কথাবার্তা: করোনায় বাংলাদেশে দিন আনা মানুষের ৭০ শতাংশ কর্মহীন, কী হবে?
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ৩ মে রোববারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি মুজাহিদুল ইসলাম আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।
বাংলাদেশের শিরোনাম :
- ঢাকায় ঢুকতে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে পোশাকশ্রমিকদের-দৈনিক প্রথম আলো
- বিমানকে ১০০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে সোনালী ব্যাংক-দৈনিক মানবজমিন
- করোনায় ভারত -চীন থেকে নিরাপদ বাংলাদেশের অর্থনীতি- দ্যা ইকোনিম্ট -দৈনিক ইত্তেফাক
- করোনা সংকট-বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিতে নবম বাংলাদেশ-দৈনিক যুগান্তর
- তবে-বাংলাদেশ প্রতিদিনের শিরোনাম-করোনায় কর্মহীন দেশে ৭০ শতাংশ মানুষ
- সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু হতে পারে ৮ মে থেকে–কালের কণ্ঠ
ভারতের শিরোনাম:
- করোনায় বাড়বাড়ন্তের জন্য তাবিলিগ জামাতকেই দুষলেন যোগী আদিত্যনাথ-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা/সংবাদ প্রতিদিন/আজকাল
- চালকের কোভিড ১৯ পজিটিভ, দিল্লিতে সিআরফিএফের সদর দপ্তর সিলড-দৈনিক আজকাল
- শীঘ্রই দ্বিতীয় আর্থিক প্যাকেজ আনছে মোদি সরকার-মুখ্য অর্থ উপদেষ্টা-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
পাঠক/শ্রোতা! এবারে চলুন, বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

বিশ্ব জুড়ে চলছে করোনা সমাচার।ভয়, আতঙ্ক, উদ্বেগ, নানামুখী সংকট মানুষের এখন নিত্যসঙ্গী। মানুষের জীবন ঘরবন্দি। মহামারি করোনার চেয়ে বড় কোনো খবর মিডিয়ায় নেই। প্রতি মুহূর্তে করোনার আপডেট খবরে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ডওমিটার ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বিশ্বের ২১০ টি দেশ ও অঞ্চলকে আক্রান্ত করেছে করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যাপী মোট মৃতের সংখ্যা ২,৪৪,৭৯১ জন ও আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪,৮৪,৬৩১ জন।
একনজরে বিশ্ব করোনার খবর: বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৩৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনাভাইরাসের উৎস প্রাকৃতিক। দৈনিক যুগান্তরের খবর। ব্রাজিলে কফিন সংকট, লাশ পুড়িয়ে ফেলছে স্বজনরা। খবরটি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন।মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফেরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনা যুদ্ধের কথা শোনোলেন। তিনি বললেন লিটার লিটার অক্সিজেন তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।সংবাদ প্রতিদিনে খবরটি ছাপা হয়েছে। দৈনিকটি অন্য এক খবরে লিখেছে,করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ, অ্যানিমেশনের মাধ্যমে আমেরিকাকে নিয়ে মশকরা চীনের। এদিকে জার্মানিতে ১০ মে পর্যন্ত বাড়ল লকডাউন বলে জানিয়েছে দৈনিক যুগান্তর।
করোনা সম্পর্কিত বাংলাদেশের খবর:

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৭৭ জনে পৌঁছেছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬৬৫ জন। মোট আক্রান্তের-৯,৪৫৫ জন। আর সুস্থ হয়েছেন১০৬৩ জন।প্রায় সব দৈনিকে এখবর পরিবেশিত হয়েছে। মানবজমিন এক খবরে লিখেছে, ভারত থেকে ফিরলেন আরও ৩১৮ জন।যুগান্তর লিখেছে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। পোশাক শিল্পে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে খবর দিয়েছে একই দৈনিক।
করোনায় কর্মহীন দেশে ৭০ শতাংশ মানুষ এ শিরোনামের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রতিদিন লিখেছে,
করোনাভাইরাসের মোকাবিলা, নাকি অর্থনীতির চাকা সচল করা? করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে লকডাউন চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু অর্থনীতিতে গতি আনতে গেলে লকডাউন তুলে নেওয়া উচিত। এই সংঘাতে কোন পথে যাওয়া উচিত তা নিয়ে দ্বিধা আছে। কারণ প্রাণঘাতী করোনার কারণে প্রায় স্থবির পুরো বিশ্বের অর্থনীতি। তালিকার বাইরে নেই বাংলাদেশও। ফলে একই রকম দ্বিধা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশেও। কারণ প্রায় দেড় মাসের লকডাউনে এরই মধ্যে চাপে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে চাপ পড়বে অর্থনীতিতে। ফলে লকডাউন তুলে না নিলে ‘করোনায় যত মানুষের মৃত্যু হবে, অনাহারে মারা যাবেন তার চেয়ে বেশি মানুষ’। এ অবস্থায় সরকারের নেয়া উদ্যোগে সুশাসন নিশ্চিত না হলে ঝুঁকিতে পড়বে করোনা পরবর্তী অর্থনীতি।
রাজধানীতে প্রায় ৩০ বছর ধরে দিন এনে দিন খাওয়া এক রিকশাচালক বলেন, ২০ বছর আগে এক পা হারিয়েছি, আরেক পায়ের উপর ভর দিয়েই ৬ সদস্যের সংসার চালাতাম। করোনায় কাজ না থাকায় জীবন চালানো কষ্ট হয়ে গেছে। দেশে তার মতো দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ৪ কোটি। সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে পিপিআরসি ও বিআইজিডি জানায়, করোনা মহামারীতে দিন আনে দিন খায় এমন প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের আয় বন্ধ হয়েছে। পরিবারের ব্যয়ভার বহনে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকেও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গেল এক দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ এগিয়েছে দেশ। তবে, বেড়েছে আয় বৈষম্য, গড়ে ওঠেনি উপযুক্ত মানবসম্পদ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ। তাই করোনার ধাক্কায় কিছুটা বেসামাল হতে পারে অর্থনীতি।সানেম এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ২০১৯ সালে যেখানে সরকারি হিসেবে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০.৫ ভাগ, এই মুহূর্তে দারিদ্র্যের হার বেড়ে প্রায় ৪১ ভাগ হবে।

