ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগ: বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
অশালীন, শিষ্টাচারবহির্ভূত ও নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ার জের ধরে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর মুরাদ হাসান অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ডা. মুরাদ হাসান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে পাঠান। বিকেল ৩টায় প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তার পক্ষে পদত্যাগপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে জমা দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
এর আগে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বক্তব্য সরকার ও দলকে বিব্রত করেছে। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী তাকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।
মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার পর ডা. মুরাদ হাসান এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ক্ষমা প্রার্থনা করে লিখেছেন, আমি যদি কোন ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিবো আজীবন।
এর আগে গত অক্টোবরে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান। সেসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদীদের আস্তানা হতে পারে না। যে কোনো মূল্যে ’৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। মুরাদ হাসানের সে বক্তব্য নিয়েও দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সম্প্রতি নারীবিদ্বেষী, অশ্লীল বক্তব্যের জন্য মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের দাবি তুলেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। তবে শুধু প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকেই নয়, মুরাদ হাসানকে দল থেকেও বহিষ্কারের দাবি উঠেছে দলের ভেতর থেকেও।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আজ জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে ডা. মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে ডা. মুরাদ হাসান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী বৈঠকে মুরাদ হাসানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
অপরদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী পদত্যাগকারী প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেছেন।
ডা. মুরাদ হাসান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শুয়োর কোরবানি দিয়ে আপনি কোনো সওয়াব পাবেন না। এ শুয়োরকে খোয়ারে ঢুকাতে হবে। নারী সমাজকে উদ্দেশ করে যে ধরনের কর্মকাণ্ড ফেসবুক এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে তার বিরুদ্ধে একটা আইসিটি মামলা দিয়ে একে জেলে দিতে হবে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ডা. মুরাদ হাসানের অসৌজন্যমূলক ও বিতর্কিত অডিও সরিয়ে ফেলার জন্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের মৌখিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ব্যাপারে ব্যাবস্থা নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)কে নির্দেশ দিয়েছেন।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/বাবুল আখতার/৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।