বিলের পক্ষে ২৬৯ ভোট, বিপক্ষে ১৯৮!
লোকসভায় ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল পেশ করল বিজেপি সরকার
বিরোধীদের প্রবল আপত্তির মধ্যে আজ (মঙ্গলবার) ভারতের সংসদে ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত দুটি বিল পেশ করা হয়েছে। সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিল দুটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন মেঘাওয়াল। বিল দুটি হল- সংবিধান (১২৯তম সংশোধনী) বিল এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আইন (সংশোধনী) বিল।
বিল পেশের জন্য প্রথমে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম’ এবং তার পরে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাভুটি হয়। এই প্রথম নতুন সংসদ ভবনে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম’ ব্যবহার করা হল। বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন সরকার পক্ষের ২৬৯ জন সংসদ সদস্য। বিপক্ষে ১৯৮ জন। ভোটাভুটির পরে এক ঘণ্টার জন্য মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন।
বিল পেশকালে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, আরও আলোচনার জন্য সরকার বিল দুটি যুগ্ম সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠাতে আগ্রহী। বিল দুটি জেপিসিতে পাঠানোর প্রস্তাব আইনমন্ত্রীকে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এই বিল আইনে পরিণত হলে লোকসভা ও বিধানসভার পাশাপাশি পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও একসঙ্গে করা যাবে। সরকারের যুক্তি, তেমন করা গেলে নির্বাচন ঘিরে বিপুল অর্থ ব্যয় যেমন হবে না, তেমনই সর্বস্তরে উন্নয়নমূলক কাজও ব্যাহত হবে না। নির্বাচন ঘোষণার পর আদর্শ আচরণবিধি অনুযায়ী সরকার নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নতুন উন্নয়নমূলক কাজেও হাত দিতে পারে না। সরকার মনে করে, এতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, বছরভর কোথাও না কোথাও ভোটের দরুন উন্নয়ন থমকে থাকে। ফলে প্রকল্প খরচ বেড়ে যায়।
এদিকে, বিরোধীরা একযোগে এই দুই বিলের বিরোধিতা করেন। তাঁদের বক্তব্য, এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোয় আঘাত হানছে ও সাংবিধানিক আদর্শের পরিপন্থী। তা ছাড়া প্রশ্ন উঠেছে বিল পাস হওয়া নিয়েও। সংবিধান সংশোধন বিল পাস করাতে গেলে দুই কক্ষে দুই–তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন, যা রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের নেই। তা যখন নেই, তখন কেন সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে জানান, এই বিল নির্বাচনী সংস্কারের অঙ্গ। এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোর কোনো ক্ষতি করবে না।
বিজেপির নতুন দুই বন্ধু দল অন্ধ্র প্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি ও মহারাষ্ট্রের শিবসেনা এই বিলে সম্মতি জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও বিরোধীদের ধারণা, বিজেপির শরিক নয় অথচ অতীতে নানাভাবে তাদের মদদ দেওয়া বিজু জনতা দল বা ওয়াইএসআর কংগ্রেসসহ অনেকেই এই বিলে সম্মতি দেবে না। বিরোধিতা হবে আঁচ করেই সরকার তাই আরও আলোচনার জন্য বিল দুটি জেপিসিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে সেই কমিটিতে শাসক দলের সদস্যরাই বেশি থাকবেন। ৯০ দিনের মধ্যে জেপিসিকে বিলসংক্রান্ত চূড়ান্ত রায় জানাতে হবে।
সংবিধান সংশোধন বিল পাস করাতে গেলে সংসদের দুই কক্ষে দুই–তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি ছাড়াও দেশের মোট রাজ্যের অর্ধেকের অনুমোদন প্রয়োজন। বিজেপি সেই সমর্থন জোগাড় করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে কিছুটা সংশয় এখনো অবশ্যই রয়েছে। তবু তারা এই বিল পাস করাতে উদ্যোগী রাজনৈতিক কারণে। নরেন্দ্র মোদি সরকার দেখাতে চায়, দেশের রাজনৈতিক স্থিরতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে কঠিন সংস্কারে তারা কুণ্ঠিত নয়।
অবশ্য বিরোধীদের দাবি, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী। মোদি সরকার এভাবে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা করছে।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৭