ইসলামের দৃষ্টিতে রোগীর যত্ন নেয়া ও দেখাশোনার গুরুত্ব (পর্ব-২)
https://parstoday.ir/bn/radio/religion_islam-i83016-ইসলামের_দৃষ্টিতে_রোগীর_যত্ন_নেয়া_ও_দেখাশোনার_গুরুত্ব_(পর্ব_২)
বিশ্বজুড়ে এখন চলছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। গত প্রায় ছয়-সাত মাস ধরে অব্যাহত বৈশ্বিক এ মহামারীতে সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত মারা গেছেন সাত লাখেরও বেশি মানুষ। এছাড়া, আক্রান্তের সংখ্যাও দেড় কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০ ২০:১৪ Asia/Dhaka

বিশ্বজুড়ে এখন চলছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। গত প্রায় ছয়-সাত মাস ধরে অব্যাহত বৈশ্বিক এ মহামারীতে সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত মারা গেছেন সাত লাখেরও বেশি মানুষ। এছাড়া, আক্রান্তের সংখ্যাও দেড় কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

 মহান আল্লাহ মানবজাতিকে এ মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করুন এবং সব রোগীকে আরোগ্য দান করুন।  দুঃখজনকভাবে বিশ্বের কোনো কোনো দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন। কোনো কোনো হাসপাতাল তাদের ভর্তিই করছে না নানা অজুহাত দেখিয়ে। এটা ঠিক যে দরিদ্র দেশগুলোতে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। ফলে সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে হাসপাতালগুলো করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করতে অনীহা দেখাচ্ছে। অন্যদিকে সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে বা কার্যকর ওষুধের অভাবে কিংবা যথাসময়ে রোগ সনাক্ত করতে না পারায় অনেক ডাক্তার ও নার্সও করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা গেছেন। 

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা-সেবায় নিয়োজিত অনেক ডাক্তার ও নার্স মারা গেছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তাদেরকে শহীদ বলে ঘোষণা করেছেন।  
গত পর্বের আলোচনায় আমরা রোগীদের প্রতি ইসলামের দয়ার্দ্র দৃষ্টিভঙ্গি ও পবিত্র হাদিসের দৃষ্টিতে রোগী দেখার গুরুত্ব সম্পর্কে ইসলামী বর্ণনা শুনেছি। আজ আমরা রোগীদের দেখতে যাওয়ার আদব-কায়দা সম্পর্কে ইসলামের বিধান বা পরামর্শগুলো জানার চেষ্টা করব।  
রোগীদের দেখতে যাওয়ার বিধান: কেউ চক্ষু রোগে আক্রান্ত হলে ও যে কোনো রোগী তিন দিনের কম সময় পর্যন্ত অসুস্থ থাকলে তাকে দেখতে যাওয়া জরুরি নয় বলে জানিয়েছেন ইমাম জাফর সাদিক (আ)।  যদি রোগী দেখতে যাওয়াটা জরুরি হয়ে পড়ে তাহলে এক দিন পর পর দেখতে যেতে বলেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, রোগীকে যদি শুইয়ে দেয়া হয় তাহলে তাকে তার পরিবারের ওপর সোপর্দ করবে -যাতে তারা সব অবস্থায় তার সর্বোত্তম যত্ন নিতে পারে । 
রোগী দেখতে দূরে যেতে মহানবীর (সা) নির্দেশ: 
রাসুলে খোদা (সা) বলেছেন: হে আলী! .... রোগী দেখতে এক মাইল বা প্রায় দুই কিলোমিটার সফর কর।

