায় আছে।

দৈনিক আজকালের একটি খবর লেখা হয়েছে, ঋণ মকুব করা হয়নি। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করছেন না, তাঁদের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপের তালিকায় আনা হয়েছে মাত্র। ঋণের টাকা উশুল করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মেহুল চোকসি, নীরব মোদি, বিজয় মালিয়াদের ৬৮,৬০৭ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ অনুৎপাদক সম্পদের হিসেবের খাতা থেকে মুছে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই ইস্যুতে মোদি সরকারকে আক্রমণ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, বন্ধুদের ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।’ তারপরই টুইটারে রাহুল গান্ধীকে বেনজির আক্রমণ করা শুরু করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পর পর ১৩টি টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, রাহুল গান্ধী এই ধরণের অভিযোগ করার আগে ডঃ মনমোহন সিংয়ের পরামর্শ নিতে পারতেন। #
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