মে ১০, ২০২০ ১৩:৪২ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছি ইসলাম ধর্ম বারবারই শত্রু-বন্ধু-নির্বিশেষ সবার উপকারের শিক্ষা দেয়। নানাভাবে পরোপকার করা যেতে পারে। আমরা বিপদগ্রস্ত মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধারে সহযোগিতা করতে পারি।

অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারি। এছাড়া প্রতিটি পদক্ষেপেই পরোপকার করা যায়। যদি তা ছোট ক্ষেত্রও হয়, সেটার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের কেউ অসুস্থ হলে তার খোঁজ-খবর নেয়া প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। অসুস্থ মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়ালে সাহায্যকারীর প্রতি আল্লাহ অনেক খুশি হন।

ইসলাম ধর্মে সব মানুষ তথা গোটা মানব সমাজের উপকার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, 'ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের পরেই সবচেয়ে বিজ্ঞচিত কাজ হচ্ছে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের উপকার করা এবং অন্যের কল্যাণ কামনা করা। উপকারভোগী ব্যক্তি ধার্মিকই হোক আর অধার্মিকই হোক।'

ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে ধার্মিকতা হচ্ছে বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, তবে এই ধার্মিকতা আরও বেশি সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে যখন একজন ধার্মিক মানুষ পরোপকার করে এবং অন্যের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে। অনেকে নিজেকে পরোপকার থেকে দূরে রাখতে নানা অজুহাত দেখান। তারা বলে থাকেন তাদেরতো ধন-সম্পদ নেই। কিন্তু অনেক ধন-সম্পদের মালিক হলেই কেবল পরোপকার করা যাবে- এ ধারণা একেবারেই অমূলক, এ ক্ষেত্রে ইচ্ছাটাই মূল বিষয়। প্রত্যেক মানুষই তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরোপকারী হতে পারে।  

আসলে পরোপকার নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। পরোপকার অনেক ধরনের। পরোপকার করা যেতে পারে ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারেও। শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক কর্মকাণ্ডেও অন্যকে সহযোগিতা করা যেতে পারে। সমাজে নানা রকমের মানুষের বসবাস। আমাদের চারপাশে রয়েছে নানা পর্যায়ের মানুষ, তাদের জীবনে রয়েছে নানা সমস্যা। তাদের সেই সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াও পরোপকার। বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণ প্রজন্মের একটি বিরাট অংশ সর্বনাশা নেশার জগতে ডুবে আছে, তলিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের অতল গহ্বরে,তাদেরকে সেই অন্ধকারের গলিপথ থেকে বের করে আলোকিত পৃথিবীতে নিয়ে আসাও পরোপকার। রাস্তায় চলতে গিয়ে অনেক সময়ই দেখা যায় মহিলাদের গায়ের বোরকা বা শাড়ি রিক্সা বা গাড়ির চাকার পাশে ঝুলে আছে, যেকোনো সময় চাকায় পেচিয়ে গিয়ে তা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, এই বিষয়টি রিক্সা ও গাড়ীর যাত্রী বা চালককে অবহিত করাও অনেক বড় পরোপকার।

কারো পকেট বা ব্যাগ থেকে একজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ বা জিনিস পড়ে গেছে, আপনি পেয়েছেন। সেই জিনিসটি তার কাছে পৌঁছে দেওয়াও পরোপকার। অনেকে হারানো কাগজ বা জিনিস পৌঁছে দিতে বিজ্ঞান প্রকাশ ও মাইকিং পর্যন্ত করে থাকেন, এটা অবশ্যই পরোপকার। রাস্তায় বা ফুটপাতে একটি কাচের ভাঙা অংশ পড়ে আছে, আপনি দেখে তা সরিয়ে দিলেন এটাও পরোপকার। কাচের ভাঙা অংশটি না সরালে তা থেকে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত, কারও পা কেটে যেতে পারত, গাড়ির চাকা পাংচার হতে পারতো, আপনি এই দুর্ঘটনা ঠেকিয়ে দিলেন, পরোপকার করলেন। এ জন্য আপনার একটি টাকাও খরচ করতে হলো না। সমাজে নানা বিষয়ে মানুষের অজ্ঞতা রয়েছে। সচেতনতার অভাবে গোটা সমাজের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অজ্ঞ মানুষকে সচেতন করে তোলাও পরোপকার। 

এখনও সমাজের অনেক মানুষ কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। তাদেরকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে এই কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। খুব সাধারণ একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রামের অনেক মানুষ এখনও বিশ্বাস করেন-দাঁতে পোকা হয়। এই ভ্রান্ত ধারণার কারণে তারা দাঁতে ব্যথা হলে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করে কিছু ধোকাবাজ ব্যক্তির স্মরণাপন্ন হন এবং চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। সমাজে এমন ভ্রান্ত ধারণার ছড়াছড়ি। এ ধরণের ভ্রান্ত ধারণা থেকে মানুষকে মুক্ত করাও বড় ধরণের পরোপকার। সমাজে অনেক মানুষ আছেন যারা অন্যের ভালো সহ্য করতে পারেন না, এ কারণে তারা পরোপকার করতে পারেন না। কারো ক্ষতি হচ্ছে দেখেও তারা তা ঠেকানোর চেষ্টা করেন না। তারা অন্যের ক্ষতি দেখে খুশি হন। পরোপকারের জন্য এ ধরণের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

পরোপকার মানুষকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে, পরোপকারীরা মানুষের পিয়পাত্রে পরিণত হন। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব মনীষী স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাদের অন্যান্য গুণের পাশাপাশি একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল পরোপকারিতা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বড় পরোপকারী। আজীবন গোটা মানব জাতির জন্য কাজ করে গেছেন, সব সময় মানুষের কল্যাণ কামনা করেছেন। শত্রুর সাহায্যেও এগিয়ে গেছেন। সব সমাজেই কম-বেশি পরোপকারী মানুষ রয়েছেন। পরোপকারিতার সংস্কৃতি গোটা সমাজ ও দেশে ছড়িয়ে দিতে পরোপকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ দিতে হবে। এ ধরণের মানুষকে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। এছাড়া পরোপকারের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে পরিবার থেকেই। শিশুদেরকে পরোপকার করতে উৎসাহ দিতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরোপকারের সংস্কৃতি জোরদার করতে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।  শিশুদের সামনে অন্যকে সহযোগিতা করলে তারা তা দেখে শেখে। দরিদ্রদের দান করার ক্ষেত্রেও শিশুদেরকে সামনে এগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। নিজে লাভবান হওয়া মানেই সাফল্য ও বিজয় এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে শিশুদেরকেও তা বুঝাতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।