রোগী দেখতে যাওয়ার পুরস্কার:  মহানবী (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোগী দেখতে ঘর থেকে বের হয় তার নিজ ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য সাত কোটি (রূপক অর্থে, বাস্তবে অনেক বেশি সংখ্যা বোঝাতে) সাওয়াব লেখা হয় এবং একই পরিমাণে তার গোনাহও মাফ করা হয় ও মর্যাদার মাত্রাও সেভাবেই বাড়ে। আর একই সংখ্যক ফেরেশতা তার কবরে থাকবে এই নেক কাজের জন্য এবং তারা কিয়ামত পর্যন্ত এই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। 
ইমাম বাকির (আ) বলেছেন: যখনই কোনো মুমিন অন্য কোনো মুমিন রোগীকে দেখতে যান তখন আল্লাহর রহমতের মধ্যে অবগাহন করেন তিনি। যখন তিনি বসেন তখন আল্লাহর রহমত তাঁকে ঘিরে রাখে। তিনি যখন রোগী দেখে ফিরতে থাকেন তখন মহান আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতাকে নিয়োগ করেন যাতে তারা এই ব্যক্তির জন্য ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করতে পারে। তারা তাকে বলে: আগামীকাল এই সময় পর্যন্ত আনন্দিত ও পবিত্র থাক এবং বেহেশত তোমার জন্য মধুর বা তৃপ্তিদায়ক হোক।

রোগীর দোয়া কবুল হয়: 
ইমাম বাকের (আ) বলেছেন,  কেউ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো রোগী দেখতে যায় তখন রোগী তার জন্য যে দোয়াই করেন সে দোয়াই মহান আল্লাহ কবুল করেন। 
হযরত মুসা বিন জাফর আল কাযিম (আ) তাঁর বাবার (আ) বরাত দিয়ে মহানবীর (সা) এ হাদিসটি বলেছেন:  কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বান্দাহদের একজনকে এভাবে তিরস্কার করে বলবেন: হে আমার বান্দাহ বা দাস! আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তখন কেন আমাকে দেখতে আসনি? ওই বান্দাহ বলবে: হে প্রতিপালক! আপনি তো রোগ-বেদনা-এসব থেকে পবিত্র এবং আপনি তো হচ্ছেন  সৃষ্টিকুলের প্রভু ও কখনও রোগ ও বেদনাগ্রস্ত হন না! মহান আল্লাহ তখন বলবেন: যখন তোমার মুমিন ভাই অসুস্থ ছিল তখন তুমি তাকে কেনো দেখতে যাওনি? আমার ইজ্জত ও শান-শওকত বা জালালের কসম! যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে তাহলে আমাকে তাঁর পাশেই বা কাছেই পেতে! এরপর আমি তোমার চাহিদাগুলো পূরণের দায়িত্ব নিতাম ও সেগুলো পূরণ করতাম। আর এটা আমার মুমিন বান্দাহ’র সম্মানের জন্যই করতাম। আমি রাহমান ও রাহিম। 
রোগী দেখতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করার পুরস্কার: হযরত আলী (আ) বলেছেন, ছয়টি গ্রুপের জন্য বেহেশতের গ্যারান্টি দিচ্ছি। এই গ্রুপগুলোর অন্যতম গ্রুপ হচ্ছে তারা রোগী দেখতে গিয়ে যারা মারা যায়।
রোগীর যত্ন নেয়ার পুরস্কার: মহানবী (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি পুরো এক দিন ও এক রাত রোগীর যত্ন করবে মহান আল্লাহ তাকে ইব্রাহীম খলিল (আ) নবীর সঙ্গে ওঠাবেন এবং ওই ব্যক্তি তীব্র ধাবমান বিদ্যুতের মত পুলসিরাত পার হয়ে যাবেন।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ থাকার ও রোগীদের যত্ন নেয়ার ও দেখতে যাওয়ার তৌফিক দিন- এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ করছি এ বিশেষ আলোচনার আজকের তথা দ্বিতীয় পর্ব। ভিন্ন কণ্ঠ: যারা সঙ্গ দিলেন তাদের জানাচ্ছি অনেক ধন্যবাদ। এ আলোচনার আগামী ও শেষ পর্ব শুনতেও ভুলবেন না । #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।