স্বেচ্ছাসেবক দিবস উপলক্ষে সর্বোচ্চ নেতার ভাষণ
নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর হাতের পুতুল: আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় দেশের কিছু বিপ্লব বিরোধী মানুষের নৈরাজ্য দেখে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের মনে রাখতে হবে এই নৈরাজ্য পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কয়েক দশকের ষড়যন্ত্রের সর্বশেষ অংশ মাত্র।
নানা কায়দায় তারা ইরানকে দুর্বল করতে না পেরে এবার মুষ্টিমেয় কিছু দাঙ্গাবাজকে লেলিয়ে দিয়েছে যাতে ভেতর থেকে ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে দুবৃল করা যায়। বাসিজ বা স্বেচ্ছাসেবক দিবস উপলক্ষে তিনি আজ (শনিবার) তেহরানে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবকের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, এসব নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীকে প্রধান শত্রু মনে করা যাবে না বরং প্রধান শত্রু সেই পশ্চিমা বিশ্বই রয়ে গেছে। এরা তাদের হাতের পুতুল মাত্র।
তিনি আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, মাকিনীরা কখনও আলোচনার মাধ্যমে ইরানকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়নি।আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় সফল হওয়ার একটিই উপায় আর তা হচ্ছে, তার কথা মুখ বন্ধ করে মেনে নেয়া। কিন্তু স্বাধীনতচেতা ইরানি জাতি কখনও আমেরিকা কাছে নতিস্বীকার করবে না এবং আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সমস্যাও সমাধান হওয়ার নয়। তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্লেষকরা কোনো রাখঢাক না রেখেই বলছেন, আমেরিকার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করে ফেললে ইরানের নৈরাজ্য বন্ধ হবে। কিন্তু সেটা কখনওই হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ১৯৮০ সালে গুপ্তচরবৃত্তির আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত মার্কিন দূতাবাস দখলের পর ওয়াশিংটন ইরানের বিরুদ্ধে হুমকি দিতে শুরু করে। মৌখিকভাবে হুমকি দেয়ার পাশাপাশি পারস্য উপসাগরে নৌবহর পাঠায় আমেরিকা। সাধারণভাবে এ ধরনের হুমকির পর প্রতিপক্ষ ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যায়। কিন্তু [ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা] ইমাম খোমেনী (রহ.) ওই হুমকি পাওয়ার পরপরই এক নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন করতে বলেন। এভাবে তিনি শত্রুর প্রতিটি হুমকিকে সুযোগে পরিণত করেন।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিলগ্নে মাতৃভূমির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বিগত কয়েক বছরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া এবং সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নৈরাজ্য থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার কাজে স্বেচ্ছাসেবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইরানের ওপর ইরাকের চাপিয়ে দেয়া পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিশেষ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ, এটি একটি গুরুত্বপূণ ও কৌশলগত অঞ্চল। বিশ্বের জ্বালানীর অন্যতম প্রধান উৎস এই অঞ্চল। এটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সংযোগস্থল। তাদের সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইহুদিবাদী ইসরাইল নামক জারজ রাষ্ট্র স্থাপন করা হয়। এটিকে পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য প্রতিষ্ঠা করে। এরপর তাদের দৃষ্টি পড়ে ইরানের দিকে। কারণ, খনিজ সম্পদের দিক দিয়ে ইরান সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং ভৌগোলিকভাবে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম সবদিকের সঙ্গে ইরানের সংযোগ রয়েছে। ইরানের সাবেক শাহ সরকারকে তারা তাদের তাবেদার শক্তিতে পরিণত করে।
তিনি বলেন, কিন্তু ইরানের ইসলামি বিপ্লব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর গালে কঠোর চপেটাঘাত করে। এ বিপ্লব পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে পশ্চিমাদের সমস্ত পরিকল্পনাকে বানচাল করে দেয়। ইসলামি বিপ্লব ইরানকে পাশ্চাত্যের ওপর নিভরশীল একটি দেশ থেকে একটি স্বাধীন দেশে পরিণত করে। এদেশের জনগণ আত্মসম্মান ফিরে পায়। এই বিপ্লবের চেতনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় আমরা নাকি বিপ্লব রপ্তানি করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি বলব, অন্যান্য বিপ্লব যেমন বলপ্রয়োগ বা কৌশল প্রয়োগ করে রপ্তানি করা হয় ইরানের ইসলামি বিপ্লবের তেমন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বরং এই বিপ্লবের মহান আদর্শের কারণে বহু দেশের বিপ্লবী জনতা এই বিপ্লবের চেতনা গ্রহণ করে।
ইরানের সবোচ্চ নেতা বলেন, এরপর তারা ইরাকের সাদ্দাম সরকারকে ইরানের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। কিন্তু ওই যুদ্ধে ইরাক পরাজিত হলে পশ্চিমারা উপলব্ধি করে যুদ্ধ করে ইরানকে পরাজিত করা যাবে না।
তিনি বলেন, এরপর তারা ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের প্রভাব ধ্বংস করার কাজে মনযোগ দেয়। কিন্তু বাস্তবে এসব দেশে ইরানের কাছে আমেরিকা পরাজিত হয়। আর এ কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করেন শহীদ লে. জেনারেল কাসেম সোলায়মানি। #
পার্সটুডে/এমএমআই/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।