তেহরানের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে রিয়াদ: জাতিসংঘে বললেন সৌদি রাজা
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i97736-তেহরানের_আস্থা_অর্জনের_চেষ্টা_করছে_রিয়াদ_জাতিসংঘে_বললেন_সৌদি_রাজা
সৌদি আরবের রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনলাইনে দেয়া ভাষণে খুবই ইতিবাচক ও নরম ভাষায় বলেছেন, রিয়াদ ইরানের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১ ১৮:৪৭ Asia/Dhaka
  • সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ
    সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ

সৌদি আরবের রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনলাইনে দেয়া ভাষণে খুবই ইতিবাচক ও নরম ভাষায় বলেছেন, রিয়াদ ইরানের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে।

সৌদি রাজা গত ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে দেশটির ক্ষমতায় আসেন। তিনি ও তার পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়ার পর এক বছরের কম সময়ের মধ্যে তিনটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি আরব ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে, সেপ্টেম্বরে হজের সময় মিনায় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় বহু হাজির প্রাণহানী ঘটে এবং পরের বছর জানুয়ারিতে প্রখ্যাত শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর বাকের আল নিমরকে শিরশ্ছেদ করা হয়। এই তিনটি ঘটনায় ইরানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় এবং ইরানের একদল জনতা তেহরানে সৌদি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে এবং উত্তেজনার এক পর্যায়ে রিয়াদ তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এই নিয়ে তিনবার অর্থাৎ ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের আগে এবং বিপ্লব পরবর্তীতে দুই বার তেহরান-রিয়াদ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ রিয়াদ তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর দু'দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তার উস্কানি এবং অন্যদিকে ইরান ও ইরান সমর্থক প্রতিরোধ শক্তিগুলোর অবস্থান জোরদার হওয়ায় সৌদি আরব ক্ষিপ্ত ও চিন্তিত হয়ে পড়ে যা কিনা তেহরানের সঙ্গে রিয়াদের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। কারণ তারা বুঝতে পারছে এ অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য ইরানের অনুকূলে চলে গেছে। পশ্চিম এশিয়ায় ইরান ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠায় সৌদি আরব এতটাই ক্ষিপ্ত ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে যে একদিকে তারা দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে মিলে ইরান বিরোধী তৎপরতা শুরু করে এবং অন্যদিকে ট্রাম্পকে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উস্কানি দিতে থাকে।

তবে গত ছয় বছরে  ইরানের ব্যাপারে সৌদি কর্মকর্তাদের কথাবার্তা  ও আচরণে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিছুদিন আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সরাসরি ঘোষণা করেছিলেন তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও নিরাপত্তাহীনতাকে ইরানের ভেতরেও ছড়িয়ে দেবেন। কিন্তু গত এপ্রিলে তিনি ইরান বিরোধী কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন ইরান হচ্ছে এ অঞ্চলে তাদের প্রতিবেশী দেশ এবং আমরা আশা করি দুদেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক স্থাপিত হবে। যুবরাজ সালমানের এই বক্তব্যের পাঁচ মাস পর সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজও জাতিসংঘ ভাষণে ইরানের ব্যাপারে অত্যন্ত নরম সুরে কথা বললেন। তিনিও তার ভাষণে বলেছেন, ইরান আমাদের প্রতিবেশী এবং আমরা আশা করি আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পারব।

ধারনা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন, বিগত বছরগুলোতে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা এবং এ অঞ্চলের রাজনীতিতে সৌদি আরব দুর্বল হয়ে পড়ায় অন্যদিকে ইরান ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠায় ইরানের ব্যাপারে সৌদি কর্মকর্তাদের নীতিতে পরিবর্তন এসেছে।

তবে ইসলামি ইরান সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এ বিষয়ে ইরান ও সৌদি কর্মকর্তাদের মধ্যে ইরাকে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। উত্তেজনা নিরসন ও সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দেশেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে সৌদি আরব এখনো ইয়েমেনে আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে এবং ইসরাইলের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এ অবস্থায় ইরান-সৌদি সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায় এখন দেখার বিষয়। # 

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৩