এপ্রিল ২১, ২০২১ ১৬:০৩ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা! ২১ এপ্রিল বুধবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • ঢাকার রাস্তায় যানবাহন ও মানুষ বেড়েছে-দৈনিক প্রথম আলো
  • স্বল্প আয়ের দেশে লকডাউন কার্যকর করা কঠিন-মানবজমিন
  • মুক্তিপণ না পেয়ে কোরানের হাফেজকে হত্যা-দৈনিক ইত্তেফাক
  • খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাবুনগরীর কোনোদিন দেখা হয়নি-কালের কণ্ঠলকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থদের
  • সহায়তায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর-দৈনিক যুগান্তর
  • কীভাবে ফের ক্ষমতায় আসতে পারে বিএনপি, জানালেন কাদের -বিডি প্রতিদিন

ভারতের শিরোনাম:

  • কবিতার মুহূর্ত স্তব্ধ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিয়ে গেল কবি শঙ্খ ঘোষকে-আনন্দবাজার পত্রিকা 
  • ২৪ ঘন্টায় ভারতে করোনা আক্রান্ত ২ লাখ ৯৫ হাজার, উদ্বেগ বাড়াচেচ মৃত্যুতেও-সংবাদ প্রতিদিন
  • শেষ দুই দফার ভোট একদিনে ! কমিশনকে প্রস্তাব ২ বিশেষ পর্যবেক্ষকের-আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি।

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. স্বল্পআয়ের দেশে লকডাউন কার্যকর করা কঠিন। দৈনিক মানবজমিনে এমন মতামত নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। কি বলবেন আপনি?

২. ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার মানতে চাইছে না ইরান। কেন ইরান এই শক্ত অবস্থান নিল?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:

নিম্ন আয়ের ৩৫ লাখ পরিবার পাবে আড়াই হাজার করে টাকা-যুগান্তর

লকডাউনের কারণে কর্মহীন অসহায়, খেটে খাওয়া মানুষ এবং ছিন্নমূল, ভাসমান মানুষদের সহায়তায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমাজের সামর্থবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ কেমন বিধিনিষেধ!-ইত্তেফাক

লকডাউনের একি দশা!

সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে গণপরিবহন ছাড়া সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

আজ বুধবার (২১ এপ্রিল) সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গাবতলি, শ্যামলী, আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ধানমন্ডি, মালিবাগ, মগবাজার, কাকরাইল ও পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মোড়ে মোরে পুলিশের চেকপোস্ট নেই। কোনো কোনো মোড়ে চেকপোস্ট থাকলেও তাতে পুলিশের উপস্থিতি নেই। এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে দুইজন আরোহণ করছে এবং সিএনজিতে চারজন থেকে পাঁচজন পর্যন্ত চলাচল করছে। মোটরসাইকেলে দুইজন চলাচল করলেও পুলিশ তাদের দেখে অনেকটা নিশ্চুপ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলো। এমনকি মোটরসাইকেলে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতেও দেখা যায় অনেক রাইডারকে। 

আজ বুধবার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বিজয় সরণীর সিগ্যানাল গেলে দেখা যায়, রাস্তার চারটি পয়ন্টেই কয়েক মিনিট পরপর সিগ্যানাল ফেলছে ট্রাফিক পুলিশ। গণপরিবহন না থাকলেও ট্রাক, সিএনজি, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ব্যাক্তিগত গাড়ি ও পথচারীদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো।

প্রথম আলো লিখেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাত দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ পর তা আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। সেই বর্ধিত লকডাউনের প্রথম দিনে আজ ঢাকার রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে।

সকাল ১০টায় অনেককে গন্তব্যের উদ্দেশে হেঁটে যেতে দেখা যায়। অনেককে বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।

কীভাবে ফের ক্ষমতায় আসতে পারে বিএনপি, জানালেন কাদের-বিডি প্রতিদিন

দুর্যোগ, সংকটে লিপ সার্ভিস না দিয়ে বিএনপিকে জনমানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে হলে জনগণের কাছে ফিরে আসতে হবে। এখন জনকল্যাণের রাজনীতিই বেশি প্রয়োজন। 

ওবায়দুল কাদের আজ বুধবার সকালে খুলনা সড়ক জোন বিআরটিসি, বিআরটিএ'র কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার সরকারি বাসভবন থেকে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, এদেশের রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিএনপি ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। রাষ্ট্রের প্রতিটি অর্জনকে তারা অপপ্রচার আর অন্ধ সমালোচনায় বিদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি নেতিবাচক ধারা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতায় পুষ্ট। দেশ ও সমাজের গৌরবের দিনগুলো তারা বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করেছে। জনগণের সমর্থন না পেয়ে ক্ষমতায় যেতে তারা খোঁজেন অন্ধকারের চোরাগলি।