গণমাধ্যম নয়, দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন- টিআইবি-দৈনিক যুগান্তর, কালেরণ্ঠসহ কয়েকটি দৈনিক পরিবেশিত এ খবরে লেখা হয়েছে, দেশের এই সঙ্কট মুহূর্তেও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা, হয়রানি ও নির্যাতন চলছে উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা হয়রানি নয় বরং দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।গণমাধ্যম যাতে অবাধ ও মুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ৩ মে জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২০ উপলক্ষে শনিবার এক বিবৃতিতে একথা বলেছে টিআইবি।
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
মৃত্যু-আক্রান্তে ফের রেকর্ড, দেশে করোনা আক্রান্ত ৪০ হাজার ছুঁইছুঁই, মৃত ১৩০১ -দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।

বিস্তারিত খবরে দৈনিকটি লিখেছে, সরকার তথা দেশবাসী যখন কার্যত ভাবতে শুরু করেছে যে, করোনাভাইরাসের যুদ্ধে জয় পাওয়া গিয়েছে, তখনই প্রায় প্রতি দিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় রেকর্ড তৈরি হওয়ায় নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে। রবিবারও এক দিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যায় নজির সৃষ্টি হল। এ দিন সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এ দিন নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ২৬৪৪ জনের। এই নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যাও ৪০ হাজার ছুঁইছুই (৩৯৯৮০)।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। এই বৃদ্ধিতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ১৩০০-র গণ্ডি।

দৈনিক আজকালসহ প্রায় সব দৈনিকে লেখা হয়েছে, করোনা আবহে এবার তবলিগ জামাতকে কাঠগড়ায় তুললেন যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তোপ দেগেছেন নিজামুদ্দিন মারকাজের ধর্মীয় সমাবেশ নিয়ে। সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়া কোনও অপরাধ নয়, তবে সেই তথ্য চেপে রাখা অবশ্যই অপরাধ। করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য তবলিগ জামাতের সদস্যদেরই দায়ী করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এই ‘অপরাধ’ করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে সরকার।
রাহুল প্রতিদিন মিথ্যা বলছেন, আরোগ্য সেতুন নিয়ে কংগ্রেস নেতাকে কটাক্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর -দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে,ফের বাকযুদ্ধে জড়ালেন রাহুল গান্ধী ও বিজেপি নেতৃত্ব। রাহুল লাগাতার মিথ্যে বলছেন বলে অভিযোগে সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ। কংগ্রেস নেতা অভিযোগ করেছিলেন, ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপ ‘উন্নত মানের নজরদার যন্ত্র’। পালটা বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা রবিশংকর প্রসাদ টুইটারে লেখেন, “রাহুল প্রতিদিন একটা করে নতুন-নতুন মিথ্যা কথা বলেন। উনি আসল সত্যটা জানেনই না।” প্রসঙ্গত, দেশের আমজনতাকে করোনা নিয়ে সতর্ক করতে ফোনে আরোগ্য সেতু অ্যাপকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। লকডাউনের তৃতীয় পর্ব ঘোষণার পরই জানিয়ে দেওয়া হল, প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি কর্মীর স্মার্টফোনে আরোগ্য সেতু অ্যাপটি বাধ্যতামূলক। শুধু তাই নয়, সংক্রমক এলাকায় (Containment Zone) বসবাসকারীদেরও এই অ্যাপ ডাউনলোডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই অ্যাপ নাকি দেশবাসীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ করে কংগ্রেস।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