সাইরাস সিলিন্ডার: বিশ্ব শান্তির জন্য ইরানের ঐতিহাসিক উপহার
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i154250-সাইরাস_সিলিন্ডার_বিশ্ব_শান্তির_জন্য_ইরানের_ঐতিহাসিক_উপহার
পার্সটুডে: ২৬ শতাব্দী আগে, পারস্যের শাসক 'সাইরাস দ্য গ্রেট' বা কুরুশ একটি মৃৎপাত্রের সিলিন্ডারে একটি ফরমান লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যা আজ 'বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ' হিসেবে স্বীকৃত।
(last modified 2025-11-21T11:37:45+00:00 )
নভেম্বর ২০, ২০২৫ ১৭:০৩ Asia/Dhaka
  • সাইরাস সিলিন্ডার
    সাইরাস সিলিন্ডার

পার্সটুডে: ২৬ শতাব্দী আগে, পারস্যের শাসক 'সাইরাস দ্য গ্রেট' বা কুরুশ একটি মৃৎপাত্রের সিলিন্ডারে একটি ফরমান লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যা আজ 'বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ' হিসেবে স্বীকৃত।

পার্সটুডে জানিয়েছে, পারস্যের হাখামানেশি সাম্রাজ্যের রাজা 'সাইরাস দ্য গ্রেট' একটি মৃৎপাত্রের সিলিন্ডারে লিখেছিলেন: "আমি সকল মানুষকে তাদের নিজ নিজ উপাসনার স্বাধীনতা দিয়েছি, আমি ধ্বংসস্তূপগুলো পুনর্নির্মাণ করেছি এবং অত্যাচারকে মেনে নিইনি..."। এটি একটি ঐতিহাসিক শিলালিপি, যাতে ধর্মীয় স্বাধীনতা, পুনর্নির্মাণ এবং ন্যায়-বিচারের কথা বলা হয়েছে। ইরান, তাজিকিস্তান এবং ইরাকের দুই দশকের যৌথ প্রচেষ্টার পর ২০২৫ সালের ৬ নভেম্বর, সমরকন্দে ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে এটি বিশ্ব-ঐতিহ্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।

এই শব্দগুলো ছিল প্রথম মানবাধিকার সনদের ভিত্তি, যা সাইরাস বা কুরুশ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু এই বৈশ্বিক ঐতিহ্যকে নিবন্ধনের পথ ছিল বিশ বছরের দীর্ঘ যাত্রা—যা ইরান, তাজিকিস্তান এবং ইরাকের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, ইতিহাসবিদ এবং কূটনীতিকদের নিরলস প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছিল। তারা অতীত ও বর্তমানকে এক প্রতীকী সেতুতে যুক্ত করেছিলেন।

অবশেষে, ২০২৫ সালের ৬ নভেম্বর,  জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) ৪৩তম সাধারণ অধিবেশনে 'সাইরাস দ্য গ্রেট সিলিন্ডার' বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ইউনেস্কো সদস্য দেশগুলোর শতভাগ সমর্থন লাভ করে।

সাইরাস সনদে কী বলা হয়েছে?

পাসারগাদ বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের সিনিয়র প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ফরহাদ জারে সাইরাসের শিলালিপির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলেছেন: সাইরাস এই শিলালিপির প্রথম থেকে বিশতম লাইনে প্রাচীন বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ব্যাবিলন সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং তারপর নিজের ও তার বংশের পরিচয় দিয়েছেন। বিশ নম্বর লাইন থেকে তিনি নিজের কর্ম ও ব্যাবিলন জয়ের বিবরণ দিয়ে লিখেছেন যে, তিনি রক্তপাত ছাড়াই ব্যাবিলন জয় করেছিলেন, বন্দিদের মুক্তি দিয়েছিলেন এবং বাইতুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সাইরাস সনদ-এর সর্বত্র দয়া, সহমর্মিতা ও ক্ষমার বার্তা বহন করে; তিনি তাঁর সৈন্যদের আদেশ দিয়েছিলেন যেন তারা জনসাধারণের প্রাণ, সম্পদ ও সম্মানের ওপর আঘাত না করে এবং এমনকি যদি সামরিক অভিযানের পথে কোন গাছ থাকে, তাহলে তা কাটারও অনুমতি দেননি।

বিশ্ব শান্তির জন্য ইরানের ইতিহাসের উপহার

পাসারগাদ বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাসিরি হাকিকাত বলেছেন: দুই হাজার ৫০০ বছরেরও বেশি আগে লেখা এই সনদটি প্রমাণ করে যে,  ইরানিরা ২৬ শতাব্দী আগেও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিত এবং এটি তাদের ঐতিহাসিক দলিলেও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

নাসিরি হাকিকাত আরও বলেছেন, বিশ্বের মানুষ এই প্রাচীন শিলালিপিকে উদ্ধৃত করে শান্তি, স্থিরতা এবং সহাবস্থানের ধারণা নিতে পারে, এটি একটি বার্তা যা ইরান থেকে সমগ্র বিশ্বে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার ঘোষণার লেখক কুরুশ বা সাইরাসের সমাধি পাসারগাদে আজ জাতিগুলোর মধ্যে সংলাপের একটি বিশ্ব কেন্দ্র, এবং ইরানীরা এই সমাধির ছায়ায় বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে শান্তি এবং সহিষ্ণুতার শিকড় ইরানের মাটিতে রয়েছে, যেখানে মানবীয় মর্যাদার প্রতি সম্মান হাজার হাজার বছর আগে বলা একটি ভাষা।

পাসারগাদে অবস্থিত প্রথম মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা কুরুশ বা সাইরাসের সমাধি আজ বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে সংলাপ ও বোঝাপড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

এই সমাধির ছায়ায় দাঁড়িয়ে ইরানিরা পুরো বিশ্বকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, শান্তি আর সহনশীলতার শেকড় গভীরভাবে ইরানের মাটিতে প্রোথিত। হাজার হাজার বছর আগেই এখানে মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের ভাষা বলা হয়েছিল—যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।#

পার্সটুডে/এমএআর/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।