হেফাজতে ইসলাম

হেফাজত সম্পর্কিত খবরে প্রথম আলো লিখেছে,হেফাজতের কেন্দ্রীয় আরেক নেতা গ্রেপ্তার। তাছাড়া ব্রক্ষ্মণবাড়িয়ায় আরও ১১ হেফাজতকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের খবরে লেখা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হক সাতদিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। রিমান্ডে বেশ বেশ চাঞ্চল্য তথ্য দিয়েছে মামুনুল। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক বলেছেন, ২০১৩ সালে বিএনপির পেছনে থেকে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখতেন তারা। এখন তিনি মনে করেন, হেফাজতই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে আর বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলে তাদের পেছনে থাকবে। এমনকি রিমান্ডে নেওয়ার পরও মামুনুল হক মনে করতেন, তার দলের নেতাকর্মীরা ডিবি অফিসে হামলা চালিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তবে দলের আমীর বাবুনগরীর বক্তব্য তাকে দেখানোর পর তিনি হতাশ হয়েছেন। আর কালের কণ্ঠ লিখেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাবুনগরীর কোনো দেখা হয়নি।

মতামত-বাংলাদেশিরা ভারতে যায় কেন-প্রথম আলো

সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান তার মতামত কলামে লিখেছেন, সর্বশেষ স্বাভাবিক বছর ২০১৯ সালে রেকর্ডসংখ্যক ১৫ লাখ বাংলাদেশিকে ভারতীয় ভিসা দেওয়া হয়। এটা ভারতে গমনের জন্য ইস্যুকৃত মোট ভিসার ২০ শতাংশ এবং বিদেশে ভারতীয় মিশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ কয়েক বছর আগেও সাড়ে ছয় লাখ থেকে সাত লাখ ভিসা দেওয়া হতো। কাজেই দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর বাংলাদেশের মানুষ কারণে–অকারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক কালে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই একটি সংগত প্রশ্ন, বাংলাদেশের মানুষ কেন সেখানে যায়?

অমিত শাহর ভাষ্য

অমিত শাহ

বাংলাদেশের গরিব মানুষ এখনো খেতে পাচ্ছে না’ বলে দাবি করেছেন বিজেপির সাবেক সভাপতি ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। অমিত শাহ মুখ ফসকে এ কথা বলেছেন, তা কিন্তু নয়; তিনি এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ‘১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশের এত আর্থিক উন্নয়ন সত্ত্বেও কেন লোকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করছে?’ আনন্দবাজার পত্রিকার এমন প্রশ্নে অমিত শাহ বলেন, ‘এর দুটো কারণ আছে। এক, বাংলাদেশের উন্নয়ন সীমান্ত এলাকায় নিচুতলায় পৌঁছায়নি। যেকোনো পিছিয়ে পড়া দেশে উন্নয়ন হতে শুরু করলে সেটা প্রথমত কেন্দ্রে হয়। আর তার সুফল প্রথমে বড়লোকদের কাছে পৌঁছায়। গরিবদের কাছে নয়। এখন বাংলাদেশে সেই প্রক্রিয়া চলছে। ফলে, গরিব মানুষ এখনো খেতে পাচ্ছে না। সে কারণেই অনুপ্রবেশ চলছে।’

রীভা গাঙ্গুলির বক্তব্য

সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশের মতে, অধিকসংখ্যক বাংলাদেশির সে দেশে গমনের ফলে ভারত অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশিরা সেখানে ঈদ ও বিয়ে উপলক্ষে কেনাকাটা ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। তাই সম্প্রতি করোনার কারণে বাংলাদেশিদের ভারতে যাতায়াত ব্যাহত হলে কলকাতা ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিপণিকেন্দ্র ও হোটেল ব্যবসায়ীদের মাতম ওঠে।

কেনাকাটা ছাড়াও আর যেসব কারণে বাংলাদেশিরা ভারতে যায়, তা হলো চিকিৎসা, পড়াশোনা ও পর্যটন। ভারতের হাসপাতাল ও তৎসংলগ্ন হোটেলের বাংলাদেশি রোগী–নির্ভরশীলতার কারণেই অন্যান্য ভিসা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি চিকিৎসা ভিসা চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশি পর্যটকদের একাধিক সফর ও অবস্থানে জনপ্রতি দুই হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় ধরলেও এসব খাত থেকে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অভিবাসনের প্রকারভেদ

উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগ, দেশে রাজনৈতিক নিপীড়ন, শিক্ষার সুযোগ প্রভৃতি কারণে মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যায়। এদের কেউ যায় স্থায়ী অভিবাসী হয়ে নাগরিকত্ব লাভের জন্য। অন্যরা সাময়িক অভিবাসনের জন্য যায়। যেমন পড়াশোনা, চিকিৎসা, পর্যটন শেষে দেশে ফিরে আসে। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ থেকে ভারতে গমনকারী সবাই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সাময়িক অভিবাসনের জন্য সেখানে যায়। কেননা, ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের আওতায় কেবল বাংলাদেশ, পাকিস্তানও আফগানিস্তানের অমুসলিম নাগরিকেরা দ্রুত নাগরিকত্ব লাভের যোগ্য হবে। এ সুযোগ নিয়ে মুষ্টিমেয় অমুসলিম বাংলাদেশি দেশে তাদের বৈধ ও অবৈধ আয় ভারতে পাচার করে কলকাতার সল্টলেকসহ ভারতের বিভিন্ন শহর ও আবাসিক এলাকায় থিতু হচ্ছে।

অভিবাসনের রাজনৈতিক অর্থনীতি

কতগুলো ঠেলা (পুশ) এবং টানা (পুল) কার্যকারণ অভিবাসনের পেছনে কাজ করে। যেসব কারণ নাগরিকদের বিদেশে ঠেলে দেয়, তা হলো কর্মসংস্থানের অভাব, চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতা, রাজনৈতিক নিপীড়ন, ধর্মীয় নিপীড়ন, সম্পত্তির ক্ষতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিয়ের সুযোগের অভাব ইত্যাদি। আর যেসব বিষয় নাগরিকদের বিদেশে টেনে নেয়, তা হলো চাকরির সুযোগ, উন্নত জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ, নিরাপত্তা, কম অপরাধপ্রবণতা, আত্মীয় সংযোগ, বিয়ের সুবিধা ইত্যাদি। অভিবাসনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশিদের স্থায়ীভাবে ভারতে অভিবাসন গ্রহণের কোনো কারণ বা সুযোগ নেই।

তবে বাংলাদেশিদের ভারতে সাময়িক অভিবাসনের অনেক কারণ আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের উন্নততর, সাশ্রয়ী ও সংবেদনশীল চিকিৎসাব্যবস্থা; উন্নত ও সাশ্রয়ী শিক্ষাব্যবস্থা ও পর্যটন অবকাঠামো এবং সাশ্রয়ী কেনাকাটার সুযোগ। মনে রাখতে হবে, অনেক মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নবিত্তও বাধ্য হয়ে বিদেশে চিকিৎসা শিক্ষালাভ, পর্যটন ও কেনাকাটা করে। যারা এসব সেবা গ্রহণের জন্য ভারতে যায়, তাদের বক্তব্য হলো সেখানে সেবার মান ভালো এবং মূল্যসাশ্রয়ী। কাজেই দেশে এসব সেবার মান বাড়াতে পারলে এবং ব্যয় কমাতে পারলে ভারতে সাময়িক অভিবাসন গ্রহণকারীর সংখ্যা বহুলাংশে কমে আসবে।

কী করতে হবে

চিকিৎসা ও শিক্ষার কথাই ধরা যাক। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার মান ও অপ্রতুলতা বর্তমান করোনা সংকটে আরও প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চুরি ও অপচয় হ্রাস করতে হবে। এই যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, এগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের জন্য চিহ্নিত করা যেতে পারে। যার উদ্দেশ্য হবে বিদেশগামী জনস্রোত থামানো। মনে রাখতে হবে, এসব খাতে বাংলাদেশের নাগরিকেরা বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে, তাতে দু–তিন বছরের মধ্যেই এ বিনিয়োগ উঠে আসবে। কেবল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করলেই চলবে না; প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদদের দেশে রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

এবার আসি কেনাকাটা ও পর্যটন বিষয়ে। এখানে সমস্যা হলো উচ্চমূল্য। বাংলাদেশিদের ভারতে কেনাকাটার প্রধান বিষয় হলো শাড়ি ও পোশাক। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ায় পোশাকশিল্পের দেশীয় বাজার অবহেলিত হচ্ছে। বস্ত্রকলগুলোকে দেশীয় বাজারনির্ভর করতে হবে। এ খাতের ক্ষুদ্রশিল্পকে প্রণোদনা দিতে হবে।

