ইসরায়েলের নীরব আগ্রাসন; সীমানা পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক সমীকরণ পরিবর্তনের প্রচেষ্টা
-
• দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন
পার্সটুডে- দক্ষিণ লেবাননে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও, ইসরায়েল একই সাথে লেবানন ও সিরিয়া থেকে গাজা পর্যন্ত কয়েকটি ফ্রন্টে আগ্রাসন অব্যাহত রাখা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তারের পদক্ষেপ নিয়েছে, যা তাদের নীরব আগ্রাসনের প্রমাণ।
গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলের আগ্রাসী আচরণ ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায় তারা "আঞ্চলিক সমীকরণ পরিবর্তন" করার চেষ্টা করছে এবং এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অন্য পক্ষ থেকে গুলি চালানোর প্রয়োজন ছাড়াই, তারা লেবানন, সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে এবং এমনকি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে নতুন শর্ত আরোপ করছে। নিত্যদিনের আগ্রাসন, সীমান্ত এলাকায় প্রাচীর দেয়া, শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপর চাপ এবং দক্ষিণ সিরিয়ায় যেভাবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে তাতে বোঝা যায় ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত চাপের মুখেও নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে। পার্সটুডের এই সংবাদ প্যাকেজে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসী আচরণের কিছু ঘটনাবলী তুলে ধরা হল:
ব্লু লাইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং UNIFIL-এর মিশনকে দুর্বল করছে ইসরায়েল
লেবাননের সংবাদমাধ্যম "আল-নাশরাহ" জানিয়েছে যে ইসরায়েল শুধু যে প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে তাই নয় একইসাথে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ব্লু লাইন লঙ্ঘন করছে এবং কংক্রিটের দেয়াল তৈরি করে হাজার হাজার মিটার লেবাননের ভূখণ্ড দখল করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন UNIFIL বাহিনীর মতে, এই দেয়াল নির্মাণের অর্থ পৌঁছলে তেল আবিবের দেয়া একটি নতুন সীমানা টানা হবে। এছাড়াও, দক্ষিণ লেবাননে UNIFIL-এর একটি টহলদারিতে ইসরায়েলের মেরকাভা ট্যাঙ্কের সরাসরি আক্রমণ জাতিসংঘের জন্য গুরুতর বিপদ ঘণ্টা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা জানিয়েছে ইসরায়েলের আচরণ থেকে বোঝা যায় যে ইসরায়েল UNIFIL-কে "উপদ্রব" হিসেবে দেখে এবং জাতিসংঘের ১৭০১ প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাধা দিতে চায়।
বিপরীতভাবে, লেবাননের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন যে হিজবুল্লাহ গত ১১ মাসে একটিও গুলি চালায়নি বরং ইসরায়েলই কখনও তার প্রতিশ্রুতি মেনে চলেনি। লেবাননের পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি এই পরিস্থিতিকে "ইসরায়েলের আগ্রাসী স্বভাব" হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং লেবাননের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন।
বিশ্বে ইসরায়েলের আইনি অবস্থান ধ্বংসের পথে
ইসরায়েলের হারেৎজ সংবাদপত্র এক প্রতিবেদনে বলেছে যে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তিও ইসরায়েলি সরকারকে হেগের আইনি ব্যবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারবে না। নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং সাদি টিমান কারাগারে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশের পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে যে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থার পক্ষে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ মোকাবেলা করার ক্ষমতা বা ইচ্ছাশক্তি নেই। ইসরায়েলি আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে গাজা সম্পর্কে তেল আবিব কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া বক্তব্য এবং সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রতি তাদের জনসমক্ষে সমর্থন আন্তর্জাতিক আদালত কর্তৃক সরাসরি "গণহত্যার" অভিপ্রায়ের প্রমাণ হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছে। ইতিমধ্যে, তুরস্কসহ কিছু দেশ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং অন্যান্য দেশও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই এই ধরনের পরোয়ানা বাস্তবায়ন করছে।
সিরিয়ায় ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা; দক্ষিণাঞ্চলকে একীভূতকরণ
সিরিয়ার সূত্রগুলো কুনেইত্রার উপকণ্ঠে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নতুন চেকপয়েন্ট স্থাপন এবং সিরিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রামে সরকারের সামরিক টহলদারি প্রবেশের খবর দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো সিরিয়ার সাবেক আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে ইসরায়েল কর্তৃক পরিচালিত ধারাবাহিক আগ্রাসনের ধারাবাহিকতা। এরই মধ্যে দারা এবং কুনেইত্রার কিছু অংশ ধীরে ধীরে ইসরায়েলি দখলে চলে গেছে।
সঙ্কটের মানবিক দিক; ইসরায়েলি সৈন্যদের আঘাত থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থন
একই সময়ে, হিব্রু গণমাধ্যম জানিয়েছে যে হাজার হাজার ইসরায়েলি সৈন্য বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দের কারণে মস্তিষ্কের আঘাতে ভুগছে। সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে ৮০% ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী, ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের ঢেউও ছড়িয়ে পড়ছে; "কাতালোনিয়া" এর উদ্যোগে দাতব্য ফুটবল ম্যাচ আয়োজন থেকে শুরু করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদদের উয়েফা এবং ফিফায় ইসরায়েলের সদস্যপদ স্থগিত করার আহ্বান পর্যন্ত।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকে দেখা যাচ্ছে যে ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, আইনি এবং সামরিক সংকটে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও, সম্ভাব্য যুদ্ধের আগে লেবানন, সিরিয়া এবং গাজায় একতরফা পদক্ষেপের মাধ্যমে আঞ্চলিক সমীকরণ পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। কিন্তু মূল প্রশ্ন হল এই "নীরব যুদ্ধ" কতদিন চলবে? #
পার্সটুডে/এমআরএইচ/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন