সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন মঞ্জুর: বিভিন্ন মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সরকারি দপ্তর থেকে তথ্য চুরির অভিযোগে অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে আটক দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।আজ রোববার (২৩ মে) ঢাকা মহানগর হাকিম বাকি বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।তবে, জামিন পেতে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ হাজার টাকার মুচলেকা দিতে হয়েছে।একই সঙ্গে তিনি যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন- এ জন্য তার পাসপোর্ট জমাদেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। এসময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে হাসপাতালে না নিয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতপৌনে ১২টার দিকে তাঁর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। জামিনযোগ্য এ মামলায় পরদিন আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠায়।
সাংবাদিক রোজিনাকে সরকারি দপ্তরে হেনস্তা করা এবং বানোয়াট মামলায়কারাগারে প্ররনের প্রতিবাদে দেশব্যাপি সোচ্চার হন সাংবাদিক সমাজসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সমুহ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও তার গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান হয়েছে এবং মুক্তি দাবি করা হয়েছে। চারদিন পর আজ সে মামলায় রোজিনা ইসলামকে জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
প্রমাণিত হয়েছে আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীনঃ ওবায়দুল কাদের
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন পাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে আদালতসম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সরকার এতে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করেনি বলে জানিয়েছেনর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার (২৩ মে) সকালে জাতিসংঘ গ্লোবাল রোড সেফটি উইক অনলাইন লাইভ আলোচনাঅনুষ্ঠানে নিজ সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
শেখ হাসিনা সরকার সাংবাদিকবান্ধব সরকার উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের স্মরণ করিয়ে দেন, রোজিনা ইস্যুতে সাংবাদিকদের জন্য যারা মায়াকান্না করছে, সেই বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা করেছিল।
এটা ফরমায়েসী রায়ঃ বিএনপি
তবে, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের রায়কে ‘ফরমায়েসী’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। রোববার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা এখানে কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, জামিনযোগ্য মামলায় রাজনৈতিক নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করে চারদিন পর জামিন দেওয়া হল এই শর্তে যে, বিদেশে যেতে পারবে না এবং ৫ হাজার জামানত। আদালতের এ সিদ্ধান্তকে “অবশ্যই ফরমায়েসী রায়” বলে মনে করি। মির্জা ফখরুল বলেন, এখন বিচার ব্যবস্থা সরকার কি বলে না বলে তার উপরনির্ভর করে। সরকারের ইঙ্গিতে এখন বিচার ব্যবস্থা চলছে। সরকার পুরোপুরিভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করছে, এটা দলীয়করণ হয়ে গেছে। সেই কারণে আজকেএমন ফরমায়েসি রায় দেওয়া হচ্ছে।
সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চায় জাতীয় পার্টি
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, ‘শুধু জামিন দেওয়াই নয়, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলাও প্রত্যাহার করতে হবে।’ পাশাপাশি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন তৈরিরও দাবি জানান তিনি। আজ রোববার এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট সংবিধান, গণতন্ত্র ও তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে করা এই আইন এখন অপ্রয়োজনীয়। তাই অফিসিয়াল সিক্রেট আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা চলতে পারে না।’
আইনমন্ত্রীর ভাষ্য
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারে বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মামলা প্রত্যাহারের দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের নয় । যাঁরা মামলা করেছেন তাঁদের দায়িত্ব। আর প্রত্যাহার করতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, মামলা প্রত্যাহার বড় কথা না। তদন্ত করে যদি নির্দোষ হয় আর কেউ দোষী হয়, তাহলে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তের ওপর আস্থা রাখতে বলেন মন্ত্রী। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন এবং গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে কোনো খসড়া সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাঁর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সে বিষয়ে কথা বলবেন।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/বাবুল আখতার/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।