'বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে শুধু বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটই নয়, মিথেন গ্যাসও দায়ী'
প্রতি বছরই বাংলাদেশের বিভিন্ন বস্তিতে লাগাতার অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। গুলশানের কড়াইল বস্তিতে ছয় মাস অন্তর আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি মিরপুর, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক, মালিবাগ এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাসহ অন্যান্য বস্তিতে আগুনের খবর পাওয়া যায় প্রায়ই। সর্বশেষ গত সপ্তাহে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি বস্তিতে আগুনে ৫০টি ঘর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বস্তিতে এভাবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যায় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এর দায়ও নেয় না কেউ। অগ্নিকাণ্ডের এসব ঘটনায় গ্যাসের চুলা ও পাইপলাইনের লিকেজ, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটকে বেশি দায়ী করা হয়। তবে এই কারণ ছাড়াও মিথেন গ্যাসের দায়কে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মিথেন গ্যাসের উপস্থিতির কারণেই মূলত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আগুন লাগার সঙ্গে দ্রুত তা ছড়িয়ে মুহূর্তেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
নানা রকম জৈব পদার্থ পচে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা জলাভূমির গ্যাস নামেও পরিচিত। এই মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বড় ধরনের বিস্ফোরণ কিংবা অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ভবনে বিস্ফোরণ, এমনকি বস্তিতে পর্যায়ক্রমে যে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে তার পেছনে এই গ্যাস অন্যতম দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রকৌশলী ড. নাসির উদ্দীন খানের বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোনো স্থানে গৃহস্থালি বর্জ্য স্তূপ করার ৮ থেকে ১০ দিন পর সেখানে নানা রকম গ্যাস তৈরি হয়। এর মধ্যে ৯০ থেকে ৯৮ শতাংশই হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন। জলবায়ু তথা জনস্বার্থের জন্য মারাত্মক হুমকি এই মিথেন গ্যাস।
এ প্রসঙ্গে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমন্ডলীয় দূণন অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দেশের বেশির ভাগ বস্তিই গড়ে উঠেছে দীর্ঘদিনের স্তূপ হওয়া বর্জ্যরে ওপর। বস্তি তৈরির পরও সেখানে নতুন করে আরও বেশি বর্জ্য জমা হয়। ফলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। ময়লার স্তূপের ওপর যেকোনো স্থাপনা তৈরির পর মেঝের ছিদ্র কিংবা কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে জমে থাকা মিথেন গ্যাস ঘরের ভেতর বা বদ্ধ স্থানে জমা হতে থাকে।
এছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরের বহুতল ভবনের গ্যাসের পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে কিংবা স্যুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমেও ঘরের ভেতর গ্যাস জমা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই প্রাকৃতিক গ্যাসেও ৮৫ থেকে ৯৫ শতাংশই থাকে মিথেন। জমে থাকা এই গ্যাস কখনো বিস্ফোরণ হচ্ছে, কখনো স্ফুলিঙ্গ কিংবা সামান্য আগুনের উপস্থিতিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সৃষ্টি করছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।#
পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৩