এর সঙ্গে এক চিমটে দেশাত্মবোধ যোগ করতে হবে। মনে পড়ছে, কাঠমান্ডুতে সাফটা বাণিজ্য দর-কষাকষির ফাঁকে শালের দোকানে গিয়েছি। আমাদের সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় দলনেত্রী মীরা শংকর (পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত)। তিনি শাল দেখলেন, দর জানলেন, কিন্তু একটিও শাল কিনলেন না। অথচ আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীর মতো শালের বান্ডিল। ভেবে এখন লজ্জা হচ্ছে! ‘দেশের পণ্য কিনে হও ধন্য’ নীতি অনুসরণ করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য কেবল অমিত শাহর একার নয়; এর আগে সে দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি মন্তব্য করেছিলেন, ভারতের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ তাদের দেশ ছেড়ে দেবে।

ভারতের বিভিন্ন স্থান ঘুরে মনে হয়েছে, দলিতদের পরই ভারতে সবচেয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হচ্ছে মুসলমান ও বাঙালি (হিন্দু-মুসলিমনির্বিশেষে) সম্প্রদায়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এ দুই পরিচয়ই ধারণ করে। তাই বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ভারতের শাসকগোষ্ঠীর এ মন্তব্য মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। কেউ কেউ মনে করেন, পশ্চিম বাংলায় ভোটের রাজনীতি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য এসেছে। এটা ঠিক নয়। বহুলসংখ্যক ভারতীয় এ মনোভাব পোষণ করেন। এর মূল কারণ সমাজতাত্ত্বিক। যে কেউ প্রবাসী ভারতীয় লেখক রোহিন্তন মিস্ত্রির আ ফাইন ব্যালান্স বইটি পড়লে এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন।

তাই অমিত শাহর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে কিংবা অধিকাংশ ভারতীয় উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কাজটি সম্পাদন করে বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করার সুযোগ নেই। আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠীর ভারতগামিতার রাশ টেনে ধরতে হবে উল্লিখিত পদক্ষেপের মাধ্যমে।

সম্প্রতি উন্নয়ন সূচকের অর্থবহতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে এবং এর পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। আমাদের ক্ষেত্রে তেমন অর্থবহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সূচক হতে পারে ভারতীয় ভিসাপ্রার্থী ও ভারতে গমনকারী বাংলাদেশির সংখ্যার ৫০ শতাংশ হ্রাস। সেটা সম্ভব হলেই প্রকৃত উন্নয়ন সাধিত হবে এবং অমিত শাহর মিথ্যাচারের সঠিক জবাব দেওয়া হবে।

এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি:

ভারতে করোনার সব রেকর্ড ভাঙল

সবরেকর্ড ভেঙে ভারতে করোনায় একদিনে  ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। হাসপাতালগুলোতে ভয়াবহ অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। আর ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ২ লক্ষ ৯৫ হাজার, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মৃত্যুর হার-সংবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, করোনা মোকাবিলায় এখনই লকডাউন নয়। মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে একথা কার্যত স্পষ্টই করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোভিডবিধি মেনে ও টিকাকরণের প্রক্রিয়ায় গতি এনেই এই মারণ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু লড়াই যে ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে, তা ফের প্রমাণিত স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যানে। কারণ এবার একদিনে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৩ লক্ষের দিকে এগোলো।

আজকালের খবরে লেখা হয়েছে, সারা দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলাতেও ক্রমশ ভয় ধরাচ্ছে করোনা। আর করোনা নিয়েই এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। সারা দেশে লাগাতার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদিকেই দায়ী করলেন মমতা ব্যানার্জি। করোনা আবহে রাজ্যে এখনও বাকি আরও৩ দফার ভোট। ভোট প্রচারে এদিন মমতা ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গে যান। উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটের নির্বাচনী সভা থেকে মমতা ব্যানার্জি দেশের  করোনা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বলেন ‘এটা ম্যান মেড নয়, এটা হল মোদি মেড ডিজাসস্টার’। দেশের করোনা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলে, দেশকে করোনার মুখে ঠেলে দিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন জনগণ নাকি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। পুরো করোনা পরিস্থিতিকে দেশের জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছেন মোদি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২১

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।


 

ট্যাগ