শহীদ সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন কে ছিলেন?
(last modified Sun, 23 Feb 2025 13:20:14 GMT )
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ১৯:২০ Asia/Dhaka
  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে হিজবুল্লাহ নেতা শহীদ সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন।
    ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে হিজবুল্লাহ নেতা শহীদ সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন।

পার্সটুডে: সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন যিনি লেবাননে হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান ছিলেন এবং শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছিল গত বছরের ৩রা অক্টোবর বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন এবং শহীদ হন।

হিজবুল্লহর শহীদ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং সংগঠনটির রাজনৈতিক পরিষদের শহীদ চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনের মরদেহ আজ রোববার দক্ষিণ লেবাননে সমাহিত করা হবে। এই উপলক্ষে আমরা পার্সটুডেতে সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনের জীবনের বিভিন্ন দিকে নজর দেব।

শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর খালাত ভাই হাশেম সাফিউদ্দিন ১৯৬৪ সালে দক্ষিণ লেবাননের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০'র দশকে তিনি তার আত্মীয় সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে ধর্মীয় বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমে আসেন। ১৯৮৩ সালে তিনি লেবাননের শিয়াদের ইসলামি আইন পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ আলী আল-আমিনের কন্যাকে বিয়ে করেন। ১৯৯৪ সালে নাসরুল্লাহ হাশেম সাফিউদ্দিনকে হিজবুল্লাহর বৈরুত অঞ্চলের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। এরপর তিনি ১৯৯৫ সালে জিহাদ কাউন্সিলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন, যা হিজবুল্লাহর সামরিক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল। ১৯৯৮ সালে সাফিউদ্দিনকে নির্বাহী পরিষদের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

শহীদ সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন 

২০২৩ সালের মে মাসে লেবাননে তার হত্যার খবর প্রকাশিত হয় যা পরে অস্বীকার করা হয়। ২০২৪ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর লেবাননে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলার পর গণমাধ্যম সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনের নিহত হওয়ার খবর আবার প্রচার করে। রয়টার্সের মতে তিনি সে সময়েও হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ অক্টোবর সাফিউদ্দিন লেবাননের বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় শাহাদাত  হওয়ার  তার দীর্ঘদিনের লালিত তামান্না পূরণ করেন।

তাঁর শাহাদাতের কয়েক ঘন্টা আগে সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদীকে লিখেছিলেন: "আমার জীবনের আর খুব কমই বাকি আছে; তুমি কি চাও যে আমি তোমাকে না দেখেই চলে যাই?"

সাইয়্যেদ হাশিম সাফিউদ্দিনের শাহাদাতে সর্বোচ্চ নেতাসহ  ইরানি নেতৃবৃন্দের বার্তা

লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনের শাহাদাত উপলক্ষে বার্তা দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীসহ অন্যান্য ইরানি নেতৃবৃন্দ। সর্বোচ্চ নেতা তার বাণীতে বলেছিলেন, শহীদ সাফিউদ্দিন হিজবুল্লাহর শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের একজন। তিনি আজীবন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সহযোগী ও সহচর ছিলেন। শহীদ সাফিউদ্দিনের মতো নেতাদের পরিকল্পনা ও সাহসিকতায় হিজবুল্লাহ লেবাননকে বিপর্যয় ও খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল ইহুদিবাদী ইসরাইলের হুমকি নস্যাতের মাধ্যমে। ইহুদিবাদী ইসরাইলের অত্যাচারী ও নিষ্ঠুর সেনাবাহিনী কখনো কখনো বৈরুত পর্যন্ত সমস্ত কিছু পদদলিত করতো। শহীদ সাফিউদ্দিন এবং নাসরুল্লাহ ফ্রন্টের অন্য মুজাহিদদের আত্মত্যাগ লেবাননের অখণ্ডতা রক্ষা করেছে এবং আগ্রাসী ও অপরাধী ইহুদিবাদী ইসরাইলকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।

সর্বোচ্চ নেতার সৃঙ্গে কোলাকোলি করছেন শহীদ সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিন ও লেবাননের মজলুম জনগণের প্রতিরক্ষায় ও প্রতিরোধ ফ্রন্টকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে শহীদ সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনের নানা বীরত্ব ও সংগ্রামী দিকের কথা তুলে ধরে বলেছেন, নিঃসন্দেহে যতদিন মজলুম ফিলিস্তিনি ও লেবাননি জাতির বিরুদ্ধে জুলুম, অপরাধযজ্ঞ ও দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকবে আগ্রাসী ইহুদিবাদী ও এর সহযোগীদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ও জিহাদও জোরদার হতে থাকবে।  

ইরানের সংসদ স্পিকার মুহাম্মাদ বাকের কলিবফও হিজবুল্লাহ'র কার্য-নির্বাহী পরিষদের প্রধান সাইয়্যেদ হাশিম সাফিউদ্দিনের শাহাদাতে অভিনন্দন ও সমবেদনা জানিয়ে বলেছিলেন, জনাব সাফিউদ্দিন ছিলেন গাজা, ফিলিস্তিন ও লেবাননের প্রতি সহায়তা ও ইসলামের পবিত্রতার প্রতিরক্ষা এবং ইসলামী ঐক্যের প্রতীক। তিনি আরো বলেছিলেন, দখলদার ও হিংস্র পশু প্রকৃতির অধিকারী ইহুদিবাদীরা প্রতিরোধ যোদ্ধা ও মুজাহিদদের মোকাবেলায় ব্যর্থ ও অক্ষম হয়ে এবং প্রতিরোধ ফ্রন্টের শক্তিশালী কাঠামো বা সংগঠনের কোনো ক্ষতি করতে না পেরে প্রতিরক্ষাহীন জনগণের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে ও এবার এক পৈশাচিক অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে প্রতিরোধ ফ্রন্টের অমর নেতৃবৃন্দকে শহীদ করেছে।  

ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেইন মোহসেনি এজেয়িও এক বার্তায় বলেছিলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইল বিলুপ্ত হবার পথে রয়েছে এবং প্রতিরোধ অক্ষের নেতৃবৃন্দ ও কমান্ডারদের শাহাদাত ইহুদিবাদ-বিরোধী সংগ্রামে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। 

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সাইয়্যেদ হাশিম সাফিউদ্দিনের শাহাদাতের প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছিল, নিঃসন্দেহে প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের শাহাদাতের ফলে এই পথের সহযোগীদের ও বীর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দৃঢ় ইচ্ছা ও বিশ্বাসে এবং মুসলিম জাতিগুলোর ও এ অঞ্চলের মুক্তিকামীদের মধ্যে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও জুলুম আর বিরোধী লড়াইয়ে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না।#

পার্সটুডে/এমবিএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।