ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন সফর শুরু: ইউরোপকে নিয়ে সন্দেহ জোরদার
আমেরিকা ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ এ ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন। পরমাণু সমঝোতার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি এখন বেইজিংএ অবস্থান করছেন। বেইজিং সফর শেষ করে তিনি মস্কো ও ব্রাসেলসে যাবেন বলে কথা রয়েছে।
রাশিয়া, চীন ও ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশ অর্থাৎ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের তিনটি দেশ পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রেখে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইউরোপীয়রা কতক্ষণ পর্যন্ত তাদের এ অবস্থানে টিকে থাকতে পারবে সেটাই প্রশ্ন। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং অনেক কিছুর ওপর পরমাণু সমঝোতায় ইউরোপের টিকে থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে। ইউরোপের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট এবং তাদের ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখা যায় না। এ কারণে পুরোপুরি নিশ্চয়তা আদায় করা ছাড়া আমেরিকার প্রতি আস্থা রাখার মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
দৈনিক স্পাইগেল এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে লিখেছে, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল পরমাণু সমঝোতা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে বিরোধে গিয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা করার বিষয়ে ইউরোপকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আমাদের যা শক্তি আছে তার চাইতে বেশি দেখানো উচিত হবে না কারণ ইউরোপের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।"
জার্মানির অর্থমন্ত্রীও চ্যান্সেলরের এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছেন, "ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় জার্মানির কোম্পানিগুলোকে সমর্থন দেয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই।" এ অবস্থায় পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে ফ্রান্স ও জার্মানির ওপর খুব একটা আস্থা রাখা যায় না। কিন্তু চীন ও রাশিয়ার অবস্থান স্পষ্ট। পরমাণু সমঝোতার ইস্যুটি বাদ দিয়েও বলা যায় এ দুই দেশ সবসময়ই আমেরিকার স্বেচ্ছাচারী আচরণের বিরোধিতা করে এসেছে।
বেইজিং ও মস্কো মনে করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পরমাণু সমঝোতার মাধ্যমেও ইরান প্রমাণ করেছে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যেকোনা সমস্যা সমাধানে আলোচনার ক্ষেত্রে ইরান তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। বেইজিং ও মস্কোর মতে, মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ইরানের পাশে থাকাটা খুবই জরুরি। কারণ তাহলে মার্কিন স্বেচ্ছাচারিতা ও একাধিপত্য মোকাবেলা করা যাবে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তাররোধ সংক্রান্ত এনপিটি চুক্তি শক্তিশালী করা, আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বের বহু সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখত। তিনি আরো বলেন, পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব সবার এবং এতে প্রত্যেকের স্বার্থ নিহিত রয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয়টি বাদ দিয়ে বলা যায়, মুক্ত অর্থনীতির স্বার্থে হলেও আমেরিকার একতরফা নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করা জরুরি। তেহরান চায় কেবল নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখার শর্তে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলবে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৩